শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নসিমন উল্টে নিহত ৯ জন

সড়ক দুর্ঘটনা কি অপ্রতিরোধ্য?
নতুনধারা
  ২১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

একদিকে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। অন্যদিকে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও সড়ক দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য থেমে নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ধান বোঝাই নসিমন উল্টে নয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ছয়জন। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার দিকে উপজেলার দাইপুখুরিয়া ইউনিয়নের বারিক বাজার-সোনাপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই কৃষি শ্রমিক। ধান কেটে ফেরার সময় বাড়ি থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তারা।

আমরা বলতে চাই, কখনো গাড়ি উল্টে, কখনো মুখোমুখি সংঘর্ষ, আবার কখনো বা অতিরিক্ত গতিসহ নানা কারণে একের পর এক সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং বাড়ছে লাশের সংখ্যা। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এর ভয়াবহতা আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ধান বোঝাই নসিমনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় এবং সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস বলছে- গাড়িটিতে অতিরিক্ত ধান বোঝাই ছিল, যে কারণে সরু রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি চালক।

আমরা বলতে চাই, যখন খাদে পড়ে নসিমনটি উল্টে ধানের বস্তার নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই আটজন মারা যান এবং এ ঘটনায় আহত সাতজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেকজনের মৃতু্য হয়; তখন এমন ঘটনাকে সামনে রেখে এবং প্রতিনিয়ত যেভাবে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে এগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এমনটিও জানা গেছে, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় একপাশ ভেঙে গিয়েছিল। সেখানে চাকা পড়তেই গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি চালক। ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা বলতে চাই, রাস্তাঘাট সংস্কার থেকে শুরু করে দুর্ঘটনা রোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত রাখার বিকল্প থাকতে পারে না।

মনে রাখা দরকার, সড়ক দুর্ঘটনায় নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ যেমন প্রতিনিয়ত চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে, তেমনি অনেক সম্ভাবনার মৃতু্য হচ্ছে অকালেই। যখন সড়কে একের পর এক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বিভিন্ন সময়েই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে নানা ধরনের বিষয় চিহ্নিত হয়েছে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা; বিপজ্জনক অভারটেকিং; রাস্তাঘাটের ত্রম্নটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে ড্রাইভিং; রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং ছোট যানবাহন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সর্বাত্মক উদ্যোগ জরুরি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করা অপরিহার্য। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। ফলে এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে এবং দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কেননা পরিবহণ বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সড়ক-মহাসড়কের ত্রম্নটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ চালক, মানুষের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দুর্বলতাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একের পর এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা কেন ঘটছে এবং এর জন্য দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। একের পর এক সড়কে মৃতু্যর বিভীষিকা এমন, যেন সড়ক পথ একটা মৃতু্যর ফাঁদ! সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, দুর্ঘটনার কারণগুলো আমলে নেওয়া এবং সেই মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে