বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা

রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
নতুনধারা
  ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। কিন্তু এ পরিস্থিতির ভেতরেও থেমে নেই দুর্ঘটনা ও দুর্ঘটনায় মৃতু্য। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ে যে তথ্য সামনে এলো তা ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ১ হাজার ১১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৪১৭ জন। নিহতদের মধ্যে ৭২৪ জনের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছর। তাদের মধ্য ৩৭ জন শিক্ষক এবং ৩০৮ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ১২৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

আমরা বলতে চাই, প্রতিনিয়ত পত্রপত্রিকার খবরাখবর পর্যবেক্ষণ করলে সড়কের দুর্ঘটনাসংক্রান্ত যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার। কেননা দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝরে যাবে একেকটি তরতাজা প্রাণ, এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। রোড সেফটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনার যে তথ্য উঠে এসেছে, এগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ১৫৬টি, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৭৮টি, মোটরসাইকেলের পেছনে অন্য যানবাহনের ধাক্কা ও চাপা দেওয়ার ঘটনা ৩৫৩টি এবং পথচারীকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ১২৪টি। ৩৭৮টি দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেলচালক নিজেই এককভাবে দায়ী। এ ছাড়া দুর্ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী বাস ১২৩টি, ট্রাক ৩০৪টি, কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৭৯টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-সিএনজি-নসিমন-করিমন-ভটভটি) ৫৭টি, বাইসাইকেল ৫টি আর দুর্ঘটনায় আক্রান্ত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১ হাজার ৭৬টি। এ ছাড়া দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৩৯৮টি জাতীয় মহাসড়কে, ৩৬৯টি আঞ্চলিক সড়কে, ১২৮টি গ্রামীণ সড়কে এবং ১১৬টি শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে।

আমরা বলতে চাই, এ সব তথ্য পর্যবেক্ষণ করলে যে পরিস্থিতি স্পষ্ট হয় তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই যত দ্রম্নত সম্ভব সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। এটা আমলে নেওয়া সমীচীন, মোটরসাইকেলের এ সব দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, দেশে অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয় ও ব্যবহারে বাধাহীন সংস্কৃতি ও সহজলভ্যতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা, বাস-ট্রাক-পিকআপ-প্রাইভেট কার-মাইক্রোসহ দ্রম্নতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা, ইজিবাইক-সিএনজি-নসিমন-করিমন ইত্যাদি স্বল্পগতির যানবাহন অপরিকল্পিত ও অদক্ষ হাতে চালানো, সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা ইত্যাদি।

আমরা মনে করি, এ সব কারণকে সামনে রেখে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এভাবে একের পর এক ঝরে যাবে প্রাণ, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সঙ্গত কারণেই দুর্ঘটনা চিত্র এবং দুর্ঘটনার কারণগুলো আমলে নিয়ে এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে আর এর সুফল পেতে হলে যাতায়াতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। সঙ্গত কারণেই যাতায়াত নিরাপদ করতে হলে দুর্ঘটনা রোধে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে, সড়ক হয়ে উঠেছে যেন একটা মৃতু্য ফাঁদ! ফলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার যে চিত্র সামনে আসছে, তা আমলে নিয়ে সামগ্রিকভাবে দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্টরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে