বসন্তের দারপ্রান্তের রৌদ্রোজ্জ্বল একটি দিনই ধার্য করা হয়েছিল প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের বনভোজনের উদ্দেশ্যে। কুমিলস্নার ঐতিহাসিক স্থান কোটবাড়ী পরিদর্শনে বিভাগের সবাইকে একত্রিত করার মাধ্যমে সুন্দর একটি দিন কাটানোর জন্য প্রায় ২০ দিন আগে থেকেই বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। অবশেষে ১২ ফেব্রম্নয়ারি সকাল সাড়ে ৭টায় জবি ক্যাম্পাস থেকেই বাসযাত্রার সূচনা হয় কুমিলস্নার উদ্দেশে। নাস্তা পানি শেষে যখন সবাই গানে মেতে উঠলো প্রকৃত অর্থে তখনই শুরু হলো সেই দিনটির আমেজ। সবাই আমরা ভুলে গেলাম পরীক্ষা, পড়ালেখা সিজিপিএ, ক্যারিয়ার কিংবা যে কোনো দুশ্চিন্তা বা উৎকণ্ঠার বিষয়বস্তু; শুধু মনে হলো, উদযাপন করার এই তো সময়! কোটবাড়ী পৌঁছানোর পর প্রথমেই দর্শন হলো বৌদ্ধ বিহারের। খালি পায়ে প্রবেশের মাধ্যমে অপরূপ শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতা নিয়ে পুরো জায়গা ঘুরে মনে হলো অনন্য এক স্থান পরিদর্শনের সাক্ষী হলাম আমরা। এরপর শালবন বিহার- যা প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরকম খোলা আকাশের নিচে ও মুক্ত বাতাসে সবাই যেন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। অসংখ্য ছবি, স্মৃতি ও মুগ্ধতা নিয়ে পরিদর্শন শেষে সবার ঠাঁই হলো কাশবন রিসোর্টে।
ছেলেদের মোরগ লড়াই, মেয়েদের মিউজিক্যাল চেয়ার ও শিক্ষকদের রিড মাই লিপস্? গেইম দিয়ে শেষ হলো 'ধুলো নয় শুধু খেলা'র আয়জন। আর দুপুরের ভরপেট খাওয়া-দাওয়া শেষ হলো কুমিলস্নার বিখ্যাত মিষ্টান্ন রসমালাই দিয়ে। বিভাগের বড় ভাই ও আপুদের মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা এবং বিভাগের চেয়ারম্যান ও সঙ্গীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসার ম্যামের শ্রম্নতিমধুর গান দিয়ে শুরু হলো দিনটির অন্যতম আকর্ষণ মঞ্চ আয়োজনগুলো। একে একে নাচ, গান, গজল, বাংলা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, স্ট্যান্ডাপ কমেডি, গ্রম্নপ পারফরম্যান্সসহ আরো ভিন্ন অনেক কিছুর আয়োজন যেন সবাইকে অর্ধেক দিনের ক্লান্তি ভুলে আবারো আমেজে মেতে উঠার আনন্দ জুগিয়েছিল। আর শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিয়েছিল মঞ্চে প্রত্যেক শিক্ষকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। মঞ্চে ট্রেজারার দিপায়ন স্যারের ভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন যেন ছিল নতুন এক চমক। সর্বোপরি বলতেই হয়, দর্শক মনোরঞ্জনের পাশাপাশি দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলার জন্যও মঞ্চ আয়োজকদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি।
সব খেলার পুরস্কার বিতরণীর পাশাপাশি ভাগ্যখেলার পুরস্কার ঘোষণা নিয়ে যেন সবারই এক অধীর আগ্রহ। র?্যাফেল ড্র- যার প্রথম উপহার স্মার্টফোনসহ ছিল ২০টি আকর্ষণীয় উপহারের ব্যবস্থা। ভাগ্য ক্রমে উপহার কেউ একাধিক পেয়েছিল আবার কেউ একটিও পায়নি- তবে যা সবারই প্রাপ্তি ছিল তা হলো স্মৃতির পাতায় নতুন একটি অধ্যায়ের। বনভোজনের অধ্যায়টি যেহেতু ছিল বসন্তের দারপ্রান্তে- তাই ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসন্তকে আমরা সবাই বরণ করে নেই মঞ্চ আয়োজনের একাংশের মাধ্যমে এবং সমাপ্তি ঘটতে থাকে দিনটির অপরাহ্নে। বেলা বয়ে যখন সূর্যাস্ত হলো পাখিদের মতো আমরাও নীড়ে ফেরার উদ্দেশ যাত্রা শুরু করলাম। ভেবেছিলাম দিনটির সমাপ্তি বোধহয় এখানেই- তবে ঢাকার তীব্র যানজটে সবাই একত্রিত থাকার সময়টা বেশ বাড়লো আর যুক্ত হলো আরো কিছু মুহূর্ত। অবশেষে সবাই ফিরলাম কুমিলস্নার কোটবাড়ী থেকে সঙ্গে নিয়ে অসংখ্য স্মৃতি।