মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নদী রক্ষায় মহাপরিকল্পনা

সফল বাস্তবায়ন জরুরি
নতুনধারা
  ১৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ ও নাব্য বাড়াতে নেওয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে জড়িত সংশ্লিষ্ট সব পক্ষগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে একাধিক কমিটি করবে সরকার। সচিবালয়ে রোববার ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির জন্য গঠিত মাস্টার পস্ন্যান প্রণয়ন কমিটির সভা শেষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অনুমোদিত মাস্টার পস্ন্যানের অংশ হিসেবে যে সব অবৈধ দখল আছে ইতিমধ্যে আমাদের নৌ মন্ত্রণালয় দখলমুক্ত করেছে। উচ্ছেদকৃত স্থানগুলো সংরক্ষণ এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা যেন দ্রম্নততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেন। বুড়িগঙ্গার নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য যমুনা নদীতে যে জায়গায় ড্রেজিং করা দরকার তা করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সলিড বর্জ্য দূষণ থেকে রক্ষার জন্য বর্জ্য থেকে উত্তরে বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তবে বৃত্তাকার নৌপথ বাস্তবায়ন নিয়ে ১৩টি ব্রিজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেগুলো নৌপথে বাধার সৃষ্টি করছে সেগুলোর ব্যাপারে দ্রম্নত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শহরের অভ্যন্তরে যে সব খাল রয়েছে সেগুলো সংস্কার ও ওয়াকওয়ে তৈরি করে সম্ভাব্য যত সুযোগ আছে তা কাজে লাগানোর জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে এর সফল বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।

আশার কথা. বর্তমান সরকার দেশের নদ-নদীগুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাস্টার পস্ন্যানের আওতায় ১৭৮টি নদী খনন ও পুনরুদ্ধার করে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ চলাচলের উপযোগী করার কাজ শুরু করেছে। এ প্রকল্প ২০২০-২১ সালে শুরু হয়ে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

প্রথমাবস্থায় ঢাকার চার পাশের নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা নদী খনন ও দূষণমুক্ত করা হবে। তা ছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চট্টগ্রাম থেকে আশুগঞ্জ হয়ে বরিশাল পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার খনন কাজ আগামী বছরে শুরু হবে। এ সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ঝিনাই, ঘাঘট, বংশী ও নাগদা নদী খনন ও বন্যা ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া ভারত, বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে দুই দেশের নৌ প্রটোকলভুক্ত ৪৭০ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়েছে। এর আওতায় কালনি ও কুশিয়ারা নদীর আশুগঞ্জ, জাকিগঞ্জ নৌপথের ২৮৫ কিলোমিটার এবং যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ-দৈখাওয়ার ১৮৫ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে।

দেশে নদ-নদী দখল ও দূষণের চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দীর্ঘদিন ধরে এদিকে খেয়াল না দেওয়ায় দেশের ২৩০টি নদ-নদী আজ মৃতপ্রায়। এ সব নদ-নদী, প্রায় ১০ হাজার প্রভাবশালী ভূমিদসু্য দখলবাজরা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে আসছে। তা ছাড়া নদীগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, মিল-কলকারখানার বর্জ্য, নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা শহর, নগরের মানুষের ব্যবহারের দূষিত নোংরা পানি, শহর বাজারের (মাছ, মাংস বাজারের নোংরা বর্জ্য) ড্রেনে দীর্ঘদিন জমে থাকা দূষিত বর্জ্য সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে নদীর সঙ্গে সংযোগ রাখার কারণে সাংঘাতিকভাবে নদীদূষণ হচ্ছে। মৃত প্রায় এ সব নদ-নদীগুলো দেখলে মনে হয় এ যেন বর্জ্য রাখার ভাগাড়। নদীদূষণ ও দখল এখন নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এটা রোধ করতে না পারলে আমাদের রক্ষা নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে