জঙ্গিবাদ বড় ধরনের বৈশ্বিক সংকট। এই উপমহাদেশের জন্যও বিষফোঁড়া। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে আবারও নব্য জেএমবি সংগঠিত হয়ে হামলার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটির আমির মাহাদী হাসান জন তুরস্কে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপর দেশে সংগঠনের নেতৃত্বে আসে মো. ইউসুফ ওরফে ইউসুফ হুজুর (৩৮)। দীর্ঘ নজরদারির পর অবশেষে সহযোগী মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে জহিরসহ (৪৩) ইউসুফকে গ্রেপ্তার করেছে সিটিটিসি। রাজধানীর ডেমরা এলাকায় গোপন বৈঠকের তথ্য পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় নব্য জেএমবির মুখপাত্র পত্রিকা নাবা, ১০টি ডেটোনেটর, বেশ কিছু ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। আর সবচেয়ে কালো অধ্যায় হলি আর্টিজানসহ অনেক হত্যাকান্ড ঘটনায় এই সংগঠনটি। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে আমরা নব্য জেএমবির সব নেটওয়ার্ক বিধ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু সংগঠনের পরবর্তী আমির মাহাদী হাসান জন বিদেশে বসে পুনরায় সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল।
এর আগে দেশের পাঁচ জেলায় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন 'আনসার আল ইসলামের' ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র?্যাব; যারা 'আল কায়েদা' মতাদর্শে জঙ্গি সংগঠনের কাজ করে আসছিল অনেক দিন ধরে। ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ছয়জনের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবাকে 'আনসার আল ইসলামের' আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান বলেছিল র?্যাব।
তারও আগে খুলনা মহানগরী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর খুলনা অঞ্চলের প্রধানসহ ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি ল্যাপটপ, ৬টি মোবাইল, ২টি পেনড্রাইভ, একটি এটিএম কার্ড এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন 'হিযবুত তাহরীর সংশ্লিষ্ট বইয়ের ১০টি প্রিন্ট কপি পাওয়া গেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে খুলনা অঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল। মূলত তারা প্রচলিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সংবিধান মানে না। এ লক্ষ্যে তারা সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী পর্যায়ে বিশেষত স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সমাজের মেধাবী মানুষের উগ্রবাদী আদর্শে প্রভাবিত করে জঙ্গি কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে শতভাগ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। বিভিন্ন সময়ে এটা আলোচনায় এসেছে, জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু জঙ্গি সদস্যদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে, আর গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়, জঙ্গিদের মূলোৎপাটন হয়নি। দেশকে অস্থিতিশীল করতে কিংবা যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে তৎপর রয়েছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন।
অনেকের ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যরা যে কোনো সময় হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের জোট বেঁধে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির তথ্যও পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আমরা মনে করি, সব সময় সতর্ক থাকতে হবে, যাতে জঙ্গিরা বড় ধরনের কোনো নাশকতার ঘটাতে না পারে। জঙ্গিবাদ দমনে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি।