শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ম অবমাননা কেন?

আলিসা জাহান মিম বিভাগ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ০৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

আইয়্যামে জাহেলিয়া এমন একটি যুগ, যে যুগের মানুষ ছিল জাতিতে বর্বর, বিবেক জ্ঞান বিবর্জিত, আচরণে নিষ্ঠুর, অনুসরণে ছিল দেব-দেবীর মূর্তি। ঠিক এমনি সময়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয় মুসলমানদের প্রিয় নবীজী হজরত মুহম্মদ সালস্নালস্নাহু আলাইহিস ওয়াসসালাম। যিনি অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতির সঠিক দিকনির্দেশক, সত্য ও ন্যায়ের আধার, মহৎ ও উদারতার প্রতীক এবং মহান আলস্নাহতালার একনিষ্ঠ সেবক। অতি অল্পসময়ে যিনি এ অসভ্য সমাজকে সুশীল ও ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে, তিনি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে মুসলমানদের নিষেধ করেছে, সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং কোনো মুসলমান বিধর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে না এবং অন্য ধর্মে কোনো হস্তক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। এতেই প্রকাশ পায়, ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে কতটা উদার এবং নিরপেক্ষ। উল্টোদিকে ফ্রান্স যে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার বাহক, সেই দেশের এক স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি ক্লাসে হজরত মুহম্মদের (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের অপরাধে তিনি চেচেন নামক এক তরুণের হাতে খুন হন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইসলামবিরোধী বক্তব্য প্রদান এবং মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করেছেন। এমনকি স্যামুয়েল প্যাটিকে বীর হিসেবে আখ্যায়িত এবং ফ্রান্সের জাতীয় পুরস্কার ঘোষণা প্রদানের মাধ্যমে মুসলমানকে চরম অপমান করেছেন। সাপ্তাহিক শার্লি এবদো ম্যাগাজিনে নবীজীর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের বিরোধিতা না করে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ম্যাগাজিনের তারিফ করেছেন। বসবাসকারী মুসলমান যারা এ কাজের প্রতিবাদ করেছেন তাদের প্রতিও নানাভাবে অত্যাচার এবং ইসলাম ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করেন। এরূপ কার্যাবলি কতটুকুু ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিচায়ক তা আমার বোধগম্য নয়। সেই ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই বড় এবং জটিল প্রশ্ন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এরূপ গর্হিত আচরণ সারা মুসলিম জাহানের জন্য আসলেই অপমানজনক। একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে এরকম মন্তব্য করা কতটা যৌক্তিক? তিনি নিজেকেই এভাবে পরিহাসের পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি নিজের অজ্ঞতার পরিচয় প্রদান করেছে। এরই প্রতিবাদে মুসলিম দেশগুলো একত্রিত হয়ে ফ্রান্সের পণ্য বর্জন, ব্যানার আর হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রভৃতির মাধ্যমে চাপের মুখে রয়েছেন। এভাবে নবীজীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা বা মুসলমানদের নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য প্রদান এসবের কোনো অধিকার নেই প্রেসিডেন্টের। এতে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। না জেনে কোনো ধর্মকে নিয়েই মন্তব্য করা উচিত নয়। এর মাধ্যমে তিনি তার নিচ মন-মানসিকতারই পরিচয় দিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞতারও। যা আসলে কোনোভাবেই যৌক্তিক বা গ্রহণযোগ্য নয়। আর বাকস্বাধীনতা মানে কখনোই অন্য ধর্মকে আঘাত দিয়ে বা অন্য ধর্মের প্রধানকে নিয়ে বিদ্রূপ করা নয়। সব কিছুরই একটা সীমাবদ্ধতা থাকা খুব জরুরি, আর যখন কেউ কোনো দেশের প্রধান নিযুক্ত হন। হজরত মুহম্মদ (সা.) যাকে স্বয়ং আলস্নাহতালা সবচেয়ে উচ্চতম মর্যাদা দান করেছেন সেখানে অমুসলিম হয়ে সেই নবী এবং ধর্মকে ছোট বা অপমানের সাধ্য কারোর নেই। যে করে সে আসলে নিজেকেই ছোট ও হেয় করে। মুসলমান হয়ে জন্মগ্রহণ করায় আমরা গর্বিত এবং শেষ নবী হজরত মুহম্মদের (সা.) উম্মত হতে পেরে আমরা আসলেই ভাগ্যবান। আর এর জন্য মহান আলস্নাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া। আলস্নাহ সবাইকে তা বোঝার তওফিক দান করুক। আমিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে