বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবপাচার রোধে কঠোর হতে হবে

নতুনধারা
  ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

সরকারের নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানবপাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। সাগরপথে থাইল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়ায় মানবপাচার হচ্ছে। মানবপাচার হচ্ছে লিবিয়ায়। লিবিয়া থেকে ইউরোপে যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে বিভিন্ন দেশের ৩৫ জনকে নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। ২২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ জন। যারা উদ্ধার হয়েছেন তাদের মধ্যে পাঁচ দেশের নাগরিক রয়েছে; বাংলাদেশ, মিশর, সিরিয়া, সোমালিয়া এবং ঘানা। এর আগে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জন অভিবাসীকে হত্যা করা হয়। হত্যার মূল হোতা খালেদ আল মিশাই ঘারিয়ানে এক ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন।

উলেস্নখ্য, লিবিয়ার অপহরণকারীদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশ ও সুদানের অভিবাসনপ্রত্যাশীরা স্থানীয় এক অপহরণকারীকে মেরে ফেলে। এর জেরে পরদিন মিলিশিয়ারা নির্মমভাবে বাংলাদেশের ২৬ জন অভিবাসীকে হত্যা করে। আহত হন আরও ১১ জন বাংলাদেশি। একই হামলায় লিবিয়ার মিলিশিয়াদের হাতে প্রাণ হারান আরও চার সুদানি নাগরিক।

ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করা বেশ কিছু বাংলাদেশি এখনো লিবিয়ার মানবপাচারকারীদের হাতে জিম্মি। তারা লিবিয়ার দুর্গম মরু এলাকায় রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিভিন্ন সময় এ ধরনের তথ্য আসে। এখনো কত বাংলাদেশি আটক, এটা নিশ্চিতভাবে জানা নেই। যেহেতু দুর্গম মরু এলাকা দিয়ে পাচারকারীরা লোকজনকে নিয়ে যায়, তাই এ নিয়ে নিশ্চিতভাবে তথ্য জানতে সময় লাগে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ট্র্যাভেল এজেন্সি ও রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কর্মচারী ও দালালরা ওই পাচারকারী চক্রে জড়িত। তারা ভালো বেতনের চাকরির 'প্রলোভন দেখিয়ে' বিভিন্ন অংকের টাকার বিনিময়ে ভিকটিমদের লিবিয়ায় পাচার করে কম টাকায় কঠিন শ্রমে নিয়োজিত করত। লিবিয়ায় পাচারের পর বাংলাদেশি ওই দলটিকে এক জায়গায় জড়ো করে আটকে রাখা হয়। তারপর মিজদাহে 'লিবিয়ানসন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সহযোগিতায় অপহরণের নাটক সাজিয়ে' বাড়তি টাকা দাবি করা হয়। টাকা আদায়ের জন্য ভিকটিমদের ওপর নির্যাতন চালায় পাচারকারীরা। পরে সেই অডিও এবং ছবি বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে আট থেকে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই ধরনের ঘটনা কেবল লিবিয়ায় নয়, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়ায়ও ঘটছে কোনো রকম প্রতিকারহীনভাবে।

মানবপাচার বাংলাদেশের অন্যতম শিরঃপীড়ায় পরিণত হয়েছে। জল, স্থল ও আকাশপথে প্রতিদিন মানবপাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্তও। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানবপাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন।

আমরা মনে করি, মানবপাচার বন্ধ করতে হলে কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, পাচার বন্ধ করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113345 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1