জীবন একটি যাত্রা : প্রতিটি বাধাই
নতুন সূর্যোদয়ের ইঙ্গিত
মো. আবু রায়হান
প্রভাষক, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ
জীবন নানা সমস্যার সমাধানের এক সমষ্টি। এই সমস্যাগুলো কখনো সরল, কখনো জটিল। একাডেমিক জীবনের পরীক্ষার মতো, জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমাদের নতুন অভিজ্ঞতা দেয়। সমস্যাহীন জীবন একঘেয়ে, ঠিক যেমন একই খাবার প্রতিদিন খেতে ভালো লাগে না। তবে, অনেকেই এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য আত্মহত্যার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত নেয়। আত্মহত্যার পেছনে থাকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নানা কারণ। তবে, জীবন সম্পর্কে ভুল ধারণা এর প্রধান কারণ। প্রজন্ম বিবাদ, পারিবারিক সম্পর্কের টানাপড়েন, সামাজিক কলঙ্ক এবং বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলো মানুষকে হতাশায় ফেলে। ২০২৩ সালের একটি সংবাদে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বেকারত্বের কারণে আত্মহত্যা করেছিলেন। এর মূল কারণ ছিল দুটি- চাকরির বাজারের সংকোচন এবং জীবনমুখী দক্ষতার অভাব। পারিবারিক ও সামাজিক প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার হতাশা থেকে এই দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোরআনে বলা হয়েছে, প্রতিটি সমস্যার সঙ্গেই রয়েছে প্রশান্তি। তাই জীবন থেকে পালিয়ে না গিয়ে সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করা এবং সমস্যাগুলোকেও জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা
কারণ ও প্রতিকার
শান্তা ইসলাম
প্রভাষক, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
বর্তমানে আত্মহত্যা একটি জটিল সামাজিক সমস্যা, বিশেষত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর হার উদ্বেগজনক। সমাজের শিক্ষিত অংশের এই প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগের। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক প্রত্যাশার চাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জটিলতা, আর্থিক সংকট ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক শিক্ষার্থী পরিবার থেকে দূরে থাকায় তাদের সমস্যাগুলো কাউকে জানাতে পারে না। এ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তানদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের সমস্যা পরিবার, বন্ধু বা বিশ্বস্ত শিক্ষকদের সঙ্গেও শেয়ার করা। মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। সুখ-দুঃখ নিয়েই জীবন, তাই আশাবাদী থাকতে হবে।
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকুন
সুন্দর ভবিষ্যৎকে ঘিরে
শাকিল আহমেদ
শিক্ষার্থী, ৪র্থ বর্ষ, ফলিত গণিত বিভাগ
আত্মহত্যা একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসেবে আমাদের সামনে উঠে এসেছে। অনেকে এটিকে সাহসের প্রতীক মনে করলেও, এটি আসলে জীবনের বাস্তবতা মেনে নিতে না পারার ব্যর্থতা প্রকাশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩,০০০ থেকে ৬৮,০০০ মানুষ আত্মহত্যা করে- যা আমাদের সমাজের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ। সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার, পারিবারিক সমস্যা, মানসিক চাপ এবং হতাশা এর প্রধান কারণ। ইসলামিক দৃষ্টিকোণে, আলস্নাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, 'তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আলস্নাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু (সূরা আন নিসা-২৯)'। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, কাউন্সেলিং সেবা, মানসিক চাপ মোকাবিলার দক্ষতা এবং আধ্যাত্মিক চর্চা। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত জীবনকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার মাধ্যমে সার্থক করে তোলা।
জীবনের প্রতি এক
অসহায় আত্মসমর্পণ
রোজা আজাদ
শিক্ষার্থী, ৩য় বর্ষ
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ
'মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই'- আত্মহত্যা যেন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যের এই লাইনকে তুচ্ছ করে জীবনের প্রতি এ যেন এক অসহায় আত্মসমর্পণ। আত্মহত্যা একটি জটিল সামাজিক সংকট- যা শুধু ব্যক্তি নয়, সমগ্র পরিবার ও সমাজকে প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর বহু মানুষ এভাবে জীবন শেষ করে। বর্তমানে আত্মহত্যার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মানসিক অবসাদ, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক সংকট এবং সামাজিক চাপ। বিশেষত যুব সমাজে পড়াশোনার চাপ, সম্পর্কের টানাপড়েন এবং হয়রানির কারণে এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়াও এই সমস্যাকে জটিল করে তুলছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি হলো সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সহজলভ্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা সম্ভব।