শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

যথাযথ পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা। গত তিন মাসের বেশি ধরে দেশে এ অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভোজ্যতেলের দাম গত ৯ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। খুচরা পর্যায়ে সর্বাধিক ১১৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। একদিনেই দাম বেড়েছে লিটার প্রতি ৭ থেকে ৮ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় এ সময়ে দেশেও সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে। সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর এই পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল হলেই কেবল দেশের বাজার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোতে সয়াবিনের মজুত কমে যাওয়ার কারণেই মৌসুমের শেষ দিকে এসে পণ্যটির দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টদের ধারণা। আর ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াকেন্দ্রিক পাম তেলের দাম বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার কারণে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় সয়াবিনের মজুত কমে যাওয়া ও খরায় নতুন আবাদ বিলম্বিত হওয়ার কারণেও দাম বাড়ছে। ব্রাজিল কিছুটা চড়া দামে পণ্য দিলেও আর্জেন্টিনা আপাতত রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এসব কারণে বাজার বেশ অস্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের শেষ দিকে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি টন ৭৯৯ ডলারে (এফওবি) পৌঁছে ছিল। নতুন বছরে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। চলতি বছরের মার্চের দিকে দাম নেমে আসে ৫৭৮ ডলারে। বছরের বাকি সময় সমান্য ওঠানামার মধ্য দিয়ে চলতে থাকায় বাংলাদেশের বাজার ছিল স্থিতিশীল। গত তিন মাসে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রতি মেট্রিক টনে আড়াই থেকে ৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেখা যায়, জাহাজিকরণের সময় সয়াবিন তেলের দাম প্রতি মেট্রিক টন ৭৬০ ডলারের মধ্যে থাকলে পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি দাম ৯০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরাও তাই মনে করি। কেবল কি ভোজ্য তেল? চাল, ডাল, মাছ মাংসের বাজারও অস্থির। শীতের শাকসবজি বাজারে আসায় দাম আগে থেকে কমেছে।

আমরা মনে করি, দেশের অসৎ ও অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে নানা সময়ে নানা অজুহাতে পণ্যেরে দাম বাড়ে। ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হলে চলবে না। তাদের কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এরা রমজান মানে না, করোনাভাইরাস কালেও জনগণের স্বার্থের দিকে নজর দেয় না। এরা বাজারসন্ত্রাসী। কীভাবে অসৎ উপায় অবলম্বন করে দ্রম্নত ধনী হওয়া যায় সেটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। তাদের অতি লোভী মানসিকতার কারণেই দেশের সাধারণ জনগণ তাদের কাছে জিম্মি। অবাক ব্যাপার যে, বাজারে নিত্যপণ্যের কোনো ধরনের সরবরাহ সংকট নেই, তারপরেও হুহু করে দাম বাড়ছে।

বাজার নিয়ে অতীতে অনেক পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি। বিক্রেতাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এটা সত্যিই হতাশাজনক চিত্র। সরকারের উচিত এই দুর্যোগকালে নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। মনে রাখতে হবে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। সংক্রমণ ও মৃতু্য দুটোই বেড়েছে। সামনে সময় আরো কঠিন হতে পারে এই কথা মাথায় রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রম্নত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে