বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত; বস্নু ইকোনমি

হাবিবা খাতুন শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
  ২৬ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি সমুদ্র সম্পদনির্ভর, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনীতির ধারণা দেন। পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ বিস্তৃত জলরাশিতে বিচিত্র সম্পদ ব্যবহার করে ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন। বিশ্বের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বস্নু ইকোনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য রয়েছে এই অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর এক সুবর্ণ সুযোগ। কেননা ভৌগোলিকভাবে আমাদের দেশের অবস্থান অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার বঙ্গোপসাগরের তীরে। এ সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে, অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে। এ সম্ভাবনাকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানোর জন্য দক্ষ জনবল, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি, গভীর-অগভীর সমুদ্রে প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ আহরণে গবেষণা ও জরিপ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, বিদেশি দক্ষ কোম্পানির সাহায্য এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রের মালিক। আর এ নীল জলরাশির মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিচিত্র সামুদ্রিক সম্পদ। তেল, গ্যাস, মূল্যবান বালু, ইউরেনিয়াম, মোনাজাইট, জিরকন, শামুক, ঝিনুক, মাছ, অক্টোপাস, হাঙ্গর আরও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ। বঙ্গোপসাগর হচ্ছে মৎস্য সম্পদের বিশাল ভান্ডার। এখানে প্রায় ৫০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। আরও রয়েছে ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক। এ ছাড়া রয়েছে টুনা মাছের মতো দামি ও সুস্বাদু মাছ যার রয়েছে প্রচুর আন্তর্জাতিক চাহিদা। 'সেভ আওয়ার সি'র তথ্য মতে, সমুদ্র থেকে শুধু মাছ রপ্তানি করে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) মতে, ২০২২ সালের মধ্যে যে চারটি দেশ মৎস্য সম্পদে বিপুল পরিমাণ সাফল্য অর্জন করবে তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। ২০১৭-১৮ সালে সারা দেশে উৎপাদিত মোট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার মাছের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ ৬০ লাখ মেট্রিক টন যদিও ৮০ লাখ টন মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে। ৬০০ কিলোমিটার সমুদ্রসীমার মধ্যে মাছ ধরার সীমা মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি ও প্রযুক্তির অভাবে এ দেশের জেলেরা মাত্র ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাছ ধরতে পারে। ফলে বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ থাকার পরেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ কাজে লাগাতে হবে তবে এ মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

পর্যটনশিল্প আয়ের এক বৃহৎ উৎস। আর আমাদের রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত, পার্বত্য চট্টগ্রামের মন মাতানো সৌন্দর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ দেশের নানা দর্শনীয় স্থান। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে আরও আকর্ষণীয় ও বিমোহিত করে তুলতে হবে, পর্যটকদের থাকার স্থান চমৎকারভাবে গড়ে তুলতে হবে, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তবেই ঢল নামবে পর্যটকদের, অর্থনীতি পাবে বহুমাত্রিকতা, কমবে বেকারত্ব, বাড়বে কর্মসংস্থান।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিলিয়ন ডলার শিল্প হলো নৌযান নির্মাণ শিল্প। এ সুযোগ লুফে নিয়ে সরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশীয় জাহাজ বহর সমৃদ্ধ করতে পারলে রাজস্বে মোটা অংকের আয় যুক্ত করা সম্ভব। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০ নীল জলরাশির সম্পদে অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে যাতে গুরুত্ব পাবে সমুদ্র সম্পদ ব্যবস্থাপনা। এ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে হবে, আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে, পরিকল্পিতভাবে সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করতে হবে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সাহায্য নিতে হবে যদিও ইতিমধ্যে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে তবে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে তৎপর হতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে পারলে ১২ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব যদিও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সমন্বিত নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। ২০১২ সালে সমুদ্র নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হলেও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত গভীর-অগভীর সমুদ্র সম্পদ অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে মিয়ানমার, ভারত সমুদ্রের তেল, গ্যাস উত্তোলন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। এ দেশের সীমিত পর্যায়ে তেল, গ্যাস আহরণ শুরু হয়েছে যা বঙ্গোপসাগরে অফুরন্ত তেল ও গ্যাস ভান্ডারের তুলনায় নিতান্ত স্বল্প পরিসরে। এ অবস্থার উন্নতি করতে হবে, পরিকল্পিতভাবে প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি কোম্পানি সাহায্য নিয়ে তেল, গ্যাস উত্তোলন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে হবে যার ফলে বাড়বে রাজস্ব, ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতির মোড়। তবেই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা ও ভিশন-২০৪১ অর্জন সম্ভব হবে সুনীল অর্থনীতির মাধ্যমে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116486 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1