শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

ভেজাল : জাতিধ্বংসের সূক্ষ্ণ কারিগর!

নতুনধারা
  ১৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

যে কোনো একটি সভ্য জাতিকে ধ্বংসের জন্য ভেজাল খুব সূক্ষ্ণভাবে কাজ করে। বর্তমান সমাজে ভেজাল খুব সুচারুভাবে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা জায়গায় ভেজাল মারাত্মকভাবে জায়গা করে নিয়েছে। যেটা আমাদের জন্য খুব চিন্তার বিষয়! বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা খাবারেই এই ভেজাল রয়েছে। চাল থেকে শুরু করে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, সবজি কোনো কিছুই এর থেকে রেহাই পাচ্ছে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অতিমুনাফার জন্য খুব সুপরিকল্পিতভাবে এই ভেজালকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই ভেজালের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করছে দীর্ঘস্থায়ী বিষ। যেটা কিনা মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি করে। আজকাল গ্রামেও এই ভেজালের প্রভাব লক্ষণীয় আকার ধারণ করেছে। সময়ের আগেই গাছ থেকে আম, লিচু, বেল, কলাসহ বিভিন্ন অপরিপক্ব ফল পেড়ে ফরমালিন দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত কৃষক আর ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আজকাল আপেল, কমলা এক মাস ঘরে রেখে দিলেও এর কোনো পরিবর্তন হয় না। ফরমালিন সব খাবারে প্রয়োগ করে তাকে বিষিয়ে তুলছে। আর মানুষ অনেকটা অসহায় হয়েই জেনেশুনে এই বিষ কিনছে। এর বিরুদ্ধে যদি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না যায় তবে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এই ভেজালের প্রভাবে প্রতিবছর অসংখ্য শিশু বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জন্মলাভ করছে। যেটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য সুখকর নয়। এখন চালেরও নকল বেরিয়ে গিয়েছে। পস্নাস্টিক চালের খবর আমরা আগেই জেনেছি। ডিমও নাকি নকলভাবে তৈরি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা একটি ভেজাল প্রজন্মের মুখোমুখি হবো। বাংলাদেশে ভেজালের বিরুদ্ধে আইন আছে, কিন্তু এই আইনের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বাংলাদেশে ভেজাল দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার শহরে এমন কোনো সবজি নেই যেটা ভেজাল বা ফরমালিন ছাড়া! গুঁড়া মসলার মধ্যেও ভেজাল আছে। এখনকার বাবা-মা আফসোস করে বলেন যে তারা তাদের সন্তানকে গাছ থেকে পাকা ফল পেড়ে খাওয়ার যে মজা সেটা দিতে পারছেন না। কারণ এখন আর গাছে পাকা পর্যন্ত ফল রেখে দেওয়া হয় না, তার আগেই পেড়ে সেটাকে ফরমালিন দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি করা হয়। কি এক অসুস্থ সময়ের দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি! মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে প্রথম উপাদানই হচ্ছে অন্ন। আর সেটাকে নিয়েই কিনা অসুস্থ অপরাধ চলছে। খাবারের মধ্যে ভেজাল মিশিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটা জাতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটা প্রবেশ করেছে। এই ভেজাল মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলে। কোনো কিছুকে যখন স্বাভাবিকভাবে পূর্ণ হতে বাধা দেওয়া হয় তখনই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই এর বিরুদ্ধে এখনই সবাইকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে কঠোর হাতে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এবং এই ভেজালচক্রের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অতিশিগগিরই আইনের মুখোমুখি করতে হবে। আমরা সবাই ভেজালকে না বলি, এর বিরুদ্ধে পাড়ায়, মহলস্নায়, শহরে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং এর পেছনে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী আছে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করি।

মো. তাসনিম হাসান আবির

ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে