শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা

নিশ্চিত করতে হবে
নতুনধারা
  ১১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের বাস্তবতায় বিশ্বজুড়ে অভাবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দুর্যোগকালে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষগুলোর বেশির ভাগই নিম্ন এবং মধ্যআয়ের দেশগুলোর বাসিন্দা। দৈনিক মজুরি পেলে খাওয়া সম্ভব হয় এমন লাখ লাখ মানুষের জন্য এই মহামারি মারাত্মক বিপর্যয়কর। করোনাকালে বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা মন্দায় ইতিমধ্যে অনেকের সামান্য সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। তারা এখন দিশাহারা অবস্থায় রয়েছে। এ এক বিপজ্জনক বার্তা।

এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে ১০ লাখ ৩ হাজার ২০ টন। গত বছর একই সময়ে এই মজুতের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪০ টন। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় সরকারি গুদামে মজুত কমেছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৮২০ টন খাদ্যশস্য। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিটের (এফপিএমইউ) দৈনিক খাদ্য পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

উলেস্নখ্য, এ বছর করোনার জন্য মজুত খাদ্যশস্য থেকে সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে চাল সরবরাহ করা হয়েছে বেশি। পাশাপাশি ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে চাল বিক্রির কার্যক্রমও চালু রয়েছে। ফলে এ বছর গুদাম থেকে অন্য বছরের তুলনায় বেশি খাদ্যশস্য ব্যবহার হয়েছে। তাই মজুতের পরিমাণ কম। আমরা মনে করি, যেভাবেই হোক খাদ্য মজুত বাড়াতে হবে। দেশ খাদ্য সংকটে পড়ুক এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।

এটা সত্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি হলো একজন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকের মৌলিক অধিকার। একটি দেশকে সঠিকভাবে উন্নত করতে চাইলে সবার আগে সেই দেশের জনগণের খাদ্যের নিরাপত্তা দান করতে হবে। খাদ্য ছাড়া মানুষ অচল। তাই এই খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে সচেতন হতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা বলতে একটি জনগণের বছরে যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তা দেশের মজুত থাকাকে বোঝায়। দেশে 'খাদ্য নিরাপত্তা' একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদন করেই হোক কিংবা আমদানি করেই হোক, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খাদ্যের সঠিক নিরাপত্তা যদি রক্ষা করা না হয়, তাহলে একটি দেশ সুস্থ-সবল জাতি পাবে না। বিদ্যমান বাস্তবতায় করোনাকালে ক্রমবর্ধমান অপুষ্টির পরিণতি হবে দীর্ঘমেয়াদি। এটি একটি প্রজন্মকে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। করোনাভাইরাস এবং এ ভাইরাসকেন্দ্রিক নানা বিধিনিষেধের ফলে ক্ষুধার্ত জনগোষ্ঠী এমনিতেই খাদ্যের কিনারায় গিয়ে পৌঁছেছে। ক্ষুদ্র খামারগুলো সংকটে পড়েছে এবং দেশের অনেকেই খাদ্য ও চিকিৎ্‌সা সহায়তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষগুলোর বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের। খাদ্য সংকটবিষয়ক বৈশ্বিক রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা সবচেয়ে বেশি মানুষ সংঘাতকবলিত দেশের। এদের সংখ্যা প্রায় সাত কোটি ৭০ লাখ। এর পরেই রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সংকটে পড়া মানুষ। তাদের পরিমাণ তিন কোটি ৪০ লাখ। এছাড়া অর্থনৈতিক সংকটে পড়া আরও দুই কোটি ৪০ লাখ মানুষও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। আমরা মনে করি, এই সংকট দূর করতে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে