বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকাসক্ত

চাকরি হারাল পুলিশ
নতুনধারা
  ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

মাদকের ভয়াবহ বিস্তার দেশের সবাইকেই উদ্বিগ্ন করছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। এ থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-(১৯৯০ সালের ২০ নং আইন) প্রণীত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ওই আইন-১৯৯০ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি প্রণয়ন করা হয়। এরপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। উন্নতি হয়নি দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়েও। অবাক ব্যাপার যে, পুলিশও মাদকাসক্তর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি গেল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৯ সদস্যের। এরই মধ্যে চাকরিবিধি অনুযায়ী সব ধরনের তদন্ত শেষ করে বরখাস্তের পর তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরও আট পুলিশ সদস্য সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া শিগগির ৫৯ পুলিশ সদস্যের চাকরি যাচ্ছে। একযোগে মাদকের ঘটনায় এত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।

পুলিশ মাদক চক্র থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসুক এটা সবার প্রত্যাশা। পুলিশের যারা মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। কারণ এটা পুলিশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন।

উলেস্নখ্য, এখন পর্যন্ত ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার ৬৮ পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্ত হওয়া সদস্যরা প্রায় নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মাদক কারবারেও জড়িয়ে গিয়েছিলেন। মাদক সংশ্লিষ্টতা শনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্যের মধ্যে এসআই সাতজন, সার্জেন্ট একজন, এএসআই পাঁচজন, নায়েক পাঁচজন ও কনস্টেবল ৫০ জন। পুলিশ সদস্য হয়েও তারা ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল বা অন্যান্য মাদক সেবনে যুক্ত ছিলেন, এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা।

দেশে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতিবছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় গ্রহণ করছে। বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তর কারণে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন।

বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাসনাবাদ, টাকি, বসিরহাট, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, বনগাঁ, পেট্রাপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রাণাঘাট, অমৃতবাজার, বিরামপুর, করিমপুর, নদিয়া, মালদহ, বালুরঘাট, আওরঙ্গবাদ, নিমতিতাসহ সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় সব এলাকা দিয়ে ১৫টি পয়েন্টে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও দিনাজপুর এলাকায় মাদক ঢুকছে। আর ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বাংলাদেশ ঘেঁষা এলাকাগুলোর চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায়। বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরামের চারটি পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকছে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিলস্না ও ফেনীতে। এছাড়াও ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে নওগাঁয় ফেনসিডিল পাচারের নতুন রুটের সন্ধান পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে মাত্র ২৭১ কিলোমিটারের সীমান্তের সবচেয়ে সক্রিয় মাদক রুটগুলো গোটা দেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ঢুকছে কোটি কোটি ইয়াবা। বেশির ভাগ ইয়াবা তৈরি হয় মিয়ানমার-চীন সীমান্তের শান এবং কাচিন প্রদেশে। মাদকপাচার, বেচাকেনার ক্ষেত্রে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের অনেক রাঘববোয়াল জড়িত। সরকারের পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে পুলিশসহ দেশের যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে