গণধর্ষণের শিকার ছাত্রী

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে। বিশেষ করে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এ ধরনের অপরাধ বাড়ার মূল কারণ। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির বিষয় স্পষ্ট দিক হলো স্থানীয় প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রমাগত ব্যর্থতা। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, রংপুরের হারাগাছ এলাকায় নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজুর বিরুদ্ধে রোববার রাতে হারাগাছ থানায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ডিবির এএসআই রায়হানুল ইসলামকে রোববার রাতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই কিশোরীকে অসুস্থ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় পুলিশ অনেক আগে থেকেই। ১৯৯৪ সালে দিনাজপুরের দশমাইলে পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা এখনো গভীর ক্ষত হয়ে আছে। আমরা কোনোভাবেই সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি না। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। আমরা এই ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। মনে রাখতে হবে সামাজিক অস্থিরতা ও বিচারহীনতার কারণেই যৌন সহিংসতা, নির্যাতন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও হয়রানি বাড়ছে। অপরাধ করে নিষ্কৃতি পাওয়ার একটি সংস্কৃতি দেশে চালু রয়েছে। যদিও সরকার এ ব্যাপারে বেশ কঠোর। এর পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয়ও একটা কারণ। সব ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় আসে না। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার ভয়াবহতা অনেক বেশি। রক্ষণশীল সমাজ হিসেবে বাংলাদেশের নারীদের লোকলজ্জা, সামাজিক মর্যাদা, মামলা করে হয়রানি এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অসংখ্য ঘটনা চাপা পড়ে যাচ্ছে। ফলে অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না। উপরন্তু অপরাধে উৎসাহিত হচ্ছে। যদিও সরকার সম্প্রতি আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্য দন্ড করেছে। \হএটা সত্য, সমাজের একশ্রেণির বর্বর পাষন্ড মানুষের হাতে অনেকের জীবনই বিপন্ন হয়ে পড়ছে, অবলীলায় জীবন চলে যাচ্ছে। এমনকি শিশুর জীবনও চলে যাচ্ছে। সমাজে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা ভাবতে বিস্ময় জাগে, কোনোভাবেই আমাদের সমাজ যেন সুস্থতার দিকে অগ্রসর হতে পারছে না। অবক্ষয় যেমন আমাদের সমাজকে দিন দিন গ্রাস করছে। ইদানীং নারী অবমাননা চরম আকার ধারণ করেছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার কারণেই মূলত এমনটি হচ্ছে। যেভাবেই হোক, সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা সমাজকে পদে পদে কলুষিত করছে, সমাজকে ভারসাম্যহীন ও দূষিত করে তুলছে, সমাজে নারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন করছে- তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ জন্য ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলত শান্তিই কেবল পারে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ থেকে মানুষকে নিবৃত করতে। তবে সবার আগে জরুরি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। নারীকে নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। কেবল তা হলেই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হতে পারে।