শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

'কাজের মানুষ' কামরুজ্জামান

নতুনধারা
  ১৬ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

দিনটা ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দ্বিতীয় দিন শনিবার। বেলা ৫টার দিকে নিজ কার্যালয়ে কাজ করছিলেন তিনি। এ সময় দূর থেকে ডাক দিয়ে কাছে গিয়ে দেখা গেল কম্পিউটারের বাটন টিপে একটি তদন্ত প্রতিবেদন লিখছেন। জিজ্ঞাসা করতেই জানালেন, বাড়তি কাজ, তাই গতকাল আর আজ করে শেষ করছি। এসব কাজ ছুটির দিনে না করলে দাপ্তরিক কাজে ঝামেলা হয়। ঘটনাটি গত ৩১ অক্টোবর যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পলস্নী উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এর মধ্যে এসে হাজির হন তার সহকারী কর্মকর্তা শহিদুলস্নাহ লিমন। তিনি জানান, স্যার তো বন্ধের দিন হোক আর বৃষ্টির দিন হোক কার্যালয়ে আসবেই। সকালে আসে আর বিকালে যায়। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম, তিনি হলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা পলস্নী উন্নয়ন কর্মকর্তা বি এম কামরুজ্জামান। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে বি এম কামরুজ্জামান এ কার্যালয়ের দায়িত্বে আসেন। যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে তিনি দেখিয়েছেন ন্যায়নীতি আর নিষ্ঠার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জনগণের কাজ করে চলা এ কর্মকর্তা দাপ্তরিক কাজে এনেছেন বেশকিছু পরিবর্তন। যা সারাদেশের মধ্যে অনুকরণীয় হয়েছে। তিনি এ বছর শুদ্ধাচার পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ২০১৮ সালে তার কার্যালয়ের দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পলস্নী কর্মসংস্থান সহায়ক প্রকল্প (ইরেসপো) দেশসেরা হয়েছিল। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের নিমিত্তে কার্যালয়ের প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কম্পিউটারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। উপজেলা প্রশিক্ষণের ইউনিটের সংস্কার, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, ঋণ প্রদানের সময় মহিলা সদস্যদের ডায়াবেটিস, বস্নাডপেসার এবং ওজন মাপার ব্যবস্থা করাসহ নানা অফিসিয়াল উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি যোগদানের পর এ উপজেলায় ৩৩ জন মহিলা উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। সদস্যদের জন্য তার গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বিআরডিবি'র আওতাভুক্ত প্রায় ৫,০০০ সদস্যকে নতুন ব্যাংক হিসাবের আওতায় আনা। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মহিলা সদস্য রয়েছেন। অফিসে আসতে হবে না বিধায় মহিলা সদস্যরা তার বাড়ির কাছে অগ্রণী বা কৃষি ব্যাংকের যে কোনো শাখা হতে ঋণের অর্থ তুলতে পারবেন। ব্যাংক হিসাব হওয়ায় সমিতির অনুমোদনকৃত অর্থ অফিসে নিয়ে আসার প্রয়োজন নেই, বিধায় ঝুঁকি নেই। ইচ্ছামতো নিজের হিসাবে সঞ্চয় করতে পারায় সদস্যদের মধ্যে সঞ্চয়ী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। অফিসে আসার প্রয়োজনীয়তাও নেই। ব্যাংকিংয়ের কারণে একজনের ঋণ অন্যজন গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে ব্যাংক হিসাব থাকায় তাদের স্বামী-সন্তান এবং আপন জনদের বিদেশ থেকে তাদের নিজ ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠাতে পারছেন। অফিসে না আসায় কোভিড-১৯ এর মতো মহামারি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে না। এসব কর্মকান্ডের ফলে সরকারের ঘরে ঘরে সরকারি সেবা পৌঁছানোর যে অঙ্গীকার তা সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) যশোরের ডিডি তপন কুমার মন্ডল জানান, কামরুজ্জামান একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ কর্মকর্তা। তার প্রচেষ্টায় ঝিকরগাছা বিআরডিবি অফিসে বিপস্নব ঘটেছে। কামরুজ্জামান তার পেশাকে শুধু চাকরি হিসেবে নেয়নি, একজন সুনাগরিক হিসেবেও তার কর্তব্য পালন করছেন। সে উপজেলা পর্যায় শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান জানান, কামরুজ্জামান শুধু একজন উপজেলা পলস্নী উন্নয়ন কর্মকর্তায় সীমাবদ্ধ নয়, সে সরকারি সব ধরনের কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, কামরুজ্জামান নীতিবান কর্মকর্তা। তিনি তার দপ্তরের পাশাপাশি যে কোনো কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে করে থাকেন। বিএম কামরুজ্জামান যায়যায়দিনকে জানান, চাকরি হিসেবে নয়, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করি। দেশ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে এবং বাংলাদেশ পলস্নী উন্নয়ন বোর্ডের সুনামের জন্য চেষ্টা করি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতা টেকসই কাজ করে মানুষের কাছে ভালোবাসাও পেয়েছি।

এম আর মাসুদ

ঝিকরগাছা, যশোর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে