মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারনেট সেবার মান বাড়াতে হবে

দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজির দামে টুজি গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।
ওসমান গনি
  ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সারাবিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তথ্যপ্রযুক্তির আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছে দেশের মানুষ। কিন্তু এ তথ্যপ্রযুক্তির সেবাগুলোর মধ্যে একটি প্রধান ও অন্যতম সেবা হচ্ছে ইন্টারনেট পরিসেবা। যে সেবার মান নিয়ে বাংলাদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাতে দেশের মানুষ এ বিশ্বায়নের যুগে তথ্যপ্রযুক্তির ইন্টারনেট পরিসেবা ব্যবহার করে তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখনো মানুষ ইন্টারনেট পরিসেবার মান শতভাগ ভোগ করতে পারছে না।

তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়নের সূত্রে বাংলাদেশ এখন ইন্টারনেট সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ করেছে। চলমান করোনাকালে বিশ্ব বাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিসেবা এখন একটি বিকল্পহীন মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনা মহামারির লকডাউন, শাটডাউনেও ঘরে বসে জরুরি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনসহ নৈমিত্তিক সবকিছুই এখন ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় ইন্টারনেট পরিসেবার মান, স্বচ্ছতা, গতিশীলতা ও নিরাপত্তা এখন গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, ইন্টারনেটের প্রতি মানুষের নির্ভরতা যতই বাড়ছে, এ খাতের সেবার মান, অস্বচ্ছতা এবং বিড়ম্বনা নিয়ে মানুষের অভিযোগ ও সংক্ষোভ ততই বেড়ে চলেছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি ও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে মোবাইল ফোন অপারেটর ও আইএসপি কোম্পানিগুলো চটকদার বিজ্ঞাপনের ঢেলে সাজালেও আসলে মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। বিশ্বে ইতিমধ্যেই পঞ্চম প্রজন্মের দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়ে উঠলেও আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। আরও দুই বছর আগেই দেশে থ্রিজি থেকে ফোরজি ইন্টারনেট পরিসেবার নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেট খরচ আদায় করা হলেও এখনো দেশের অধিকাংশ এলাকায় টুজি পরিসেবাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।

দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজির দামে টুজি গতির ইন্টারনেট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালাতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে।

আমরা গর্ব করে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্পের কথা বলছি বটে, কোটি কোটি মানুষ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত হলেও এ খাতে সেবার মানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়েও নিচে। বিশ্ব যখন ফাইভজির অভিজ্ঞতা লাভ করছে, সেখানে আমাদের দেশের ইন্টারনেট প্রোভাইডার ও মোবাইল ফোন অপারেটররা থ্রিজি মানের সেবাও দিতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের অভিযোগ ও ভোগান্তির সমাধান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার যেন কেউ নেই। ফোরজি পরিসেবার মূল্যে ইন্টারনেটের থ্রিজির গতিও পাচ্ছে না গ্রাহকরা। ব্রডব্যান্ড মানে ইন্টারনেটের প্রশ্বস্ত মহাসড়ক। আরও ৪ বছর আগেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ এক মেগাবাইট থেকে কমপক্ষে ৫ এমবিপিএস করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বিশ্ব বাস্তবতার নিরিখে তা ছিল সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। তখনো দেশে থ্রিজি ইন্টারনেট চালু হয়নি। তবে সরকারের সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন কথিত ফোরজির যুগে এসেও ব্রডব্যান্ড গ্রাহকরা গতি পাচ্ছেন তিন এমবিপিএস।

করোনাকালে সামাজিক-অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখতে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কোটি কোটি মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নে বড় ধরনের অগ্রগতির দ্বারপ্রান্তে উপনীত। ব্যাংকিং, শপিং, শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক যোগাযোগের বিকল্প ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ইন্টারনেট পরিসেবা। এ সময় এর শ্লথ গতি সব ধরনের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অথচ গতি ও সেবার মান না বাড়লেও নানা অজুহাতে ব্যান্ডউইথ মূল্য বাড়াচ্ছে সার্ভিস প্রোভাইডাররা।

এ খাতে সরকার শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবার গতি ও মান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও মোবাইল ফোন ও সার্ভিস প্রোভাইডারদের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সেবার মান ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই।

ওসমান গনি : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে