শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতি এমন আচরণ করছে কেন?

বাংলাদেশ এমন এক মহাবিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই, আবার অসময়ে অতিবর্ষণ।
মীর আব্দুল আলীম
  ১১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি বুঝে ওঠা দায় হয়ে পড়েছে। প্রকৃতি বিচিত্র ধরনের আচরণ করছে। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে তার চরিত্র। যথাসময়ে শীত আসছে না, বৈশাখে আষাঢ়ের আচরণ, গরমে শীত শীতভাব, বর্ষায় বৃষ্টি কম, অতি খরা, অতি বৃষ্টি এমনটাই হচ্ছে। আবহাওয়ার এ ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই প্রকৃতিতে কখন কোন ঋতু বিরাজ করছে দেশে। প্রকৃতি এমন আচরণ করছে কেন? আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে কেন? এটা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। পরিবেশ দূষণের কারণে মূল চরিত্র বদলাচ্ছে সব ঋতু। এখন শরৎকাল শেষে হেমন্তের মাঝামাঝিতেও ঝরছে বৃষ্টি। বৃষ্টি না থাকলে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। অথচ এ সময়ে হালকা শীত থাকার কথা। আবহাওয়ার গতি-প্রকৃতি বুঝে ওঠা দায় হয়ে পড়েছে।

জলবায়ু যে এতটা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে, কী করছি আমরা? অশুভ কিছু ঘটার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বেঁচে থাকার উপযোগী বিশ্ব গঠনে গাফিলতির সুযোগ নেই। বাংলাদেশের জলবায়ু ভয়ংকরভাবে পরিবর্তন হচ্ছে এটা লক্ষ্য করছি আমরা। বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রতল ৯ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং কার্বন নির্গমণের উচ্চহারে যে বৈশ্বিক উষ্ণতা হচ্ছে তার ফলে সমুদ্রতল ১৬ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়বে। খাদ্যাভাব দেখা দেবে, স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়বে এমনকি ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ভূমির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে। এর ফলে সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোর মানুষ বাস্তুভিটা হারাবে। নদ-নদীতে লোনা পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে, বাড়বে শরণার্থীর সংখ্যা। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়বে এবং দেশে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেড়ে যাবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হেপাটাইটিস বি, সংক্রামক ব্যাধি, মেনিনজাইটির মতো গ্রীষ্মকালীন রোগগুলো বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে সূর্যের বিকিরণকৃত আলটাভায়োলেট রশ্মিও অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে চামড়ার ক্যান্সার ও চোখের ছানি পড়া রোগ বৃদ্ধি পাবে। এমনকি খাদ্যশস্যে তেজষ্ক্রিয়তা বেড়ে যাবে। খাদ্যাভাব দেখা দেবে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়কে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর অপ্রথাগত হুমকি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন শঙ্কার খবরগুলো ভাবায় বৈকি!

বিশ্ব যেভাবে চলছে, তাতে উষ্ণতা বৃদ্ধি এড়ানো বড়ই কঠিন। তাতে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি, বাড়ছে দুর্যোগ ও নতুন রোগের বিস্তৃতি ঘটছে। এ ছাড়া বন্যা ও লঘুচাপের পরিমাণও বেড়েছে। 'জলবায়ু সেবা পরিস্থিতি ২০২০' শীর্ষক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যা-সাইক্লোনসহ নানা দুর্যোগে বাংলাদেশে গত ৪০ বছরে ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃতু্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট সেন্ট্রালের গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বন্যার আঘাতের শিকার হবে বাংলাদেশের ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, সাধারণত আগস্টে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি লঘুচাপ হয়। কিন্তু এ বছর হয়েছে পাঁচটি। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবরে লঘুচাপ সৃষ্টি না হওয়ার কথা, কিন্তু যখন লিখছি তখন একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের 'বাংলাদেশের জলবায়ু' শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়, গত কয়েক বছরে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। রংপুরে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চলতি বছর।

বাংলাদেশ এমন এক মহাবিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই, আবার অসময়ে অতিবর্ষণ। শীতে নেই শীত। শুষ্ক মৌসুমে মারাত্মক খরা শস্যহানি; আবার প্রলয়ংকরী বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পৌনঃপুনিকতা। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে ঋতু-বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। একদিকে গ্রীষ্ম ও বর্ষা প্রলম্বিত হচ্ছে, অন্যদিকে শীতকাল সংকুচিত হচ্ছে। শরৎ ও হেমন্তের অস্তিত প্রায় বিলুপ্ত। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে এর পেছনে রয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন। এই যে ঘন ঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলাবদ্ধতা, অসময়ে বৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি। বাংলাদেশের নিচু ও উপকূলীয় এলাকা বেশি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণা বলছে, আগামীতে এ ধরনের দুর্যোগ আরও শক্তি নিয়ে আসবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রয়াস দ্রম্নততার সঙ্গে জোরদার করার বিকল্প থাকা সঙ্গত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।

আর সময়ক্ষেপণ নয়, এবার কিছু একটা করতে হবে। কারণ, দ্বিতীয় কোনো বিশ্ব নেই যাকে আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, জলবায়ু আমাদের হত্যা করছে। আমাদের আগামী প্রজন্ম একটা সুন্দর পৃথিবী পাক, সে জন্য আমাদের এখনই ভাবতে হবে। বর্তমান উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এত উদ্বেগ ও আলোচনার কারণ কোনো প্রাকৃতিক উপাদান নয়, বরং মানুষের প্রকৃতিবিরুদ্ধ নানাবিধ অপকর্মের ফলস্বরূপ বায়ুমন্ডলের ক্ষতিকারক গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রার সংকটজনক বৃদ্ধি গোলকীয় উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। মনুষ্য সৃষ্ট এ আজাব থেকে নিজেদেরই নিজেদের মুক্ত করতে হবে। সারা বিশ্বে আওয়াজ তুলতে হবে, 'আর পরিবেশ ধ্বংস করব না; নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করব'। এ স্স্নোগান বিশ্ব মানবতা, বিশ্ব বিবেককে তাড়িত করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি বরফের খনি এন্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়ার হার বেড়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বের বড় বড় বন্দর শহরগুলোর প্রায় ৪ কোটি মানুষ ভয়াবহ সামুদ্রিক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর থেকে রক্ষা পাবে না যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোও। যুক্তরাষ্ট্রে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে- মিয়ামি বিচ, লুইজিয়ানা ও টেক্সাস উপকূল। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ১০ মিটার বাড়লেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ। অর্থের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতি হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। তবে মূল ক্ষতিটা হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১৪ সালে বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি রেকর্ডমাত্রায় পৌঁছেছে। সংস্থাটির মতে, কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর দীর্ঘস্থায়ী গ্যাসগুলোর কারণে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সালে আবহাওয়ায় উষ্ণায়নের হার ৩৪ শতাংশ পরিমাণে বেড়েছে। আগামী দশকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাইক্লোন সিডরে সাড়ে ৩৪ লাখ মানুষের বাড়িঘর ভেসে গিয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে ওই ধরনের সাইক্লোনে তিন মিটার উঁচু জলোচ্ছ্বাস হবে। এতে ৯৭ লাখ লোকের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। এখনই প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে চলতি শতকের শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প সময়কালের চেয়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ এলাকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কৃষি উৎপাদন, পানিসম্পদ, উপকূলীয় ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ২০৯০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি বেশি বন্যা ও খরা হবে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। যেমন- বাংলাদেশের তাপমাত্রা ২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বন্যাপ্রবণ এলাকা প্রায় ২৯ শতাংশ বাড়বে।

২০৮০ সাল নাগাদ সমুদ্রস্তর ৬৫ সেন্টিমিটার উঁচু হলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ৪০ শতাংশ উৎপাদনশীল ভূমি হারাবে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই কোটি মানুষ খাবার পানিতে লবণাক্ততার সমস্যার মুখে পড়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনে বন্যার ঝুঁকিও বাড়বে। বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি, বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এভাবে দেখা যায়, প্রতি বছরে গড়ে প্রায় ১০৯৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ১৫ লাখ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এ দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার কারণে এ দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো ধান। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানচাষ। অসময়ে বন্যা, বৃষ্টি এবং প্রবল শিলাবৃষ্টির কারণেও ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। পাট চাষের ক্রমাবনতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় রবিশষ্যের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শৈত্যপ্রবাহের ফলে সরিষা, মসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সবের ফলে সারা বিশ্বে যে জলবায়ু পরিবর্তনের আলামত দেখা দিয়েছে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।

বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি, বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এভাবে দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০৯৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ১৫ লাখ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এ দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার কারণে এ দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো ধান। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান চাষ। অসময়ে বন্যা, বৃষ্টি এবং প্রবল শিলাবৃষ্টির কারণেও ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়ছেন। পাট চাষের ক্রমাবনতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় রবিশস্যের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার শৈত্যপ্রবাহের ফলে সরিষা, মসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সবের ফলে সারাবিশ্বে যে জলবায়ু পরিবর্তনের আলামত দেখা দিয়েছে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।

পরিবেশ সচেতন হওয়ার সময় এখনই। আমাদের জনগণ আমাদের পরিবেশ রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। কেবল সরকারের পক্ষেই পরিবেশ রক্ষা সম্ভব নয়; জনগণকেও এ বিষয়ে সচেতন হয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, দীর্ঘমেয়াদি বন্যা, জলাবদ্ধতা, খরা, অতিরিক্ত লবণাক্ততা এ সব সমস্যা এখন প্রকট। এ সব সমস্যার কারণে প্রতি বছর দেশের লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় জলবায়ু ও দেশে পরিবেশ রক্ষায় সরকার আরও বেশি সচেষ্ট হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

মীর আব্দুল আলীম : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে