শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

তরুণ লেখকদের সমন্বয়ে উৎসব

ইকরাম আকাশ
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
তরুণ লেখকদের সমন্বয়ে উৎসব
তরুণ লেখকদের সমন্বয়ে উৎসব

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার চট্টগ্রামের সদস্যদের নিয়ে পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তরুণ লেখক-লেখিকারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামের সিআরবি'র শিরিষতলায় অনেকেই পিঠা, কেক, ঝাল নাস্তা নিয়ে জমায়েত হতে থাকেন। আমন্ত্রিত অতিথিরা রেদোয়ান আহমদ ও জুবায়ের আহমেদের আগমনের পর বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. রায়হান উদ্দিন ছিদ্দিকী অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্য দিয়ে পিঠা উৎসবের সূচনা করেন এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ জানান। রেদোয়ান আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠা উৎসবে আসা প্রসঙ্গে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, 'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের পক্ষে প্রাঙ্গণের যে কোনো স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা সহজ- তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম'। এছাড়াও জানান 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের সাহিত্যচর্চা ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাবে একত্রিত হয়ে এমন আয়োজন প্রশংসার দাবিদার'। জুবায়ের আহমেদ জানান 'ছোট্ট পরিসরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখক ফোরামের পথচলা শুরু হলেও বর্তমানে পুরো বাংলাদেশে এটি বিস্তৃত' এই ফোরামের লক্ষ্য সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি, মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই করার মানসিকতা এবং দেশ ও জাতির উন্নতির সোপান হিসেবে নিজেকে উত্থাপন করা। যাতে সবাই নিজেকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। সভাপতি ও অতিথিদের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এবং সঞ্চালনার দায়িত্বভার পান সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরমান রাকিব।

এই আয়োজনে সবাই বিস্মিত হয়েছিলেন কারণ সবাইকে চিরকুটের কিছু অংশে একটা নাম্বার লিখে দেওয়া হয়, দু'জন একই নাম্বার পেয়ে প্রতিযোগিতায় সুযোগ পান এবং জানানো হয়, যে বিজয়ী হবে তার জন্য থাকছে উপহার; বিষয়টি কেমন বিস্ময়ের জন্ম দেয় এবং সবাই উন্মুখ হয়ে থাকেন! অতঃপর জানানো হয়- সায়মা জাহান প্রতিযোগিতাটিতে জয়লাভ করেন। ওই পর্ব শেষেই জানানো হয় আরও একটি প্রতিযোগিতা হবে এবং কেউ কাউকে বলতে পারবে না তারা কীসের চিরকুট পেয়েছেন ! এই প্রতিযোগিতায় দু'জন মেয়ে এবং দু'জন ছেলেকে নির্বাচন করা হয় এবং ভাগ্যের লটারি অনুসারে প্রতিযোগিতায় উন্মোচিত হয় অভিনয়, গান, আবৃত্তি এবং ডায়লগ। যে, যেই চিরকুটটি তুলেছেন তা অনুযায়ী সবার সামনেই তাদের কলাকৌশল দেখাতে হবে। অতঃপর নিরাশার চিত্তে দুরুদুরু কম্পনে প্রথমেই পদার্পণের জন্য আসলেন 'ইকরাম আকাশ' যিনি গান পরিবেশন করবেন, উপায়ন্তর না দেখে চোখ বন্ধ করে একটি গান গাওয়া শুরু করলে তৎক্ষণাৎ সবার প্রাণবন্ত উৎসাহে গানটির সুন্দর সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তী প্রতিযোগী 'মিজানুর রহমান' বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। তৃতীয় প্রতিযোগী 'কাজী মালিহা আক্তার' চিরকুটে পান ডায়ালগ যেখানে তার দেওয়া ডায়লগে সবাই ভীষণ মজা পান। চতুর্থ প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন 'ফাহমিদা জামান' তিনি অভিনয় করতে এতটাই ভীত ছিলেন শেষ পর্যন্ত তিনি একটা সংলাপ দিয়ে চলে যান।

প্রতিযোগিতা শেষে বিচারকরা সিদ্ধান্ত নেন দু'জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। বিচারকরা নিজস্ব মতামত ও নাম্বার প্রদান করত পূর্বক সবার আগ্রহ কেন্দ্র বিবেচনায় যথাক্রমে প্রথম বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় গানের জন্য 'ইকরাম আকাশ' দ্বিতীয় বিজয়ী হিসেবে আবৃত্তির জন্য 'মো. মিজানুর রহমা'। হঠাৎ কোনো প্রস্তুতি ব্যতীত এমন আয়োজনে প্রচুর সাড়া পড়বে তা সদস্যদের মাঝে অকল্পনাতীত ছিল। সবার প্রাণোচ্ছল খুনসুটিতে মেতে উঠে পিঠা উৎসবের আমেজ। সুন্দর পিঠা উৎসবের এই আয়োজনে সদস্যদের মধ্যে উম্মে সালমা ত্বোহা, ঋতু দে, রায়হান উদ্দিন ছিদ্দীকি বাসায় তৈরি পিঠা নিয়া আসেন। ওই আয়োজনে কেক বানিয়ে নিয়ে আসেন কানিজ ফাতেমা আরাবী। প্রায় ত্রিশ প্রকারের পিঠা নিয়ে উৎসবে সবার মাঝে কৌতূহল সৃষ্টি হয়, কোনটা রেখে কোনটা খাবেন। সব ধরনের পিঠাই তো দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু। বিশেষ উলেস্নখযোগ্য পিঠাসমূহ ছিল ভাপা পিঠা,পাটিসাপটা, ছাচের পিঠা, নকশী পিঠা, জামাই পিঠা, পুলি পিঠা, নারকেল পিঠা, তালের পিঠা, কুকি পিঠা, কয়েক ধরনের ঝাল নাস্তা (ডিম চপ, ঝাল প্যাটিস, রোল, অন্থন) ছিল।

প্রায় ৫০ জনের মতোন তরুণ, উদ্যমী লেখক-লেখিকা ও সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় মুখরিত ছিল সি আর বির শিরিষতলা। যেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীরা একত্রিত হয়ে নিজেদের মধ্যে সাহিত্য-সংস্কৃতির ধারক, বাহক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার প্রত্যয় করেন। অনুষ্ঠান শেষের প্রাক্কালে সম্মলিত কণ্ঠে একটি দেশাত্মবোধক গান (ধনধান্য পুষ্পভরা) গাওয়া হয়। তাছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের অনবদ্য সৃষ্টি কবিতা 'বিদ্রোহী' আবৃত্তি করে 'ফাহমিদা জামান' সবার মন পুলকিত করেন। অতিথিরা ও সব সদস্য বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সার্বিক সফলতা কামনা করেন। শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই জানার কোনো শেষ নেই এই প্রতিপাদ্য তুলে ধরে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে