শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

উনিশতম বছরে শিক্ষকদের চোখে যবিপ্রবির ভবিষ্যতের স্বপ্ন

২০০৭ সালের যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) যাত্রা শুরু হয়। ২৫ জানুয়ারি যবিপ্রবি উনিশতম বছরে পদার্পণ করে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের 'আঠারো বছর বয়স' কবিতার আঠারোর জয়ধ্বনির মতো যবিপ্রবি এখন দেশে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য- যা প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা-গবেষণায় নেতৃত্বদানে। ১৯তম বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষকদের প্রত্যাশা/স্বপ্ন ও প্রাপ্তিগুলো তুলে ধরছেন যবিপ্রবির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানভীর খন্দকার
তানভীর খন্দকার
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
উনিশতম বছরে শিক্ষকদের চোখে যবিপ্রবির ভবিষ্যতের স্বপ্ন
উনিশতম বছরে শিক্ষকদের চোখে যবিপ্রবির ভবিষ্যতের স্বপ্ন

যবিপ্রবি হবে আলো ছড়ানোর কেন্দ্র, যে আলোয় আলোকিত হবে বিশ্ব

ড. শাহানাজ পারভীন সহকারী অধ্যাপক

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, যবিপ্রবি।

যবিপ্রবি যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। এই স্বপ্ন ২০০৭ সাল থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন ছাত্রী হিসেবে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ভর্তির পর প্রথম যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই তখন দেখলাম চারিদিকে শুধু ধুলা আর কিছু নির্মাণাধীন বিল্ডিং। সেই প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ বাংলাদেশে যবিপ্রবি, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অবকাঠামগত, শিক্ষাগত এবং গবেষণায় যবিপ্রবির উন্নয়ন অন্যান্য অনেক বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। কোভিড-১৯ এর সময় করোনা টেস্ট, গবেষণা বরাবরের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রথম, বিশ্বের ২ শতাংশ গবেষকদের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষকের অবস্থান, উন্নতমানের ল্যাব প্রভৃতি যবিপ্রবির গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার প্রত্যাশাগুলো যদি বলি, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার করে পেপার ওয়ার্ক কমিয়ে নিয়ে আসা, প্রত্যেকটি ক্লাসরুম হবে স্মার্ট এবং ডিজিটালাইজড, বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র এবং ওয়ার্কশপ যেটা এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োগমূলক শিক্ষাও নিশ্চিত করা যাবে, জনকল্যাণমুখী গবেষণায় জোরদার করা, শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিদেশি উচ্চমানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি করা, শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা করা, পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য স্পোর্টস কমপেস্নক্স ও কালচারাল সেন্টার স্থাপন করা ও শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য আধুনিক আবাসিক হল যেখানে থাকবে সুন্দর একটি পরিবেশ ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।

সব মিলিয়ে আমার প্রত্যাশা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে না, এটি হবে ভবিষ্যতের জন্য একটি আলো ছড়ানোর কেন্দ্র, যে আলোয় আলোকিত হবে সারা বিশ্ব।

গবেষণা জোরদার, রাজনীতিমুক্ত

পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে

এস এম মনিরুল ইসলাম লেকচারার

মার্কেটিং বিভাগ, যবিপ্রবি।

গত বছর যবিপ্রবি যৌথভাবে গেস্নাবাল র?্যাঙ্কিংয়ে ৮০০-১০০০ এ স্থান পেয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তুলনামূলক অনেক ভালো করছে- যা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এসবের পাশাপাশি আমি চাইব মানুষের উপকারে আসে, তাদের দৈনিক জীবনযাপনে ভালো প্রভাব ফেলে এরকম ফিল্ডে যেন যবিপ্রবির ছেলেমেয়েরা কাজ করে।

আমাদের স্নাতক শিক্ষার্থীদের চাকরি ক্ষেত্রে কীভাবে নিয়োগ যোগ্যতা বাড়ানো যায় সেই ব্যাপারেও বিশ্ববিদ্যালয়ের খেয়াল রাখা উচিত।

এটা করার জন্য আমাদের বিভিন্ন শিল্পকারখানার সঙ্গে বেশি বেশি যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

এছাড়াও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় বাধা হলো দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি, এটি ছাত্রদের মাঝে মারামারি হানাহানির সৃষ্টি করে, প্রসাশনের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে।

ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা ছাত্রসংসদ গঠনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারে কিন্তু কোনো দলীয় রাজনীতির শাখা হয়ে তারা কাজ করবে না।

পরিশেষে বলতে চাই, নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন সর্বোচ্চ মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, কোনো প্রকার বৈষম্য যেন করা না হয়- তাহলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উন্নয়ন ঘটবে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে

ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা করতে হবে

ড. মো. শহীদুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক

রসায়ন বিভাগ, যবিপ্রবি।

যবিপ্রবির অনেক শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত এই সংখ্যাটা বাড়ছে- যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। গবেষণা নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনগুলো অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। এই অর্জনগুলো ভবিষ্যতেও আমাদের ধরে রাখতে হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আমার প্রত্যাশা থাকবে গবেষণার পাশাপাশি অন্য সব বিষয়ে যবিপ্রবিকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যাওয়ার। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই যেন এক হয়ে কাজ করি- সবার কাছে সেই অনুরোধ থাকবে আমার।

জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়া

গবেষণার উন্নত পরিবেশই অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে

ড. মো. মজনুজ্জামান

সহযোগী অধ্যাপক,

ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, যবিপ্রবি।

যবিপ্রবি থেকে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে আমি যা মনে করি- তা হলো আমি যা জানি তা শিক্ষার্থীদের জানাতে পারছি। আমার অর্জিত জ্ঞান তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছি। আর সেই সঙ্গে আমার পছন্দের কাজ গবেষণা করার জন্য যে পরিবেশ, উৎসাহ-উদ্দীপনা দরকার তা আমি যবিপ্রবি থেকে বর্তমানে যেমন পাচ্ছি, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে পাব বলে আশা রাখি। আর ভবিষ্যতে যবিপ্রবিকে দেখতে চাই, শিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ও সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা হবে অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে