শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার কারণ অজানা নয়

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিরুদ্ধবাদীরা হাসিনা সরকারের সাফল্যকে সহ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিকভাবে যে সব দল ব্যর্থ, তারা মরণ-কামড় দিতে চাচ্ছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টাও করছে তলে তলে। হয়তো তারা আরও বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তারা দেশকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল ধারায়। তাদের এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা সফল হতে দেওয়া যাবে না। সরকারকে কঠোর হাতে এটা দমন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ছদ্মবেশে সরকারি দলে দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে। ঢুকে পড়েছে দেশবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল বহু লোক। এসব বর্ণচোরা কেবল দলের জন্যই ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর দেশের জন্যও।
সালাম সালেহ উদদীন
  ১৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলার মধ্যেই রাজধানীর ৭ স্থানে ৯টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে রাজধানীর শাহবাগ, মতিঝিল, নয়াবাজার, ভাটারা, শাহজাহানপুর, প্রেস ক্লাব সংলগ্ন সচিবালয় মোড় ও গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সব ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে বাসগুলোতে আগুন লাগিয়ে দ্রম্নত পালিয়ে যায়। যে সব বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তাতে তিনজন থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রী ছিলেন। আচমকা অশান্ত পরিবেশ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। মুহূর্তেই ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করে। অনেকের প্রশ্ন, তা হলে কী দেশে আবার আগুন সন্ত্রাস ফিরে এলো? ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধকে কেন্দ্র করে এমনই আগুন সন্ত্রাস দেখেছিল দেশের মানুষ। সে সময় কয়েকশ মানুষ আগুনে পুড়ে হতাহত হয়েছিল। আগুন সন্ত্রাসের কারণে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই ধরনের নাশকতা একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যাশিত নয়। আগুন সন্ত্রাসের ঘটনাগুলোর পর ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দল যথারীতি পরস্পরকে দোষারোপ করে নানা ধরনের কথা বলছে। এক দল আরেক দলকে আক্রমণও করছে। তবে হঠাৎ এই আগুন সন্ত্রাসের কারণ কিন্তু অজানা নয়।

মনে রাখতে হবে টানা ১১ বছরের বেশি সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে, এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। তারা এ সরকারের পতন ঘটাতে চাচ্ছে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভব নয় বলে চোরাগুপ্তা পথ অবলম্বন করতে চাচ্ছে। দেশকে করতে চাচ্ছে অস্থিতিশীল।

শেখ হাসিনা দীর্ঘসময় রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, এগিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতার পথে। নিখাদ দেশপ্রেম, দূরদর্শিতা, দৃঢ়চেতা মানসিকতা ও মানবিক গুণাবলি তাকে আসীন করেছে বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় দিন বদলের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার সুনিপুণ কারিগর শেখ হাসিনা। তিনিই বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল।

বিশ্বে তিনিই একমাত্র সরকারপ্রধান যিনি করোনাকালেও জীবন ও জীবিকাকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি যখন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য জরুরি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ৫ কোটিরও বেশি লোককে রেশনের আওতায় এনে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের ব্যবস্থা, আরো ১ কোটি পরিবারকে ত্রাণ দেয়া হয় (যার ফলে আরো ৫ কোটি লোক ত্রাণ সুবিধা ভোগ করে), মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ ২৫০০ টাকা এককালীন সহায়তা, নন-এমপিওভুক্ত ৮১ হাজার শিক্ষক, ২৫ হাজার কর্মচারী, ৪৬০০০ গ্রামপুলিশ, মসজিদের ইমাম, খতিব, গার্মেন্টশ্রমিক, দুস্থ সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষসহ সমাজের পিছিয়ে থাকা সব মানুষকেই সহায়তা প্রদান করা হয়। যতই দুর্যোগ আসুক একটি মানুষকেও যাতে না খেয়ে মরতে না হয়, সে বিষয়ে তিনি শুরু থেকে সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

যে কোনো মহামারির পর খাদ্য সংকট দেখা দেয়, আসে দুর্ভিক্ষ। শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। যখন লকডাউনের কারণে ধান কাটতে শ্রমিক সংকট দেখা দিল, তখন দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেন কৃষকের ধান ঘরে তুলে দিতে। অন্যদিকে লকডাউনের মধ্যে ধান কাটা শ্রমিকদের পৌঁছে দিতে প্রশাসনকেও নির্দেশ দিলেন। সরকারিভাবে ধান চাল ক্রয় করে মজুত করা হয়। খালি বা পরিত্যক্ত জায়গায় কৃষি আবাদের নির্দেশ দেন। কৃষির উৎপাদন বাড়াতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন। যার কারণে কৃষি খাতে করোনার তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। স্বাভাবিকভাবে চলছে কৃষি খাতের যাবতীয় কার্যক্রম। প্রধান প্রধান খাদ্য শস্য, মৎস্য, পোল্টি শিল্প, গবাদিপশুসহ এ জাতীয় খাতে উৎপাদন ও বণ্টনে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি।

বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান গ্রামীণ অর্থনীতি। শেখ হাসিনা আধুনিক কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে এক সময়ের দারিদ্র্যপীড়িত দেশকে শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই করেননি, বাংলাদেশ খাদ্য শস্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করেছেন। গত এক দশকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, প্রযুক্তি, ক্ষুধা-দারিদ্র্য, শিশু-মাতৃ-মৃতু্য, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষকে সাহায্য করে এক সময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি খেতাব পাওয়া অবহেলিত দেশ বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। দুর্যোগ, মহামারি, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সন্ত্রাস দমনে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রেও হাসিনা সরকার সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যা এতসব বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে শেখ হাসিনা নিয়েছেন বহুমুখী সাহসী পদক্ষেপ।

বর্তমান বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে বর্তমান পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বে প্রভাবশালী নারী প্রধানমন্ত্রী, অনুকরণীয় অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে। কূটনৈতিকভাবেও বর্তমান সরকারের সাফল্য শুধু বাংলাদেশের মানুষের নয়, বিশ্ববাসীরও দৃষ্টি কেড়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী ১শ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ফোর্বস ম্যাগজিন। এই তালিকার শীর্ষ একশ নারীর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। তালিকার ২৯তম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে দীর্ঘকালীন সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সাল থেকে টানা প্রায় ৩৮ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এরপর থেকেই শক্ত হাতে দলকে নিয়ন্ত্রণ করছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করেছে নেদারল্যান্ডের নামকরা ডিপেস্নাম্যাট ম্যাগাজিন। সাময়িকীটি তাদের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন শিরোনাম করেছে 'শেখ হাসিনা: মাদার অব হিউম্যানিটি'। প্রচ্ছদ জুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে শেখ হাসিনার ছবি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি এই শিরোপা পেয়েছেন। এটা মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত। এসব কারণে তার

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিরুদ্ধবাদীরা হাসিনা সরকারের সাফল্যকে সহ্য করতে পারছে না। রাজনৈতিকভাবে যে সব দল ব্যর্থ, তারা মরণ-কামড় দিতে চাচ্ছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টাও করছে তলে তলে। হয়তো তারা আরও বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তারা দেশকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে দক্ষিণপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল ধারায়। তাদের এই ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা সফল হতে দেওয়া যাবে না। সরকারকে কঠোর হাতে এটা দমন করতে হবে। মনে রাখতে হবে ছদ্মবেশে সরকারি দলে দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে। ঢুকে পড়েছে দেশবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল বহু লোক। এসব বর্ণচোরা কেবল দলের জন্যই ক্ষতিকর নয়, ক্ষতিকর দেশের জন্যও।

সালাম সালেহ উদদীন : কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে