শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জো বাইডেন ও রাষ্ট্রের মানবিক চরিত্র

মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে হতে হয় কল্যাণমূলক ও মানবিক। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিপীড়নমূলক আচরণ আমেরিকাকে পরিহার করতে হবে। এই দায়িত্ব এখন বাইডেনের। মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের পুনঃস্থাপন এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। ভালো কথা। তবে বিশ্ববাসী যুদ্ধবাজ ও আগ্রাসী আমেরিকাকে দেখতে চায় না। দেখতে চায় এক মানবিক আমেরিকাকে। একজন মানবিক উদার অবর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আমেরিকাকে মুক্ত করবেন যুদ্ধবাজ আগ্রাসী দেশের অভিধা থেকে- এটাই সবার প্রত্যাশা।
সালাম সালেহ উদদীন
  ১১ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

জো বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিজয় ভাষণে সব বিভেদ ভুলে ঐক্য ও সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'এই জাতির ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছি। আমার ওপর আপনাদের এই আস্থা ও বিশ্বাসের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।' তিনি আরো বলেছেন, 'কোটি কোটি আমেরিকান আমার দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এটি আমার জীবদ্দশায় এক অনন্য সম্মান। যে দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ রায় দিয়েছেন, তাকে বাস্তবে পরিণত করাই এখন আমাদের কাজ। আমাদের গণতন্ত্রকে আমাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এখনো নয়, কখনোই নয়।' বোঝা যাচ্ছে, গণতন্ত্রের চোখে বিশ্বকে দেখার স্বপ্ন বাইডেনের। জাতিকে বিভক্ত নয়- ঐক্যবদ্ধ করতে চান তিনি। তার কাছে শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ সব সমান। তার এই অবর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন আমরা দেখতে চাই।

মার্কিন সংবিধান অনুসারে, বাইডেনের নতুন মেয়াদ শুরু হবে ২০ জানুয়ারি দুপুরে। এই দিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক শপথগ্রহণ করবেন। বাইডেনের এ জয়ের ফলে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মেয়াদ শেষেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ভোটের হার দেখেই বিজিত প্রার্থী হার স্বীকার করে নেন, তবে ট্রাম্প এখনো তা করেননি। মার্কিন ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে এবার। যুক্তরাষ্ট্রে এবার মোট ভোট পড়েছে ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ; ১৬ কোটি। এর মধ্যে আগাম ভোটই ১১ কোটি। এবারের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোটে জো বাইডেন পেয়েছেন ২৯০ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৪। আর পপুলার ভোটে বাইডেন পেয়েছেন ৭ কোটি ৫১ লাখ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ৭ কোটি ৮ লাখ।

ট্রাম মার্কিন ইতিহাসে আমেরিকার বিভাজন সৃষ্টি করেছে। লন্ডনের 'গার্ডিয়ান' পত্রিকায় ডোনাল্ড ট্রামকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে 'প্রেসিডেন্ট অব ক্যাওস অ্যান্ড করোনাভাইরাস,' অরাজকতা ও করোনাভাইরাসের প্রেসিডেন্ট। অনেকের বিস্ময়, এত অনাচার করার পরেও ট্রাম্প এত ভোট বাগালেন কীভাবে? ডোনাল্ড ট্রাম্প যতটা না রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন তার চেয়েও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে তার ব্যক্তিগত ত্রম্নটি। হোয়াইট হাউস থেকে তার ছিটকে পড়ার অনেক কারণ আছে। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে একটা প্রশাসন চালিয়েছেন। ভিত্তিহীন অসংলগ্ন কথাবার্তা ও লাগাতার মিথ্যাচারের কারণে জনবিচ্ছিন্ন অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরাজয়ের মূল কারণ এ সব। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন গত ১০০ বছরের মার্কিন ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট। টমাস জেফারসন আর আব্রাহম লিংকনের দেশে প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন বড় বেমানান।

\হট্রাম্পের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি, ইরান, নিউক্লিয়ার চুক্তি, ইউনেস্কো, ইউএন হিউমেন রাইট কাউন্সিল, ওপেন স্কাইস ট্রিটি, ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ, ইন্টারন্যাশনাল রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্স ট্রিটি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে একতরফা বেরিয়ে যাওয়ায় বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি, বিশেষ করে ইমিগ্রেশন নীতির কারণে তারা সবাই ট্রাম্পের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। ট্রাম্পের সাম্প্রতিককালের কিছু সিদ্ধান্তে শুধু বাংলাদেশি, ভারতীয় বা পাকিস্তানিরাই নয়- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিবাসী, যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তাদের সবার মধ্যেই একটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল। আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী ও বর্ণবাদী আচরণের কারণে যারপরনাই বিরক্ত হয়ে স্বাভাবিকতায় ফিরতে চেয়েছিল দেশের ক্লান্ত জনগণ। তারা একটি পরিবর্তন চেয়েছিল। তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়েছে।

এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন, জো বাইডেন এমন এক সময়ে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের একের পর এক মৃতু্যকে ঘিরে দীর্ঘ সময় ধরে সহিংস বিক্ষোভে চলেছে। ট্রাম্পের সময়ে বর্ণভিত্তিক বিভেদ বৃদ্ধি এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের উত্থান হয়েছে।

বাইডেন বর্ণভিত্তিক বৈষম্য উচ্ছেদকে তার প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত হিসেবে তৈরি করতে চান। তিনি সরকারি তহবিল ব্যবহার করে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চান। কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পদের বৈষম্য দূর করতে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন আরও জোরালোভাবে কাজ করে সেটি নিশ্চিত করতে চান তিনি। এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়।

১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর আমেরিকার পেনসিলভানিয়ায় জন্ম নেওয়া বাইডেনের প্রথম চাকরি ছিল উইলমিংটন ল' ফার্মে। ফার্মের প্রধান ছিলেন রিপাবলিকান উইলিয়াম প্যাট্রিক। বাইডেনের পরবর্তী কর্মস্থল ল' ফার্মের কর্ণধার ছিলেন ডেমোক্রেট। তার সান্নিধ্যে বাইডেনও সক্রিয় ডেমোক্রেটপন্থি হয়ে ওঠেন। এরপর ধীরে ধীরে আইনজীবী বাইডেনকে ছাপিয়ে যায় তার রাজনীতিক সত্তা। কাউন্টি কাউন্সিলের দায়িত্ব পালন করার পরে তিনি ১৯৭২ সালে প্রথম অংশ নেন সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে। প্রথম চেষ্টাতেই সাফল্য ধরা দেয়। ১৯৭২ সালেই তিনি ডেলাওয়ার থেকে জুনিয়র সিনেটর হন, তখন তার বয়স মাত্র ২৯। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সি সিনেটর তিনি। আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল না তার পরিবার। তার বাবা ছিলেন গাড়ির বিক্রয়কর্মী। বিষয়টি বাইডেন সগর্বেই বলে থাকেন। ৭৭ বছর বয়সি জো বাইডেন এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ডেলাওয়ারের সবচেয়ে বেশি সময়ের সিনেটর তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বাইডেন ছিলেন ডেলাওয়ারের ডেমোক্রেট সিনেটর। এরপর ২০০৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই দফার মেয়াদে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।

এবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েছেন কমলা হ্যারিস। তিনিই দেশটির প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় নারী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। মার্কিন রাজনীতিতে নজির গড়ে এই প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ নারী। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস জ্যামাইকান। আর তার মা ক্যান্সার গবেষক শ্যামলা গোপালান, যিনি এক ভারতীয় কূটনীতিকের মেয়ে। ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ওকল্যান্ডে জন্ম হয় কমলার। তার নামের শেষাংশ বাবার কাছ থেকে নেওয়া; প্রথমটুকু মায়ের দেওয়া। মার্কিন রাজনীতিতে ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে সর্বোচ্চ পদগুলো শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের হাতে। সেই প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ নারী কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, 'এই নির্বাচন জো বাইডেন অথবা আমার জন্য অনেক বেশি কিছু ছিল। এটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়। এটার জন্য আমরা লড়াই করেছি। আমাদের সামনে এখন অনেক কাজ পড়ে আছে, আসুন শুরু করি।' নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, 'আমি এই অফিসের প্রথম নারী হতে পারি, কিন্তু শেষজন নই। যে সব নারী ভোট দেওয়ার মতো মৌলিক অধিকারের জন্য লড়ছেন, আমি তাদের সঙ্গে আছি। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।'

জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রথমে বিভাজিত দেশকে আবার জোড়া লাগাতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইমেজের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে আবার একটি মানবিক দেশে পরিণত করতে হবে। জো বাইডেন আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ অনিয়মিত অভিবাসীকে নিয়মিত করবেন। এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়মিতভাবে থাকা বাংলাদেশিরাও উপকৃত হবেন এবং রেমিট্যান্সেও একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উলেস্নখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছয় থেকে সাত বিলিয়ন রপ্তানি করে মাত্র। এটা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র খোলা অর্থনীতির দেশ। জো বাইডেন যদি এ খোলা অর্থনীতির দরজা প্রসারিত করেন তবে সুযোগ আরও বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স আয়ের দেশ যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র সমকালের মহাপরাক্রমশালী বিশ্বশাসক। আরও খোলামেলা ভাষায় বললে, আধুনিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক সন্ত্রাসী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। গত দুই দশক ধরে ভয়ংকর করে তুলেছে পৃথিবীকে। একটার পর একটা দেশে টার্গেট করছে। যুদ্ধ করছে। কখনো 'ধ্বংসাত্মক ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র' থাকার মিথ্যা অজুহাতে আবার কখনো 'মানবিক হস্তক্ষেপ'-এর ছদ্মবেশে চালানো হয়েছে আগ্রাসন। কখনো এককভাবে আবার কখনো সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে নিয়ে।

স্বার্থোদ্ধারে প্রথমে হুমকি-ধমকি। তাতে কাজ না হলে বিমানবাহিনী রণতরী, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, আর্টিলারি, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র আর হালের মনুষ্যবিহীন মারণাস্ত্র ড্রোন নিয়ে পুরো রণসাজে সজ্জিত হয়ে হামলে পড়ছে। বৃষ্টির মতো বোমা ফেলেছে যুদ্ধবিমানগুলো। রণতরী থেকে ছোড়া হয়েছে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র। এভাবে আঘাতের পর আঘাতে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল-ক্লিনিক। হত্যা করা হয়েছে লাখ লাখ মানুষকে। একটা শেষ হলেই আরেকটা ধরেছে।

এভাবে বর্তমানে বিশ্বের ৮০টি দেশে যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই'-এর নামে দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নিয়ে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছিল ওয়াশিংটনভিত্তিক খ্যাতনামা ম্যাগাজিন স্মিথসোনিয়ান। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে বিশ্বের ৮০টি দেশে (যা পৃথিবীর মোট দেশের ৪০ শতাংশ) যুদ্ধ করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী।

কখনো সরাসরি আবার কখনো অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। ৪০টি দেশে সামরিক ঘাঁটি গেড়েছে এবং অন্তত ৬৫টি দেশের সেনাবাহিনীকে 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে'র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। অন্তত ১৪টি দেশে মার্কিন বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ২৬টি দেশের নিয়মিত যুদ্ধে মহড়া করেছে।

এ ছাড়া কোনো সেনাবাহিনী না পাঠিয়েই শুধু বিমান ও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে ৭টি দেশে। মার্কিন আগ্রাসনের শিকার আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়া। কিন্তু আফ্রিকার তিউনিশিয়া, সোমালিয়া, মালি, নাইজেরিয়া, নাইজার, সুদান ও কেনিয়া এশিয়ার ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর কথা খুব কম মানুষই জানে। বিরামহীন এ যুদ্ধে রক্তপাত, সম্পদ ও প্রাণের ক্ষতি সত্ত্বেও এর খামতির কোনো লক্ষণ নেই। বরং আরও নতুন নতুন দেশে বিস্তারের ক্ষেত্র তৈরি করতে যাচ্ছিল ট্রাম্প।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের বীজ ছড়িয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নাইন ইলেভেন হামলার (২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন টুইন টাওয়ারের কথিত সন্ত্রাসী হামলা) পরই তা নতুন মাত্রা পায়।

বিশ্বব্যাপী 'সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ'র ঘোষণা দেয় তৎকালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ প্রশাসন। অভিযুক্ত আল কায়দা নেতা সৌদি নাগরিক ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অজুহাতে আফগানিস্তান-পাকিস্তানে শুরু করে সামরিক অভিযান। এরপর গুনে গুনে পার হয়েছে ২০টি বছর। এক সরকারের পর এসেছে আরেক সরকার। কিন্তু ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ শেষ হয়নি। সেই একই ধুয়ো তুলে বিশ্বের দেশে দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মনে রাখতে হবে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে হতে হয় কল্যাণমূলক ও মানবিক। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে নিপীড়নমূলক আচরণ আমেরিকাকে পরিহার করতে হবে। এই দায়িত্ব এখন বাইডেনের। মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের পুনঃস্থাপন এবং বিশ্বজুড়ে নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন বাইডেন। ভালো কথা। তবে বিশ্ববাসী যুদ্ধবাজ ও আগ্রাসী আমেরিকাকে দেখতে চায় না। দেখতে চায় এক মানবিক আমেরিকাকে। একজন মানবিক উদার অবর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আমেরিকাকে মুক্ত করবেন যুদ্ধবাজ আগ্রাসী দেশের অভিধা থেকে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

সালাম সালেহ উদদীন : কবি কথাসাহিত্যিক সাংবাদিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে