শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ১২ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। মহামারি করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিও টালমাটাল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রত্যেকটি খাত। মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও ব্যাহত হয়েছে। অনেকের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কেউ চাকরি হারিয়েছেন, কেউ ব্যবসা হারিয়েছেন। অনেকেই স্বজন হারিয়েছেন। এ এক ভীতিকর অবস্থা। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের আরও একটি প্রবাহ অর্থাৎ দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আসন্ন শীত মৌসুমে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে- জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার পর তা মোকাবিলায় গত সেপ্টেম্বরে এর রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। রোডম্যাপ তৈরি করা হলেও তা কার্যত নথিবন্দি হয়ে আছে। আগাম প্রস্তুতি নাজুক হলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ সামলানো কঠিন হবে। এতে সংক্রমণের সঙ্গে পালস্না দিয়ে মৃতু্যর সংখ্যাও বাড়বে। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছেন। দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার। মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যাবে না, বলা হয়েছে তাও। ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানাও করছে দেশের কোথাও কোথাও।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকের ক্ষেত্রে এখনো ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। স্বাস্থ্য খাতে ইতিমধ্যে গভীরভাবে বিস্তৃত দুর্নীতি করোনা সংকটে প্রকটভাবে উন্মোচিত হয়েছে এবং করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার অনলাইনে করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ: দ্বিতীয় পর্বের গবেষণা প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলা হয়েছে। সার্বিক পর্যবেক্ষণে টিআইবি বলেছে, করোনা মোকাবিলায় সরকারের কিছু কার্যক্রমে উন্নতি হলেও পূর্বের গবেষণার ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি এখনো বিদ্যমান। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ কার্যক্রমে সংকট এখনো চলমান। সংঘটিত এসব অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্য খাতের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

একইভাবে সরকারের ত্রাণসহ প্রণোদনা কর্মসূচি থেকেও অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুবিধা লাভের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মাঠ পর্যায়ের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিতরণকৃত ত্রাণ হতে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের সংকোচনমূলক নীতি প্রয়োগের (সেবা ও নমুনা পরীক্ষা হ্রাস) মাধ্যমে শনাক্তের সংখ্যা হ্রাস হওয়াকে 'করোনা নিয়ন্ত্রণ' হিসেবে দাবি এবং রাজনৈতিক অর্জন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ ছাড়াও শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতির অভাব বলেও অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। শহরকেন্দ্রিক ও বেসরকারি পর্যায়ের বাণিজ্যিকসেবা সম্প্রসারণ, পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই সেবা থেকে বঞ্চিত করছে এবং হয়রানি ও অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।

আমরা মনে করি, এই অভিযোগসমূহ আমলে নেয়া উচিত। কারণ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হয়েছে। তারা সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সরকারের উচিত করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা। পাশাপাশি সব ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে