শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জবির আবাসন সংকটের সমাধান কবে হবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের 'উন্নয়ন ফি' বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ভর্তির সময় বিরাট অঙ্কের টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে সমস্যা কোথায়?
সাধন সরকার
  ১৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রায় ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো আবাসন সমস্যা। ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর পুরান ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি (কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা হল উদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের মাধ্যমে আবাসন সংকটের দাবি জানিয়ে আসছে।

উলেস্নখ্য, জবির পুরাতন ১২টি হল থাকলেও নানা জটিলতায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন শুধু আবাসন সংকট সমাধানের বিভিন্ন রকম আশ্বাস দিয়ে গেছেন। মূলত প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে পা রাখলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় স্থানান্তর, সম্প্রসারণ ও আবাসন সমস্যার সমাধানে ঢাকার অদূরে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নে প্রায় ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছেন। কেরানীগঞ্জে আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত প্রজেক্টও চলমান রয়েছে! কিন্তু কেন জানি সংশয় কাটছে না! ১৫তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সবচেয়ে খুশির খবর হলো, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০ অক্টোবর জবির একমাত্র ছাত্রী হল 'বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল' উদ্বোধন করা হয়। ১৬তলা বিশিষ্ট এ হলে প্রায় ১ হাজার নারী শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যত দ্রম্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর আবাসন সংকটের সমাধান করা যাবে ততই শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেদখলে থাকা আবাসিক হলগুলো উদ্ধারের দাবিতে সম্প্রতি আবারও সরব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যার ফলশ্রম্নতিতে অনলাইনে প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে শুরু করে হল উদ্ধারে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন পালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বুড়িগঙ্গার তীরে পাটুয়াটুলীর ওয়াইজ ঘাট এলাকায় বেদখলে থাকা 'তিব্বত হল' উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি আশার আলো সঞ্চার করেছে। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি নিয়ে কর্র্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অজুহাতের সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় মেস ভাড়া করে যে কত কষ্টের মধ্যে থাকতে হচ্ছে তা শুধু ভুক্তভোগী তথা শিক্ষার্থীরাই ভালো জানেন। ক্যাম্পাসের আশপাশে ঠাঁই না পেয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ঢাকা থেকে অনেক দূরে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হলো শিক্ষার্থীরা। আর তাদেরই যদি মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ফিরবে কীভাবে? এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে শিক্ষার্থীদের কষ্ট সবাই বোঝে, কিন্তু বুঝতে চায় না কেবল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সর্বোপরি লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। সম্ভবত এমন কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে শিক্ষার্থীরা হলে থাকার সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাহলে জবির শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে কেন ? শিক্ষার্থীদের অবস্থা গৃহহীন একটা পরিবারের মতো হয়ে গেছে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন ?

বিশ্ববিদ্যালয়ের 'উন্নয়ন ফি' বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ভর্তির সময় বিরাট অঙ্কের টাকা নেওয়া হচ্ছে। তাহলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে সমস্যা কোথায় ?

১৯ হাজার শিক্ষার্থীর অভিভাবক হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী পারে না সবকিছুর ওপরে স্থান দিয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে? সত্যি বলতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব শিক্ষার্থীর আবাসন সংকটের সমাধান করা সময়ের ব্যাপার মাত্র। যাইহোক, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কষ্টের কথা বিবেচনা করে যত দ্রম্নত সম্ভব নতুন হল নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা হোক।

সাধন সরকার : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে