মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

'ডিজিটালাইজড কম্বলে' ঢেকে দেওয়া হবে পদ্মা ব্যাংক

মো. এহসান খসরু ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ্মা ব্যাংক
  ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আলোর মুখ দেখার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল নাম পরিবর্তন করা পদ্মা ব্যাংক। কিন্তু কোভিড-১৯ এর প্রভাব সেই আলোর পথে কিছুটা বাধা সৃষ্টি করেছে। নাম পরিবর্তনের তিন বছর অতিক্রম করা ব্যাংকটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছে। ডিজিটালাইজড কম্বল দিয়ে ব্যাংকটিকে ঢেকে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সেই কার্যক্রম কিছুটা শ্লথ গতিতে এগোচ্ছে। পদ্মা ব্যাংক একটি সংস্করণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে পরিচালনা করে আসছে। এর আগে এখানে কোনো ব্যাংকিং ছিল না বললেই চলে। এখানে যে ঋণগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো চ্যারিটি হিসেবে হয়েছে। ঋণ দিলে ফিরিয়ে আনা যায়। দান করলে বা চ্যারিটি করলে সেটাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না। শূন্য থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি পর্যায়ে আনতে গেলে যে ধরনের অর্থনৈতিক পরিবেশ দরকার, সেটি আমাদের নেই। আমরা শুরু করেছিলাম ২০১৮ সালে, তা ঠিক ছিল, গত বছরও আমাদের ভালো ছিল, কিন্তু চলতি বছরে এসে করোনা আমাদের সবকিছু উলট-পালট করে দিয়েছে। আমরা ঋণ দেওয়ার অনুমতি নিয়ে আসছি অনেক আগেই। এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা বলেছি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম কন্সট্রাকশনের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্যারান্টি নন-ফান্ডেড বিজনেস করা যায়। আমরা সেদিকে নজর দিয়েছি। আমাদের বর্তমানে ব্যাংকটিকে ঘিরে দুটি স্বপ্ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম থেকে যে স্বপ্নটি ছিল, তা হচ্ছে ব্যাংকটিকে ডিজিটালাইজড করা। অর্থাৎ ডিজিটালাইজড কম্বল দিয়ে ব্যাংকটিকে ঢেকে দেওয়া। ব্যাংক হয়ে যাবে ব্রাঞ্চলেস, ট্রান্সলেস। এ বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কার্যক্রম ইতিমধ্যেই অনেক দূর এগিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ যে, কতটা আমরা ব্রাঞ্চলেস করে ফেলতে পারি। ব্রাঞ্চলেস থাকবে, তবে তা হবে ভার্চুয়াল। আমরা ব্রাঞ্চলেস ব্যাংক করব। তার মানে এই নয় যে, আমাদের কোনো ব্রাঞ্চ থাকবে না। আমরা মূলত ফিজিক্যাল ব্রাঞ্চ চাচ্ছি না।

প্রথম পর্যায়ে আমরা পাঁচটি ব্রাঞ্চ হাতে নিয়েছি। এজেন্ট ব্যাংকিং ব্রাঞ্চলেস ভার্চুয়াল ব্যাংকিংয়ে আমরা এগুলোকে রূপান্তরিত করব। এতে আমাদের অনেক খরচ কমে আসবে। কিন্তু গ্রাহকের কোনো সমস্যা হবে না।

\হইতিমধ্যেই আমরা কয়েকটি পণ্য বাজারে এনেছি। ঘরে বসে ব্যাংকিং করা এটা আমরাই প্রথম চালু করেছি। যদিও সিটি ব্যাংক আগে ঘোষণা করেছে। অন্য যেগুলো যেমন বিকাশে টপআপ করা, বিল পেমেন্টসহ অন্যান্য কর্মকান্ড আমরা করছি। পদ্মা ব্যাংকে যে পার্টনার আছে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা আমরা সবাই মিলে একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক করব। এটা আমাদের আরেকটি কর্মপরিকল্পনা। এটি একটি কমন পস্নাটফরমে সব ভার্চুয়াল সিস্টেমে হবে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি আমাদের বোর্ডে পাস করানো হয়েছে। অর্থাৎ চার লাখ কোটি গ্রাহক আমাদের, আমরা যদি এক লাখ কোটি টাকাও লেনদেন করি, তাহলেও প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের মতো ঘরে আনতে পারব। এ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দু-তিনবার বৈঠক করেছি। আমরা অচিরেই সাবসিডিয়ারির জন্য আবেদন করব। আমাদের টেকনোলজি পার্টনারের সঙ্গে কথা বলেছি। ২৪ শতাংশ থাকবে আমাদের টেকনোলজি পার্টনারের, বাকি ৭৬ শতাংশ থাকবে আমাদের নিজেদের। পদ্মা ব্যাংক দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে আলাদা কিছু নয় জানিয়ে মো. এহসান খসরু বলেন, করোনা মহামারি দেশের ব্যাংকিং খাতের ওপর বড় একটি প্রভাব ফেলেছে। দেশের সবগুলো সেক্টরের সঙ্গেই আপামর জনগণ জড়িত। কোভিড-১৯ এর শুরুটা আমরা দেখেছি, তবে শেষটা এখন পর্যন্ত দেখিনি। এর শেষটা সবারই অজানা। কোভিড-১৯ এর প্রকোপ থেকে অর্থনীতি পুরুদ্ধারে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সরকার অর্থনীতির খাতগুলোকে পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময়টা ঠিক ছিল কি না, তা আমরা জানি না। কারণ করোনার প্রভাব এখনো শেষ হয়নি। কোনো খাতের লোকজনই এ সময়ে ঠিকমতো নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এতে ব্যাংকের টাকা ফেরত আসবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রণোদনা প্যাকেজ হচ্ছে এক ধরনের ঋণ।

সুতরাং, সাবসিডি ঋণ ব্যাংকে আবার ফেরত দিয়ে দিতে হবে। কথা হচ্ছে, ঋণ দিয়ে তার টাকাটা ফেরত আসবে কি না এ নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে। আর এর জন্যই ব্যাংকাররা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কিছুটা গড়িমসি করছে। কারণ বর্তমানে ব্যাংকিং গ্রোথ নেই বললেই চলে। সরকার তার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ক্যাশ সারপস্নাস ব্যাংকিং খাতে অনেক। এরই ধারাবাহিকতায় অনেক ক্যাশ ফ্লো আছে। সে টাকাগুলোকে খাটানোর বিপরীত কোনো খাত নেই। সেন্ট্রাল ব্যাংকের বন্ডে কিংবা ট্রেজারি বিলের সেখানেও সম্ভব হচ্ছে না। অন্য ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যে টাকাগুলো নেবে, তারও কোনো অবস্থা নেই। কলমানি মার্কেটেও ইন্টারেস্ট রেট ১ শতাংশের নিচে।

সরকার যত বেশি টাকা নেবে, তত বেশি নতুন নতুন বন্ড তৈরি হবে। সেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদেরও কিছু দেবে। আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যদি আমরা টাকাগুলো খাটাতে পারি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছা করলে ব্যাংকিং সেক্টরের টাকা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কাজে লাগাতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে নতুন নতুন ট্রেজারি বিল, বন্ড তৈরি করে এ কাজটি করতে পারে।

আমাদের অঙ্গীকার ছিল যে আমরা এক বছরের মধ্যে শেয়ার মার্কেটে আসব। কিন্তু আইপিওতে যেতে গেলে ডিভিডেন্ট দিতে হবে, লাভ দিতে হবে। তবে আগের ব্যাংক অর্থাৎ ফার্মার্স ব্যাংক যে পুরানো জঞ্জাল রেখে গেছে, সেগুলো সরিয়ে লাভ করে ডিভিডেন্ট দেওয়া হয়তো আমাদের পক্ষে সম্ভব। তবে তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে