বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার হামলার আশঙ্কা

কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ২৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ব্যাংকিং খাত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের কারণে অনেক কিছুই সহজ হয়েছে। নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। কিন্তু একই সঙ্গে এমন বিষয়ও এড়ানোর সুযোগ নেই যে, সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত কারণে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কাও বিদ্যমান। আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাংকিং খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যদি সাইবার হামলার আশঙ্কা থাকে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সংঘবদ্ধ হ্যাকার গ্রম্নপ ফের বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও সুইফট নেটওয়ার্কে হ্যাকিং করতে পারে। নতুন করে এ সাইবার হামলার আশঙ্কায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের ব্যাংকগুলোতে পাঠিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়াভিত্তিক হ্যাকার গ্রম্নপ 'বিগল বয়েজ' ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। ওই গ্রম্নপটি আবারও এ অপকৌশল কাজে লাগাতে পারে। ফলে এ সতর্কতা জারির পর ব্যাংকগুলো অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা ও এটিএম বুথে নজরদারি বাড়িয়েছে। রাতে এটিএম বুথ বন্ধ রাখার পদক্ষেপও নিয়েছে কোনো কোনো ব্যাংক। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে এমন বিষয়ও আলোচনায় আসছে যে, এটিএম বুথ বন্ধ রাখায় গভীর রাতে জরুরি প্রয়োজনে বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে নতুন বিপত্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য গভীর রাতে দ্রম্নত বুথ থেকে টাকা তুলতে না পেরে অনেকে চরম বিপাকে পড়েছেন। ফলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্তে যে বিপত্তি দেখা দিয়েছে তা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই আমরা মনে করি। কেননা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাত ১১টার পর বুথ থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখার বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। এ কারণে তাদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের খুদে বার্তা পাঠানো উচিত ছিল বলেও তাদের দাবির বিষয় আলোচনায় আসছে। আমরা বলতে চাই, সাইবার হামলার বিষয়টিকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, গ্রাহকের যেন ভোগান্তি সৃষ্টি না হয়। বুথ থেকে টাকা উত্তোলন বা যে কোনো সেবা বন্ধ থাকলে সেটা গ্রাহককে জানাতে হবে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতে (হ্যাকিং) উত্তর কোরিয়ার একটি চক্র জড়িত ছিল বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল। এ চক্রটি ২০১৪ সাল থেকে সক্রিয় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ই-মেইলে চাকরির আবেদনের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্কে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সব মেইলে যুক্ত ছিল জীবনবৃত্তান্ত নামের একটি জিপ ফাইল। এ ফাইল ছিল পুরোপুরি ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম। তথ্য মতে, চক্রটি ম্যালওয়্যারের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপরই ২০১৬ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৬৮০ কোটি টাকা) চুরি হয়। যদিও রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছে বাংলাদেশ। তবে এতে শুধু ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থাকে আসামি করা হয়েছে। আর টাকা ফেরতের আশাও ক্ষীণ হয়ে আসছে এমনটি জানা যাচ্ছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যখন সংঘবদ্ধ হ্যাকার গ্রম্নপ ফের বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও সুইফট নেটওয়ার্কে হ্যাকিং করতে পারে এমন আশঙ্কার বিষয় সামনে আসছে, তখন বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোসহ সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। আর প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই জালিয়াতির মাধ্যমেও টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। যা ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ফলে সার্বিকভাবে এ বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে