শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রম্নত সংস্কার করা হোক ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো

সারাদেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চার হাজার ৪০৪টি সেতু। এর মধ্যে বেইলি সেতু ৮৫৬টি। আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বেইলি সেতুর সংখ্যাই বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা শুধু জনগুরুত্বপূর্ণই নয়, বিষয়টির সঙ্গে মানুষের জানমালের সম্পর্ক রয়েছে। সওজের কাছে আমাদের আহ্বান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যেন আর ঝুলিয়ে রাখা না হয়।
অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ
  ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

সারাদেশে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। সড়কের এসব সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কিছু সেতু মেরামত করে সাময়িক যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলো নিয়মিত তদারকির বাইরে থাকে। সেতুগুলোর মেয়াদ পূর্তির আগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ বাড়তি ওজনের যানবাহন চলাচল। এ ব্যাপারে ট্রাফিক বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। ঢাকা শহরে রাস্তা পারাপারে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণ করা হয়েছিল পথচারীসেতু। তারও কোনো কোনোটি এখন ঝুঁকিতে পড়েছে। ধরা পড়েছে নির্মাণ ত্রম্নটি। কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। তিস্তা রেলসেতু যার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে ২১ বছর। কিন্তু সেতুর ওপর দিয়ে রেল চলাচল বন্ধ হয়নি। এই সেতু দিয়ে এখনো চরম ঝুঁকি নিয়ে আগের মতো চলাচল করছে রেলগাড়ি।

পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের রেল যোগাযোগের জন্য তিস্তা রেলসেতু নির্মিত হয়েছিল ১৮৯৯ সালে। বর্তমানে এ সেতুর বয়স ১২১ বছর। নির্মাণের সময় সেতুটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। এর একাংশ রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা এবং অপর অংশ পড়েছে লালমনিরহাট সদর উপজেলায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সেতুটিতে মিত্রবাহিনীর বোমায় একটি গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৯৭২ সালে সেতুটি পুনরায় চালু করা হয়। ১৯৭৮ সালে ট্রেনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ শুরু করা হয়। তখন থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন ও যাত্রীবাহী বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এভাবে ক্রমেই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে থাকে। সড়ক সেতু চালু হওয়ার পর মেয়াদোত্তীর্ণ রেলসেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দ্রম্নত সংস্কার করতে হবে। অতিরিক্ত ওজনের যান চলাচল রোধে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে।

এমনিতেই প্রতি বছর আমাদের দেশে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শত শত মানুষ হতাহত হন। এটা যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে উদাসীন। যত বড় দুর্ঘটনাই হোক না কেন, তাদের কর্মতৎপরতায় গা-ছাড়া ভাব লক্ষণীয়। এ জন্য সাধারণ মানুষ ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। এ ক্ষুব্ধতার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় গত বছর ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কিশোর শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সারাদেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। নিরাপদ সড়ক চাই, দাবিতে ওই বিক্ষোভ-প্রতিবাদে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার শিশু-কিশোর থেকে সাধারণ মানুষ, যা ছিল সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে নজিরবিহীন।

\হদেশের সড়ক যোগাযোগের এমন অবস্থায় সওজের অধীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা প্রণয়নের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। তবে উদ্যোগটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এক বছর ধরে ঝুলে থাকা সত্যিই দুঃখজনক। ঢাকার পোস্তগোলা সেতু চলতি বছরের জুনে সদরঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনায় উদ্ধারকাজে অংশ নিতে আসা একটি জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপর থেকে সেতুটি দিয়ে সীমিত পরিসরে যানবাহন চলছে। এখনো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথে থাকা সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ। বছর তিনেক আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম অংশ চার লেনে হয়েছে। নতুন করে নির্মিত হওয়ায় এ অংশে একটিও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু নেই। তবে মহাসড়কটির চট্টগ্রাম-টেকনাফ অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর সংখ্যা ১৭টি। ওই তালিকায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাতামুহুরী সেতুও রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুটি জাপানের অর্থায়নে পুননির্মাণ করা হচ্ছে। যার কাজ ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা। তাছাড়া ঢাকা-সিলেট-তামাবিল জাতীয় মহাসড়কও চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ওই মহাসড়কটিতে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ও কালভার্টের সংখ্যা ৫১টি। একইভাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৪০টি, জয়দেবপুর-জামালপুর মহাসড়কে ২০টি, ঢাকা-রংপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কে ১০৭টি, সিরাজগঞ্জ-রাজশাহী মহাসড়কে ৪টি, রাজবাড়ী-খুলনা মহাসড়কে ৪৮ ও ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে ৫৫টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। দেশের প্রধান ৮টি জাতীয় মহাসড়কের এ চিত্র। বাকি জাতীয় মহাসড়ক, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কে বিদ্যমান সেতুগুলোর অবস্থা আরো নাজুক।

সারাদেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চার হাজার ৪০৪টি সেতু। এর মধ্যে বেইলি সেতু ৮৫৬টি। আর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বেইলি সেতুর সংখ্যাই বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা করা শুধু জনগুরুত্বপূর্ণই নয়, বিষয়টির সঙ্গে মানুষের জানমালের সম্পর্ক রয়েছে। সওজের কাছে আমাদের আহ্বান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যেন আর ঝুলিয়ে রাখা না হয়।

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল' ইয়ার্স ফোরাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে