বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ নূর হোসেন একটি আন্দোলনের নাম

মানিক লাল ঘোষ সাবেক ছাত্রনেতা
  ১৫ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক সাহসী যোদ্ধার নাম। গণতন্ত্র মুক্তি পাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক বুকে-পিঠে ধারণ করে অমিততেজ আর বুকভরা সাহস নিয়ে মিছিলে নেমে এক যুবক ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর বুকের রক্তের ঢাকার পিচঢালা কালো রাজপথকে করেছিল রক্তে রঞ্জিত। সে আমাদের '৫২ '৬৯ '৭১-এর সাহসী দেশপ্রেমিকদের গর্বিত উত্তরসূরি, আমাদের সংগ্রামী চেতনার আরেক নাম। সেদিন স্বৈরশাসকের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছিল গণতন্ত্র রক্ষার এ সাহসী বীরকে। তার এ সাহসী আত্মত্যাগ আমাদের আন্দোলিত করে, চেতনাকে জাগ্রত করে প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে। শহীদ নূর হোসেন আজ একটি আন্দোলনের মাইলফলক। গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী নূর হোসেনের সাহসী আত্মদানকে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি।

১০ নভেম্বর এলেই রাজপথে যাদের ঠিকানা তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায় শহীদ নূর হোসেন, তারা বারবার ফিরে যায় ১৯৮৭ সালে। বিশেষ করে তৎকালীন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা জড়িত ছিল। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ১৫ দল, ৭ দল ও ৫ দলের সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থনে অবস্থান ধর্মঘট ঘেরাও কর্মসূচিতে রূপ লাভ করেছিল। স্বৈরশাসকের সব বাধাকে উপেক্ষা করে ১০ নভেম্বর সকাল থেকেই সচিবালয়ের চারদিকে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মিছিল সমবেত হয়। তখন তোপখানা রোডের মুখে পুলিশ বক্স পেরিয়ে শুরু হয় নূর হোসেনদের সাহসী মিছিল, সাহসী যুবক উদাম গায়ে লিখেছিল 'গণতন্ত্র মুক্তি পাক-স্বৈরাচার নিপাত যাক'।

সেদিন ওই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাহসী নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্র-নেতার শুরু হয় সংঘর্ষ। পল্টন তখন রণক্ষেত্র। এরই মধ্যে খবর আসে পুলিশের গুলিবর্ষণে শহীদ হয়েছেন নূর হোসেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। নূর হোসেন আত্মদানের মাধ্যমে সেদিন গণতন্ত্রের নতুন সংগ্রাম শুরু হলো, শুরু হলো নূর হোসেনের বুকে-পিঠে লেখা সেই স্স্নোগান নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা। নূর হোসেন উদ্বুদ্ধ করল লাখ লাখ ছাত্র-যুবক। সেই সংগ্রামের ধারায় ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী শাসক এইচএম এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিল।

নূর হোসেন আত্মদানের ২৯ বছর পার হয়ে গেলেও মূল্যায়ন হয়নি তার আত্মদানের। আজও পূরণ হয়নি নূর হোসেনের স্বপ্ন, সেদিন নূর হোসেনরা স্বপ্ন দেখেছিল স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপের ওপর গণতন্ত্রের পতাকা, কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন আজও স্বপ্নই থেকে গেল।

গণতন্ত্রের রক্ষার আবেদন নিয়ে ১০ নভেম্বর প্রতি বছর পালিত হয় শহীদ নূর হোসেন দিবস। তাই নূর হোসেনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হলে শুধু টিভি বা মিডিয়া কভারেজ নয়- বাস্তবিক অর্থে দুর্নীতিমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্রের শত্রম্ন তথা দুর্নীতিবাজ কালো টাকার মালিক, কালো আইন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণতন্ত্র সংকটমুক্ত হোক, নূর হোসেনের আত্মা শান্তি পাক- এটাই আমাদের কামনা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে