শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট মার্কিনিদের তথা বিশ্ববাসীর স্বস্তি

বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স আয়ের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একটা উলেস্নখযোগ্য সংখ্যায় অভিবাসী আসছে অনিয়মিত। ট্রাম প্রশাসনের নীতি ছিল তাদের জন্য কঠোর। জো বাইডেন আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ অনিয়মিত অভিবাসীকে নিয়মিত করবেন। এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়মিতভাবে থাকা বাংলাদেশিরাও উপকৃত হবেন এবং রেমিট্যান্সেও একটা প্রভাব পড়বে।
সৈয়দ ফারুক হোসেন
  ১০ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

জো বাইডেন (জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র) ইতিহাস গড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে পরাক্রমশালী দেশটির সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার জন্য তার প্রায় অর্ধ শতাব্দীর লড়াইয়ের সফল সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এ জয়ের ফলে ১৯৯২ সালের পর এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মেয়াদ শেষেই হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিচ্ছেন।

মার্কিনীরা তথা বিশ্বের ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষ আবালবৃদ্ধবনিতা মহাখুশি। শিশুরাও আনন্দে উদ্বেলিত, রাহুর গ্রাস থেকে বিশ্ব যেন মুক্ত হয়েছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিকামী ও শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। নির্বাচনের তারিখ থেকে ফল ঘোষণার আগে পর্যন্ত মার্কিনীরা তথা বিশ্বের মানুষ আবেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করেছে। আমার পুত্র সৈয়দ ফারহান হোসেন লাবিব (এসএসসি পরীক্ষার্থী) ও অস্বস্তির মধ্যদিয়ে এ সময়টুকু অতিবাহিত করেছে। সে আমাকে মূলত লেখাটি লিখতে প্রলুব্ধ করেছে। কারণ তার চেহারার মধ্যে আমি সমগ্র পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছি। এ করোনা মহামারিতে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের শোকাহত মানুষ অন্তত ট্রামমুক্ত নতুন আলোর পৃথিবী দেখতে পাচ্ছে। মার্কিনীরা তথা পৃথিবীর মানুষ এতদিন পথভ্রষ্ট ছিল। এখন মনে হয় সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছে।

ট্রাম মার্কিন ইতিহাসে আমেরিকার বিভাজন সৃষ্টি করেছে। লন্ডনের 'গার্ডিয়ান' পত্রিকায় ডোনাল্ড ট্রামকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে 'প্রেসিডেন্ট অব ক্যাওস অ্যান্ড করোনাভাইরাস,' অরাজকতা ও করোনাভাইরাসের প্রেসিডেন্ট। অনেকের বিস্ময়, এত অনাচার করার পরেও ট্রাম্প এত ভোট বাগালেন কীভাবে? এর সহজ উত্তর হলো, এখানে কোনো জাদুবিদ্যা নেই। আছে সহজ গণনা। ট্রাম্প হিটলারের 'নীল রক্তের অধিকারী জার্মানরাই বিশ্বের সেরা জাতি' স্স্নোগানের মতো 'আমেরিকা ফার্স্ট' ধ্বনি তুলে এবং অভিবাসী ও কালো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিটলারের ইহুদিবিদ্বেষ প্রচারের মতো বিদ্বেষ প্রচার করে আমেরিকার শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের এক বিরাট অংশের সমর্থন ধরে রাখতে পেরেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি একচেটিয়া ভোট পেয়েছেন আমেরিকার অত্যন্ত শক্তিশালী ইহুদি সম্প্রদায়ের। জেরুজালেম ইসরাইলকে দান করে এবং সৌদি আরবসহ অধিকাংশ আরব রাষ্ট্রকে ইসরাইলের সঙ্গে মৈত্রী প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করে ট্রাম্প গোটা বিশ্বের ইহুদিদের সমর্থন লাভ করেছেন। আমেরিকার ইহুদি সম্প্রদায় অর্থেবিত্তে অত্যন্ত শক্তিশালী। মার্কিন রাজনীতিতে তাদের প্রভাব উলেস্নখযোগ্য। ট্রাম্প এ ইহুদি ভোট একচেটিয়াভাবে পেয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যে বিশ্ব ব্যবস্থা বা 'ওয়াল্ড অর্ডার' গড়ে উঠেছে তার নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে শুরু করে বিশ্বে যতগুলো আন্তর্জাতিক সংঘ আছে তার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এখনো নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় পর্যন্ত সেই নেতৃত্ব নিরবচ্ছিন্নই ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেখা গেল, যুক্তরাষ্ট্র সেই বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গা থেকে ক্রমাগত নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে এলো, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ভূমিকা কমে গেল, কোভিড-১৯ মহামারির মতো অত্যন্ত নিদারুণ সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্র পিছুটান দিল। এর ফলে বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ল; যার প্রভাবও দেখা গেল। কোভিড-১৯ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হলো না! এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর।

যুক্তরাষ্ট্র যেখান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল সেই শূন্যতা পূরণ করতে এগিয়ে এলো চীন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে চীনের প্রেসিডেন্ট সরাসরি ঘোষণা দিয়ে বললেন, এখন বিশ্বায়নে নেতৃত্ব দিতে চায় চীন। আবার চীনের সঙ্গে টানাপড়েনের কারণে বিশ্বব্যবস্থায় 'হয় যুক্তরাষ্ট্র' নয়তো 'চীন' এমন একটা বিভাজন রেখা সৃষ্টি হলো। এটা বাংলাদেশ, ভারতসহ উন্নয়ন অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়া দেশগুলোর জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করল। একটা বিষয় হচ্ছে- এখন পর্যন্ত সব আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। যেমন- বর্তমান বিশ্বে প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হয়, এটা রেগুলেটর করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এখন যুক্তরাষ্ট্র যখন এখান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তখন এ সংস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজ 'বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি', সেটা ব্যাহত হয় এবং বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে; যেটা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় জো বাইডেন নির্বাচিত হয়েছেন যেটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের একটি অংশ বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়াতেই সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক অগ্রগতির দেশ। এ কারণেই এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে বাংলাদেশের সামনে যে বস্নু ইকোনমি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যে ধাপগুলো আছে, তা চিহ্নিত করে দূর করতে হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যতটা না রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে গেছেন তার চেয়েও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে তার ব্যক্তিগত ত্রম্নটি। হোয়াইট হাউস থেকে তার ছিটকে পড়ার অনেক কারণ আছে। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি আধুনিক মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে একটা প্রশাসন চালিয়েছেন। কিছুটা সান্ত্বনার বিষয় হলো, আমেরিকানরা বুঝেছে, ট্রাম্প কী একটা হুমকির প্রতিনিধি। এই ভেবে তারা রেকর্ড সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে গেছে তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে। এ নির্বাচন আরেকটি বিষয় উন্মোচন করেছে ট্রাম্প শিবির থেকেও বিপরীত এবং সমপরিমাণে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দপ্তরে বসার পর থেকে বিভাজন আরও গভীর হয়েছে বলেই মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এবার মোট ভোট পড়েছে ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ; ১৬ কোটি। এর মধ্যে আগাম ভোটই ১১ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার করোনাভাইরাসের কারণে রেকর্ড পরিমাণ আগাম ভোট পড়েছে। এর একটা বড় অংশই মেইল ইন ব্যালট বা ডাকযোগে আসা। এ ভোটগুলো গোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি, বরং নিত্য-নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। ভিত্তিহীন কথাবার্তা ও মিথ্যাচারের দ্বারা জনগণ থেকে জনবিচ্ছিন্নতাই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরাজয়ের মূল কারণ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প জয়লাভের পর থেকেই পত্রপত্রিকা রীতিমতো ছাপাতে শুরু করেছিল- ট্রাম্পের বিদায় ঘণ্টা। কখনো নারী কেলেঙ্কারি কিংবা মিথ্যা কথা বলার কারণে, কখনো উল্টাপাল্টা মন্তব্য করায় তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু সেলিব্রেটি ট্রাম্প ভালো করেই জানেন, কীভাবে সংবাদের শিরোনাম হতে হয়। এমন কোনোদিন নেই যেখানে তাকে নিয়ে লেখা না হচ্ছে। হোক তা ভালো কিংবা মন্দ। সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের অব্যাহত মিথ্যাচারের অভিযোগে তার সংবাদ সম্মেলনের সরাসরি সম্প্রচার আচমকা বন্ধ করে দেয় তিনটি সংবাদমাধ্যম। এগুলো হচ্ছে এবিসি, এনবিসি, এমএসএনবিসি। প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলন করছেন এবং এর সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার মিথ্যাচার ধরিয়ে দিচ্ছেন এমন দৃশ্য বিরল। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মাননীয় সম্বোধনে অভ্যস্ত অনেকের কাছে এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু একেবারে নতুন নয়। তবে প্রচন্ড উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তুঙ্গে, তখন এ রকম কিছু যে ঘটবে, তা ভাবা কঠিন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক চ্যানেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোভিড-১৯বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার হঠাৎ বন্ধ করে দিত। তখন তাদের যুক্তি ছিল, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রচারের সুযোগ নিচ্ছেন। যে সামাজিক মাধ্যমের পস্নাটফর্মগুলোর জোরে ট্রাম্প মূলধারার গণমাধ্যম সিএনএন, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস বা ওয়াশিংটন পোস্টকে ফেক মিডিয়া অভিহিত করে তার অনুসারী এবং অন্য সবাইকে তার টুইটের অপেক্ষায় রাখতেন, সেই টুইটারও তার বক্তব্য আর অবিকৃত প্রচার করছে না। বরং তথ্য সত্য না হলে তার টুইটের নিচে বলে দিচ্ছে, কথাটি ভিত্তিহীন অথবা বিভ্রান্তিকর। টুইটার তার ১৬টি টুইটের মধ্যে ৭টিতে এ ধরনের ব্যাখ্যা বা সাবধানবাণী জুড়ে দিয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ অন্যরাও একই নীতি অনুসরণ করছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবের ভূমিকাতেও এবার নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। গত নির্বাচনে বিদেশিদের, বিশেষ করে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ ঘটেছিল এ সব পস্নাটফর্মের মাধ্যমেই। তাই এবারের নির্বাচনে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি বন্ধে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। এ জন্য অবশ্য একটি নতুন আইনও হয়েছে। ফলে যে টুইটার ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রধান বার্তাবাহী, তা এখন তার ক্রোধের লক্ষ্য হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প হলেন গত ১০০ বছরের মার্কিন ইতিহাসে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট। ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি যে সব প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে আমেরিকাকে আবার মহান রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে বলেছিলেন, তার কিছুই তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। উপরন্তু করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় তার চূড়ান্ত ব্যর্থতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিক্ষিপ্ত করেছে এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে। ট্রাম্পের সময়কালে একদিকে যেমন বিস্তার লাভ করেছে বর্ণ বৈষম্যবাদ, তেমনি বন্ধ হয়নি পুলিশ কর্তৃক বিনা বিচারে হত্যাকান্ড। এ সব হত্যাকান্ডের অসমানুপাতিক হারে বড় শিকার হলেন কৃষ্ণাঙ্গসহ অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী। ওয়াশিংটন পোস্টের হিসাব অনুযায়ী শুধু ২০১৯ সালেই বিনা বিচারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ৯৯৩ জন। অন্যদিকে গণতন্ত্রের চোখে বিশ্বকে দেখার স্বপ্ন বাইডেনের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বলেছেন, 'আমাদের গণতন্ত্রকে আমাদের কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। এখনো নয়, কখনোই নয়।' তিনি আমেরিকাকে করোনামুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভোটারদের পক্ষে টানতে বাইডেনের জনসংযোগ ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ কিন্তু অন্যদিকে অব্যাহত মিথ্যাচারের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে জনসংযোগ ছিল বিপজ্জনক ও ধ্বংসাত্মক। ট্রাম্প তার কর্মকান্ডের দ্বারা নিজ দল রিপাবলিকানদের কাছ থেকেও জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর দুই থেকে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছয় থেকে সাত বিলিয়ন রপ্তানি করে মাত্র। এটা বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র একটা খোলা অর্থনীতি। জো বাইডেন যদি এ খোলা অর্থনীতির দরজা আরও প্রসারিত করেন তবে সুযোগ আরও বাড়বে।

বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম রেমিট্যান্স আয়ের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে একটা উলেস্নখযোগ্য সংখ্যায় অভিবাসী আসছে অনিয়মিত। ট্রাম প্রশাসনের নীতি ছিল তাদের জন্য কঠোর। জো বাইডেন আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ অনিয়মিত অভিবাসীকে নিয়মিত করবেন। এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়মিতভাবে থাকা বাংলাদেশিরাও উপকৃত হবেন এবং রেমিট্যান্সেও একটা প্রভাব পড়বে।

জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে যুক্তরাষ্ট্র-চীন দ্বন্দ্বের অবসান হবে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন যৌথ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে এবং সেখানে ভারতকে পাওয়াও সহজ হবে। এর ফলে মিয়ানমারের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি এবং সংকটের স্থায়ী সমাধানও সহজ হবে। যুক্তরাষ্ট্র- চীনের যৌথ উদ্যোগ শুরু হয়ে গেলে রোহিঙ্গা সংকটের দ্রম্নত সমাধানের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হবে। এভাবে জো বাইডেনের সময়কালে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্ব দ্রম্নত এগিয়ে যাবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

সৈয়দ ফারুক হোসেন : লেখক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে