ইরফান সেলিমের কারাদন্ড

আইন তার নিজস্ব গতিতে চলুক

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতিনিয়ত একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছেই। পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই এমন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া অনেক সময়ই খবরে উঠে আসে যে, প্রভাব বিস্তার করে অনেকেই আইনের হাত ফসকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধক। ফলে অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে এমনটি কাম্য। প্রসঙ্গত বলা দরকার, নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধরের পর সোমবার সাংসদ হাজী সেলিমের বাসায়র্ যাব অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, মাদক ও অননুমোদিত ওয়াকিটকি পাওয়ায়র্ যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ইরফান সেলিমকে মাদক সেবনের জন্য এক বছর ও অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার জন্য ছয় মাস- মোট দেড় বছর কারাদন্ড দেন। কারাগারে যাওয়ার পর কাউন্সিলর পদও হারিয়েছেন ইরফান সেলিম। তার দেহরক্ষীকেও দেওয়া হয় ছয় মাস কারাদন্ড। এছাড়া ইতোমধ্যে সাংসদপুত্রের আলোচ্য গাড়িরচালক ও অন্যতম আরোহী 'প্রটোকল' কর্মকর্তাও আটক হয়েছে। বলা দরকার, রাজধানী ঢাকার রাজপথে প্রভাব খাটানো, বিশৃঙ্খলা, দুর্ঘটনা, এমনকি প্রাণহানির মতো অঘটন ঘটলেও বেশিরভাগ ঘটনা শেষ পর্যন্ত প্রতিকারহীন রয়ে যায় বলেও অভিযোগ আছে। বিশেষ করে অনাকাঙ্ক্ষিত বিভিন্ন ঘটনার জন্য দায়ীপক্ষ যদি হয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে এবারের ঘটনার ক্ষেত্রে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করার যে বিষয়গুলো খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে তা ইতিবাচক। তথ্য মতে, এবারের ঘটনায়, গাড়িটি ঢাকা-৭ আসনের বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের। তিনি নিজে গাড়িতে না থাকলেও তার ছেলে ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইরফান সেলিম ছিলেন। সঙ্গে ছিল তার দেহরক্ষীসহ আরও কয়েকজন কর্মচারী। রোববারের এ ঘটনায়, ধাক্কা দেওয়া গাড়িটি ছিল সংসদ সদস্যের স্টিকারযুক্ত। আমরা বলতে চাই, অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। বলা দরকার, মোটরসাইকেল আরোহী ছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তা। এই ঘটনার পর দ্রম্নত সময়ে গাড়িটি জব্দ, থানায় মামলা, অভিযান এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দোষী ব্যক্তিদের দন্ড প্রদান- এগুলো যেমন ইতিবাচক, তেমনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত জরুরি। ফলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীর ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি প্রত্যাশা করি। কেননা, এমন বিষয় বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে যে, অনেক ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়ে অপরাধীরাই থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। উলেস্নখ করা দরকার, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সোমবার বলেছিলেন, সমাজের যে শ্রেণির মানুষই অপরাধ করুক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরাও চাই, আইন চলুক নিজস্ব গতিতে। আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এটা অত্যন্ত জরুরি। মনে রাখা দরকার যে, বিবাদী ও বাদী যেই হোক না কেন, প্রত্যেকেরই রয়েছে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার। আমরা প্রত্যাশা করি, এবারের আলোচ্য ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক। এছাড়া সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উদ্যোগী দরকার যে, প্রতিকার বা বিচারপ্রার্থী যে কোনো নাগরিকের ক্ষেত্রেই যেন দ্রম্নত ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়। কেননা, এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে- এমন বিষয় যেমন বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় আসে, তেমনি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা প্রভাব বিস্তার করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে এমন বিষয়ও বহুল আলোচিত। সঙ্গত কারণেই অপরাধী যেই হোক, আইনের আওতায় আনা এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। যার ফলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে এমনটি মনে করা সঙ্গত। আর অপরাধীরা পার পেয়ে গেলে আরো বেশি অপরাধপ্রবণ হতে পারে এমন আশঙ্কাও অমূলক নয়। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারাদেশেই প্রতিনিয়ত একের পর এক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাচ্ছে না এমন বিষয়ও উঠে আসে। আমরা মনে করি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এবারের ঘটনাটিকে আমলে নিয়ে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখা। যে কোনো ধরনের অপরাধমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হোক এমনটি কাম্য।