মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া

রোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
  ২৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া

প্রতিনিয়ত প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির প্রতারক হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ- যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, আশাতীত মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করা হতো পোশাককর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মীসহ নিম্নআয়ের মানুষকে। কিন্তু মেয়াদ শেষে লভ্যাংশ তো দূরে থাক, আসল টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি তাদের। আর এভাবেই 'কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড' সমিতির নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর পলস্নবীতে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব।

আমরা বলতে চাই, যখন সমিতির নামে নিম্নআয়ের মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হতিয়ে নেওয়া হয়েছে, তখন তা কতটা অমানবিক এবং ঘৃণ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। জানা গেছে, বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতের্ যাব-৪ এর একটি দল মিরপুরে নান্নু সুপার মার্কেটে অভিযান চালায়। প্রতিষ্ঠানটির অফিস থেকে জব্দ করা হয় নগদ চার লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাবের বই, চেক, ডিপোজিট বই, সিল, ডিপিএসের বই ও পাসপোর্টসহ আরও বেশ কিছু জিনিস জব্দ করা হয়। আমরা মনে করি, এই ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। একইসঙ্গে মনে রাখা দরকার, যারা মানুষকে ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিতে মরিয়া তাদের রুখতে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

আমলে নেওয়া দরকার,র্ যাব জানিয়েছে, এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ে কর্মী ও সদস্য রয়েছে। তারা মিরপুরে বিভিন্ন বস্তিতে নিম্নআয়ের মানুষকে টার্গেট করে। প্রতিষ্ঠানটিতে কেউ যদি মাসে ১ হাজার টাকা করে একটি ডিপিএস করে, তাহলে বছরে ১২ হাজার টাকা, আর পাঁচ বছরের ৬০ হাজার টাকা জমার কথা বলা হতো। মেয়াদ শেষে তাকে লোভ দেখানো হতো ৯০ হাজার টাকার। টার্গেট সংগ্রহকারী ব্যক্তিকে প্রথম এক বছর প্রতিমাসে ২০০ টাকা ও পরবর্তী তিন বছর প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে লভ্যাংশের লোভ দেখানো হতো। আবার কোম্পানির কোনো সদস্য যদি নতুন কোনো সদস্যকে এক লাখ টাকার এফডিআর করাতে পারে তাহলে তাকে মাসে ১ হাজার টাকা, আর এফডিআরকারীকে মাসে ২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হতো। মূলত এসব কর্মকান্ডে প্রলুব্ধ হয়ে নিম্নআয়ের মানুষ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন বলেও জানা গেছে।

আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে এই ধরনের ঘটনাগুলো আমলে নিতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এরকম ঘটনা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। মিথ্যা প্রলোভনসহ নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করে যখন অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তখন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা কতটা ভয়ানক হতে পারে তা আমলে নেওয়া জরুরি। যখন প্রতারণা বা জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটছে, তখন আইন মোতাবেক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার। মনে রাখতে হবে, অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে আরো বেশি অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। বিভিন্ন সময়েই নানা ধরনের প্রতারক চক্রর বিষয় আলোচনায় এসেছে- যারা প্রতারণার অর্থ দিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন এবং নানাভাবে মানুষকে ঠকান। এছাড়া ভয়ংকর বস্ন্যাকমেইলিং চক্র গড়ে তোলার বিষয়টিও এর আগে জানা গেছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারের ঘটনাটিসহ, সামগ্রিকভাবে প্রতারণামূলক সব ধরনের ঘটনা আমলে নিতে হবে এবং যারা এই ধরনের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এর আগেও নানা সময়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। মানুষের সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায় করেছে অপরাধী চক্র। সঙ্গত কারণেই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্টরা সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে