বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

পাবিপ্রবির আন্তঃক্লাব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট

আলফি সানি
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পাবিপ্রবির আন্তঃক্লাব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট
পাবিপ্রবির আন্তঃক্লাব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট

আকাশের চাঁদ আর তারার আলো মিশে ক্যাম্পাসে এক আলোকিত পরিবেশ তৈরি করেছিল। যেন প্রতিটি কোণায় সুরের এক মায়াবী আবহ। এই আবহেই শুরু হয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত প্রথম আন্তঃক্লাব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট।

প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন ক্লাবের শিক্ষার্থীদের মন যেমন উচ্ছ্বসিত করেছিল, তেমনি শিক্ষকদের অংশগ্রহণ পুরো আয়োজনকে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬:৩০-এ শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের্ যাকেট আর কর্কের ছন্দে তৈরি হয় এক অসাধারণ সুরেলা পরিবেশ।

টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টা। তাদের আন্তরিক বক্তব্যে উঠে আসে খেলাধুলার গুরুত্ব। তারা বলেন, 'খেলা শুধু বিনোদন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ধরনের আয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা ও একতার বন্ধন তৈরিতে সহায়ক হবে।'

এছাড়া, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা খেলা দেখতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন এবং আনন্দ ভাগাভাগির মুহূর্তগুলো ছিল সত্যিই অসাধারণ।

টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে দুটি গ্রম্নপে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি গ্রম্নপ থেকেই সেরা দুটি দল সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়। প্রতিটি ম্যাচেই খেলোয়াড়দের প্রতিভা, দক্ষতা এবং তাদের উদ্দীপনার ছাপ ছিল স্পষ্ট।

প্রতিটি গ্রম্নপের দল নিজেদের শক্তি ও কৌশল দেখানোর চেষ্টা করে। শুরুর ম্যাচগুলো থেকেই উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। প্রতিটি পয়েন্ট অর্জনের জন্য খেলোয়াড়দের লড়াই পুরো দর্শকদের মুগ্ধ করেছিল। গ্রম্নপ পর্ব শেষে সেমিফাইনালে উত্তীর্ণ দলগুলো ছিল পুরোপুরি প্রস্তুত। সেমিফাইনালের ম্যাচগুলোতে প্রতিটি শটেই লক্ষ্য ছিল ফাইনালে পৌঁছানোর। খেলোয়াড়দের কৌশল, দক্ষতা এবং মানসিক দৃঢ়তা এই পর্বকে আরও স্মরণীয় করে তোলে।

ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল অভিজ্ঞতা এবং উদ্যম। একদিকে শিক্ষকদের দল, যারা অভিজ্ঞতা আর কৌশলে পরিপূর্ণ, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দল, যাদের মধ্যে ছিল তারুণ্যের উচ্ছ্বাস। উভয় দলের খেলা দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হন। প্রতিটি পয়েন্ট অর্জনের জন্য খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টা পুরো পরিবেশকে রোমাঞ্চকর করে তোলে। অবশেষে, শিক্ষকদের দল তাদের অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে শিরোপা জিতে নেয়। তাদের জয় ছিল কৌশল এবং অধ্যবসায়ের এক অনন্য উদাহরণ।

ফাইনালের পরপরই শুরু হয় এক প্রাণবন্ত আড্ডা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একত্রে গল্প করেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এই আড্ডায় উঠে আসে খেলাধুলার গুরুত্ব, ক্যাম্পাস জীবনের রঙিন মুহূর্ত এবং ভবিষ্যতে এরকম আয়োজনের পরিকল্পনা।

প্রেস ক্লাবের সদস্য আহসান হাবিব আতিক বলেন, 'এই টুর্নামেন্ট আমাদের জন্য শুধু একটি খেলা ছিল না, বরং এটি ছিল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মধ্যে একটি চমৎকার মেলবন্ধনের সুযোগ। কোর্টের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য রোমাঞ্চকর এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা শুধু শারীরিক দক্ষতার প্রদর্শন করিনি, বরং আমাদের বন্ধুত্ব এবং দলগত মানসিকতাও আরও দৃঢ় করেছি। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত।'

আরেক শিক্ষার্থী বি এম মিকাইল বলেন, 'এই টুর্নামেন্ট ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা সবকিছুই ছিল দারুণ রোমাঞ্চকর। আমরা সবাই মিলে যে পরিবেশ তৈরি করেছিলাম, তা কেবল খেলাধুলার আনন্দ নয়, বরং একটি পরিবার হয়ে ওঠার অনুভূতি জাগিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিত- যাতে ক্যাম্পাসজীবন আরও রঙিন হয়ে ওঠে।'

পাবিপ্রবির প্রথম আন্তঃক্লাব ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট শুধু একটি খেলার আয়োজন ছিল না; এটি এই ক্লাবের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল মানসিক প্রশান্তি এবং এক নতুন অভিজ্ঞতা।

এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্দীপনায় ভরপুর। তারা শিখেছে কীভাবে দলগত চেতনা নিয়ে কাজ করতে হয় এবং একে অপরকে সহযোগিতা করতে হয়। শিক্ষকদের অংশগ্রহণ শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এই আয়োজন শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা আরও বাড়িয়েছে এবং একটি মজবুত সম্পর্ক তৈরি করেছে।

এই আয়োজনের সাফল্য দেখে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এমন আয়োজনের পরিকল্পনা করতে চায় ক্লাবের কর্তৃপক্ষরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং প্রেস ক্লাব একত্রে কাজ করে আরও নতুন উদ্যোগ গ্রহণের পথে এগিয়ে যাবে।

পাবিপ্রবির ইতিহাসে এই আয়োজন একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়; ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার চেতনা গড়ে তোলার এবং শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার এক উপলক্ষ্য।

এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের মনোজগতে নতুন আলোর দিশা জ্বালিয়েছে। ভবিষ্যতে এমন আরও আয়োজনে ক্যাম্পাস আলোকিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার। শীতের এই সন্ধ্যার স্মৃতি,র্ যাকেটের ছন্দ, আর কর্কের উড়াউড়ি চিরকাল রয়ে যাবে পাবিপ্রবির প্রতিটি শিক্ষার্থীর হৃদয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে