শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার

কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনেকদিন ধরেই অস্থির রয়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারের ওপর নাভিশ্বাস ওঠে। সঙ্গত কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে চলছে চরম অস্থিরতা, যা এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তথ্য মতে, এ পরিস্থিতির আগে এ পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন জানা গিয়েছিল যে, আন্তর্জাতিক বাজারে রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবৃদ্ধিতে অস্থির হয়েছিল নিত্যপণ্যের বাজার। সে তো এক যুগ আগের কথা। কিন্তু বলা দরকার, এ বছর সে রকম কোনো কারণ না থাকলেও বেসামাল হয়ে উঠেছে বাজার। সরকারের নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ভোজ্যতেলের দাম এমনটি জানা যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ নিতে হবে। এক মাসের মধ্যে এ পণ্যটির দাম কয়েকবার বাড়ার পর গত সপ্তাহেও বেড়েছে আরেক দফা এমন তথ্যও উঠে এসেছে। জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারপ্রতি ৭ টাকা। আর বোতলজাত লিটারপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক বছরের ব্যবধানে সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ আর পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।

আমরা বলতে চাই, যখন প্রায় এক মাস ধরেই ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে তখন বিষয়টি এড়ানোর সুযোগ নেই। একদিকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কেউ বলছেন গত এক মাস ধরে ডিও নিয়ে মিল থেকে ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না। অন্যদিকে মিলের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে মিলে তেল নেই। এ ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করলেও তা কার্যকর হয়নি এমন তথ্যও সামনে আসছে। এ ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, সংকট চিহ্নিত করে সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিপরীতে টিসিবি অথবা অন্য কোনো উপায়ে পণ্যের সরবরাহ বাড়ালে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে এমনটিও আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া বিকল্প উপায়ে সরবরাহ বাড়লে এমনিতেই ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত না করে ছেড়ে দেবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন আইন আছে। এগুলোও বাস্তবায়ন করার বিষয়টি উঠে আসছে। আমরা মনে করি সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে দ্রম্নত উদ্যোগ নিতে হবে।

আমলে নেওয়া দরকার, টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বছরের অধিকাংশ সময়জুড়ে খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৮২ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে। পাম অয়েলের দাম ছিল প্রতি লিটার ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে থাকে। অক্টোবরের শেষপর্যায়ে এসে খুচরায় সয়াবিন তেল ৯৭ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাম অয়েলও বিক্রি হয় প্রতি লিটার ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেলের দাম ১৬ শতাংশ এবং পাম তেলের দাম ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছে, পাইকাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়েই সিন্ডিকেট কিংবা অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। ফলে এ বিষয়গুলো আমলে নেওয়া এবং বাজার অস্থিরতার কারণ শনাক্ত করে সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে। কেননা এ পরিস্থিতিতে ভোক্তার ওপর চাপ বাড়ছে, তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা কাম্য নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে