করোনার ভ্যাকসিন উদ্যোগ ও এর সফলতা

ইতোমধ্যে যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের আবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ারও সময় শুরু হবে আট সপ্তাহ পর থেকে। দেশে টিকার কোনো সংকট নেই এবং হবেও না। পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং প্রচুর টিকা পাইপলাইনে রয়েছে। কারণ যারাই টিকা নিতে গিয়েছেন তারা সবাই স্বীকার করছেন যে, টিকা প্রদানের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর ও সিস্টেমেটিক। সরকার যে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করছে।

প্রকাশ | ১১ মার্চ ২০২১, ০০:০০

ড. মো. হুমায়ুন কবীর
সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাসের আক্রমণে টালমাটাল সেই সময়ে প্রতিষেধক হিসেবে একটি ভ্যাকসিন যে কত প্রত্যাশিত ছিল সেটি আর কাউকে বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। শুধু আমাদের বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বই তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছিল একটি ভ্যাকসিনের জন্য। ঠিক এমনি সময়ে বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন প্রাপ্তির কয়েকটি দেশের তালিকায় স্থান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। আর হঠাৎ করেই যে এ তালিকায় স্থান পেয়ে গিয়েছে তা নয়। সেজন্য অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয়েছে। এ কাঠখড় পুড়িয়েছেন বাংলাদেশের সদাশয় সরকার। যে সরকারের প্রধান হলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা। কারণ তিনি অর্থের চেয়ে জনস্বাস্থ্য ও মানুষের জীবনকে বেশি মূল্য দিয়ে থাকেন সব সময়। তারই অংশ হিসেবে বিশ্বে করোনার ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশও এর গর্বিত অংশীদার হতে পেরেছে। সে জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসেই বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন প্রথম চালান বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিশ্রমকে সার্থক করতে ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষকে আগ্রহী করে তোলার জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ ভারত প্রাথমিকভাবে ২০ লাখ ভ্যাকসিন উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। পরে একটি চালানের মাধ্যমে ৫০ লাখ ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসে ভারত থেকে। ভারতের বিখ্যাত সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মূলায় এ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করেছে। এবার আসি ভ্যাকসিন নেওয়া না নেওয়া নিয়ে দোলাচলে থাকার বিষয়ে। আমরা জানি বাংলাদেশ সব সময়ই একটি গুজবের দেশ। যে কোনো সময় যে কোনো বিষয় নিয়ে অদ্ভুত অদ্ভুত সব গুজব চলতে থাকে। যেমন- এবারেও ভ্যাকসিন নিয়ে গুজবের শেষ নেই। বাংলাদেশে কোনো করোনা নেই, সঠিক তথ্য কারো কাছে নেই- যা আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। আবার ভারতবিরোধীরা বলছে, সরকার ভারতের কাছে নতজানু, সেখানকার ভ্যাকসিন কেরানীগঞ্জের সাদা পানি, ভারত আমাদের সত্যিকারের ভ্যাকসিন দেয়নি, এ ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মানুষ মারা যাচ্ছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মানুষ আবোল তাবোল বকছে, পাগল হয়ে যাচ্ছে, টিকা নেওয়ার পরও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, বাংলাদেশে টিকার টেম্পারেচার কন্ট্রোল করা যাবে না- ইত্যাদি আরো কত যে কি গুজব তা বলে শেষ করা যাবে না। তারপর প্রশ্ন এলো আগে সরকারপ্রধান, সরকারের মন্ত্রী এমপিরা ভ্যাকসিন নিক তারপর সাধারণ মানুষ নেবে। অথচ সরকার এ করোনাকে মোকাবিলা করার জন্য কত কি করছে সেটি সবার কাছেই আজ দৃশ্যমান। আমাদের বাঙালিদের একটি বদভ্যাস হলো সব কিছুতেই দোষ ধরার প্রবণতা। কোনো কিছুই যেন স্বাভাবিক ও সার্বিক দেশের কল্যাণের জন্য জাতীয় স্বার্থেও আমরা এক হতে চাই না। সেজন্য যে সুযোগ বিশ্বের অনেক সক্ষম দেশ পায়নি তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথম সারিতে রয়েছে। সেটিকে যেন আমরা সফলতার চোখে দেখতে পাচ্ছি না। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে সেটি যেমন রয়েছে, সৃষ্টিকর্তার বিশেষ রহমতের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সেটিও আমরা স্বীকার করতে চাই না। আমরা দেখেছি, যারা এ টিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় মুখর রয়েছেন তারাই এখন টিকা নিতে শুরু করেছেন। আর সেটাই তো হওয়া স্বাভাবিক। কারণ করোনার টিকা নিয়ে তো অপরাজনীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। দেশে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা তো বিদেশ থেকে আনার বিষয়টি এবারই প্রথম নয়। অনেক রোগের নানা গুরুত্বপূর্ণ ঔষধসামগ্রীসহ নানা ধরনের টিকা বিদেশ থেকে অহরহ আসছে। সেগুলো নিয়ে তো কোনো কথা নেই। তাহলে কেন কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে এত কথা? আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করছি না! এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ মার্চ, ২০২১ তারিখে কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন। তার কয়েকদিন আগে টিকা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানাও। মন্ত্রী, এমপিসহ নানা সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গও টিকা নিচ্ছেন। গতকাল মহামান্য রাষ্ট্রপতি টিকা নিয়েছেন। কাজেই টিকা নিয়ে আর বিভ্রান্তি থাকাটা যুক্তিসঙ্গত ও কাম্য নয়। ইতোমধ্যে যারা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের আবার দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ারও সময় শুরু হবে আট সপ্তাহ পর থেকে। দেশে টিকার কোনো সংকট নেই এবং হবেও না। পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে এবং প্রচুর টিকা পাইপলাইনে রয়েছে। কারণ যারাই টিকা নিতে গিয়েছেন তারা সবাই স্বীকার করছেন যে, টিকা প্রদানের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ, সুন্দর ও সিস্টেমেটিক। সরকার যে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে এ কাজটি সম্পন্ন করছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসার মাধ্যমে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছেন। ড. মো. হুমায়ুন কবীর : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শনফযঁসধুঁহ০৮@মসধরষ.পড়স