শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

করোনাকালে ডেঙ্গু আতঙ্ক

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
  ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
করোনাকালে ডেঙ্গু আতঙ্ক

করোনাকালে রাজধানীতে ডেঙ্গু আতঙ্ক শুরু হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে বাড়তি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অথচ এ ব্যাপারে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে (২১ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর) চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ছয়জন ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১ জনে। এ বছর একজনের মৃতু্য হয়েছে।

রাজধানীতে গত কয়েক দিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আউটডোর কিংবা চিকিৎসকের চেম্বারে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে নতুন করে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি নগরবাসীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উলেস্নখ্য, গত বছরে ডেঙ্গু জ্বরে সরকারি হিসাবে ১৭৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরও বেশি। গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এক লাখ ২২ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল, মৃতু্যর সংখ্যাও ছিল বেশি। গত মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজারের বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছিল। চিকুনগুনিয়ায়ও আক্রান্ত হয়েছিল রাজধানীবাসী। এবার সে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না বলেই আমরা মনে করি।

আমরা এও মনে করি যে, দুই সিটি করপোরেশন ও সরকার এডিস মশা নিধনে আগে থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, ফলে এবার মানুষ আক্রান্ত কম হবে। তবে ইদানীং দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন উদ্যোগ ঝিমিয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল মৌসুমভিত্তিক নয়, এডিস মশা নিধনে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, জনগণের জীবন রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

এটা সত্য, করোনার এই মহামারিকালে ডেঙ্গুর থাবা বিস্তৃত হলে মানুষের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ সৃষ্টি হবে। যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা আশা করব, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে মশা নিধনের বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে নাগরিক সচেতনতা। এটা সবাই জানে, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা। বৃষ্টির কারণে ছাদে বা ফুলের টবে পানি জমে থাকলে তা এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়। ফলে দিনের বেলায় যাদের ঘুমানোর অভ্যাস তাদের জন্য এডিস মশার শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। গত বছর ডেঙ্গুর আগ্রাসন বাড়ার কারণে জনমনে ব্যাপকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এবার দেশ করোনা সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে সঠিকভাবে মশক নিধনের বিষয়টি যাতে চাপা পড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দুই সিটি করপোরেশনের উচিত আগের মতো নতুন করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও ওষুধ ছিটানোর কাজটি ব্যাপকভাবে শুরু করা। পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা ও সতর্কতার বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে