মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাংলাদেশের সামনে সাত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে

  ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশের সামনে সাত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উদ্যোগ নিতে হবে

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে এলে তা মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি ও উদ্যোগ জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, নতুন বছরে বাংলাদেশের জন্য সাতটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা- যা সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- নির্বাচন ও সরকারের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা, জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ, ডলারের দাম, রিজার্ভ সংকট, নিরবচ্ছিন্ন বিদু্যৎ ও জ্বালানি সরবরাহ, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার- এ সাতটি চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো আলোচনায় আসছে তা আমলে নেওয়া এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে কতটা গ্র্রহণযোগ্যতা পাবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পর নির্বাচন প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও।

এছাড়া জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়টি উঠে এসেছে। বলা দরকার, গত বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার প্রায় সারা বছরই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পরিসংখ্যান বু্যরোর হিসাব অনুযায়ী আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, তা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭ শতাংশে। জুলাই-আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১২ শতাংশের ওপর। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, ডলারের দাম। বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার দাম বেড়ে যাওয়া গত বছর ব্যাপক প্রভাবিত করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের পহেলা জুন থেকে গত দেড় বছরে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। ডলারের এই বাড়তি দামের কারণে আমদানি এবং এর ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতর উৎপাদনও ব্যাহত হয়েছে। বেশি দামে পণ্য আমদানি করায় তা কেনার জন্য সাধারণ মানুষকেও গুণতে হয়েছে বেশি পরিমাণ টাকা।

অন্যদিকে, রিজার্ভ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, গত বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত জানুয়ারিতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.২২ বিলিয়ন ডলার- যা ডিসেম্বরে ২১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর কথা। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফের নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী, জুন মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার- যা নভেম্বরে ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত অর্থ, আইএমএফ'র এসডিআর খাতে থাকা অর্থ, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা অর্থ এবং আকুর বিল পরিশোধ বাবদ অর্থ হিসেবে নিলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমবে বলে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।

এছাড়া উলেস্নখ্য, গত বছরের গ্রীষ্মকালে বেশ কিছুদিন লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র, বিদু্যৎ সংকট হয়রানি করেছে সবাইকেই। আরেকটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা- তা হলো, ডেঙ্গু পরিস্থিতি। তথ্য মতে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃতু্যর সব অতীত রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৩ সালে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত ২৩ বছর ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন, আর শুধু ২০২৩ সালেই সেই সংখ্যাটা ছিল এক হাজার ৬৯৭ জন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তালই ছিল বলা চলে। তথ্য মতে, অক্টোবরের শেষ দিকে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতার পর টানা ৬ সপ্তাহ হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেনে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনায় অন্তত আটজন মারা গেছেন।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, দেশেকে এগিয়ে নিতে হলে যে কোনো ধরনের সংকট, চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতা যথাযথভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। এক্ষেত্রে যখন সাতটি চ্যালেঞ্জের বিষয় সামনে আসছে- তা আমলে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখবেন এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে