৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই ইতিবাচক বিষয়কে সামনে আনে। কেননা, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির অর্থই হলো দেশের অথর্নীতির জন্য তা আশাব্যঞ্জক। বাংলাদেশের অথর্নীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, করোনাভাইরাস মহামারি চললেও গতি হারায়নি রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। আর রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় রোববার রিজার্ভ ফের ৩৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। মহামারির প্রভাবে গত এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমলেও তারপর থেকে রেমিট্যান্সে চলছে ঊর্ধ্বগতির ধারা। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সৃষ্ট ধারা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ জারি রাখতে হবে। তথ্য মতে, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে প্রায় ১৪৩ কোটি ৪৪ লাখ (১.৪৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এই অঙ্ক গত বছরের সেপ্টেম্বরের পুরো মাসের প্রায় সমান। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য যে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ দিনে ৭৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। অর্থাৎ সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আড়াই মাসেই (১ জুলাই থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর) ৫৯৯ কোটি ৬৬ লাখ (৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৯ শতাংশ বেশি। এছাড়া অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ছিল মাসের হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আমরা বলতে চাই, যখন করোনার প্রভাবে নানাভাবেই বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তখন মহামারিকালে আড়াই মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক। বলা দরকার, রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। কারণ সরকার এ ক্ষেত্রে প্রণোদনার মাধ্যমে পাঠানোর খরচ দিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া রেমিট্যান্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। আর রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বেড়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন অর্থমন্ত্রী। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে কাজ করা। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নানা সময়ে এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে- দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় দ্বিগুণ করা যায়। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জারি রাখা এবং দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে এ ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়া জরুরি। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে এবং দক্ষ জনশক্তি যত বেশি বাড়বে, ততই নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে। আর এর ফলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে যেমন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে তেমনিভাবে কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও তা হবে আশাব্যঞ্জক। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার ও নীতিনির্ধারকরা জনশক্তি রপ্তানি এবং শ্রমবাজার বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সময়েই নানা ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনিভাবে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্সও দেশে এসেছে। আমরা মনে করি, প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ইতিবাচক এ ধারা অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যে কোনো সংকট সামনে এলে তাও সুষ্ঠুভাবে সমাধান করতে হবে। সর্বোপরি বলতে চাই, করোনাভাইরাস মহামারি চললেও গতি হারায়নি রেমিট্যান্স এই বিষয়টি যেমন ইতিবাচক, তেমনি চলতি অর্থবছরের আড়াই মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা এটিও সন্তোষজনক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। ফলে অগ্রগতির এই ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করতে হবে। এজন্য শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ওপর জোর দিয়ে নতুন শ্রমবাজারের দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।