শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১২ দিনে এক বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক
নতুনধারা
  ১৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবেই ইতিবাচক। কেননা, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির অর্থই হলো দেশের অর্থনীতির জন্য তা আশাব্যঞ্জক। একইসঙ্গে এটাও বলা দরকার, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, চলতি মাসের ১২ দিনেই প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, এই রেমিট্যান্স যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ এত অল্পসময়ের মধ্যে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স অতীতে আর কখনো আসেনি।

আমরা মনে করি, যখন করোনাভাইরাস মহামারির চলমান সংকটের মধ্যেও প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে তখন এর ইতিবাচক দিক আমলে নিয়ে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে সামগ্রিক উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে।

উলেস্নখ্য, সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, দেশের ইতিহাসে এক মাসের মাত্র ১২ দিনে এর আগে কখনো এত বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। এছাড়া বলা দরকার, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে জুলাই থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ৯ দশমিক ৮৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬ দশমিক ৮৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমরা বলতে চাই, যখন জানা যাচ্ছে যে, প্রবাসী আয়ের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত থাকার জন্য সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে, তখন এই বিষয়টি ইতিবাচক। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রবাসী আয়ের অগ্রগতি ধরে রাখতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জারি রাখা। যখন কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে সারাবিশ্ব, তখন প্রবাসী আয়ের এই অগ্রগতি দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে চালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন, এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রেমিট্যান্সের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের সব সময় তৎপর থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এমন বিষয়ও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এসেছে যে, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় দ্বিগুণ করা যায়। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তির বিষয়টি আমলে নিয়েও এ ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি যত বেশি বাড়বে, ততই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে। আর এর ফলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তেমনিভাবে কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও তা হবে আশাব্যঞ্জক। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার ও নীতিনির্ধারকরা জনশক্তি রপ্তানি এবং শ্রমবাজার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সময়েই নানা ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আবার সরকারের ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখছে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমনটিও জানা যাচ্ছে। ফলে আমরা মনে করি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত রাখতে কার্যকর উদ্যোগ রাখার পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।

সর্বোপরি বলতে চাই, করোনাভাইরাস মহামারি চললেও গতি হারায়নি রেমিট্যান্স। এই বিষয়টি যেমন ইতিবাচক, তেমনি ১২ দিনেই প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা এটি অত্যন্ত সন্তোষজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। আমরা চাই, অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। পাশাপাশি যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে