বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, ডিসেম্বরে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে- যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তথ্য মতে, ২০২৩ সালের শেষ মাসে আসা এই প্রবাসী আয় আগের বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার দেশে এসেছিল। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার প্রবাসী আয়ের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করে জানিয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই সময় প্রবাসীরা ১০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিলেন। প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর শেষে দেশে এসেছিল ১৯৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়, আগের বছরের একই মাসের চেয়ে যা ২১ শতাংশ বেশি।
আমরা এটাও উলেস্নখ করতে চাই, ২০২৩-এর প্রথম মাস জানুয়ারিতে প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়তে শুরু করলেও পরের মাস ফেব্রম্নয়ারিতে কমে গিয়েছিল। পরের মাসগুলোয়ও সেই ওঠানামা চলে। অন্যদিকে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে ফের ধাক্কা লাগে প্রবাসী আয়ে। জুলাইয়ে তা আয় কমে হয় ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। পরের মাস আগস্টে আগের বছরের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে দেশে আসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ১৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হয়। জানা যাচ্ছে যে, ডলারের বিনিময় হার এবং প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগে অক্টোবরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই মাসে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩০ শতাংশ। পরের মাস নভেম্বরে প্রবাসী আয় বাড়লেও তা আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে চার কোটি ৭৫ লাখ ডলার কম ছিল। ডিসেম্বরে ফের ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলো। যা সামগ্রিকভাবেই ইতিবাচক।
আমরা বলতে চাই, ডিসেম্বরে যখন প্রবাসীয় আয় বেড়েছে- তখন এটি আমলে নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি যেমন পর্যবেক্ষণ জরুরি, তেমনি করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে তার বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রবাসী আয় দেশের সার্বিক অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে অবদান রাখছে। ডিসেম্বর মাসে রেমিট্যান্সে যে ইতিবাচক খবর এলো, তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।
এটাও বলা দরকার, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামা বিষয়টি সামনে এসেছিল। সঙ্গত কারণেই প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টিকে সহজভাবে দেখারও যেমন সুযোগ নেই, তেমনি রেমিসট্যান্সের অগ্রগতি ধরে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপও গ্রহণ করা জরুরি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। এছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন প্রবাসী আয় বৃদ্ধির খবর আসছে তখন তা আমলে নিয়ে পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। মনে রাখা দরকার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।