পাঠক মত

সেশনজট কাটিয়ে ওঠার উপায়!

প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

ইমরান ইমন শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সব সৃষ্টিরই বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। মহামারি করোনাও আজীবন লেগে থাকবে না, এরও একদিন বিনাশ ঘটবে। হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই না হয় কয়েক বছরের মধ্যেই। করোনা জর্জরিত পৃথিবী আর করোনামুক্ত পৃথিবী তখন একই থাকবে না। পৃথিবীজুড়ে সব ক্ষেত্রে, সব মানুষের মধ্য দেখা যাবে কিছু পরিবর্তন। পৃথিবীর সর্ব পরিসরে এতদিনের বিশাল একটা ধাক্কার প্রভাব থেকেই যাবে। অন্যসব খাতের মতো আমাদের শিক্ষা খাতেও করোনা দিয়েছে বড় এক ধাক্কা। করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রথম থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ফলে এতদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম। যদিও এখন কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে যেতে পারছে না। করোনা পরবর্তী শিক্ষা খাতের এ ধাক্কা বা ভয়াল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হবে। তখন শিক্ষা খাতের পুনর্গঠনে দিতে হবে বিশেষ নজর। চালু করতে হবে নতুন নিয়মকানুন, প্রণয়ন করতে হবে নতুন নীতিমালা। করোনা তান্ডবের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে সেশন জট নামক ভয়াবহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষা খাতে তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেশন জট একটা ভয়াবহ সমস্যা। দেখা যায়- সেশন জটের কারণে চার বছরের অনার্স শেষ করতে লেগে যায় ৬-৭ বছর। যা একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার ও চাকরি জীবনে অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটের কবলে পড়তে হয়। আগের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের সেই ভয়াবহতা তেমন একটা নেই। তবে সেশনজট একেবারেই বন্ধ হয়নি ব্যাপারটা এমনও নয়। এখনো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সেশনজটের রীতি রয়ে গেছে। সম্প্রতি মহামারি করোনার প্রভাবে সেই মার্চ থেকে স্থবির হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষাবর্ষ শেষের দিকে অথচ তেমন ক্লাস, কোর্স সম্পন্ন, পরীক্ষা নেওয়া কিছুই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই সেশনজট নামক এ ভয়াবহ ব্যাধি রোধ করতে বা কমিয়ে আনতে আমাদের ছাত্র-শিক্ষক উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। উভয়কেই হতে হবে আন্তরিক। এ জন্য কোর্সভিত্তিক ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন- আগে সপ্তাহে একটা কোর্সের ক্লাস দুটো থাকলে, এখন সেখানে চারটা করে ক্লাস দিতে হবে। কোর্সের ক্লাস তিনটা থাকলে সেখানে ছয়টা করে দিতে হবে। এভাবে সব কোর্সে দ্বিগুণের নিয়ম চালু করতে হবে। প্রয়োজন হলে আরও বেশি করে দিতে হবে। এ জন্য দরকার হলে ছুটির দিনগুলোতে (শুক্রবার, শনিবার) এবং বন্ধের বিশেষ দিনগুলোতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। সময়মতো কোর্সভিত্তিক পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিতে হবে এবং যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। আমি আশা করি এ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় আবারও প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারি। তখন সেশনজট নামক ভয়াবহ ব্যাধির হাত থেকে অনেকাংশে সেরে ওঠা সম্ভব হবে।