বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

তারুণ্যের ভাবনায় এবারের বইমেলা

বাঙালির প্রাণের স্পন্দন অমর একুশে বইমেলা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণের অপেক্ষায় লেখক-পাঠক। পরিবর্তনের বাংলাদেশে সবকিছুতে এসেছে সংস্কার ও নতুনত্ব। নতুন দিনের এই বইমেলা নিয়ে কয়েকজন তরুণ লেখক ও পাঠক জানিয়েছেন তাদের ভাবনা। গ্রন্থনা করেছেন- তানজিদ শুভ্র
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
তারুণ্যের ভাবনায় এবারের বইমেলা
তারুণ্যের ভাবনায় এবারের বইমেলা

নতুন বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে উচ্ছ্বাস

মোহাম্মদ অংকন, তরুণ লেখক

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে একটি গণ-বিপস্নবের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন চলছে সংস্কার কার্যক্রম, অনেক কিছুতেই রয়েছে প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা। তাই নতুন বছরের শুরুতে একটু কানাঘুষা ছিল যে এবার অমর একুশে বইমেলা নাও হতে পারে। সেই ভাবনায় জল ঢেলে ইতোমধ্যে বইমেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, নতুন নতুন বইয়ের প্রচ্ছদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক প্রকার উচ্ছ্বাস বইছে। বইয়ের ভাষায় লেখক মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে বলেই আমার মনে হচ্ছে। এবারের বইতেও ফুটে উঠবে জুলাই বিপস্নবের কথা- যা পাঠককে সমসাময়িক ধারণা ও ভিন্নতার জোগান দেবে। সবমিলিয়ে ভিন্ন ধাঁচের একটি বইমেলা হতে পারে এ বছর। প্রত্যাশা থাকবে মানুষ যেন নির্বিঘ্নে বইমেলায় আসতে পারে এবং পছন্দের বইগুলো কিনতে পারে।

বইমেলায় বৈষম্য না রাখা হোক

কামরান চৌধুরী, তরুণ কবি

নতুন বছর শুরু হলেই যেসব বিশেষ দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকি, তার মধ্যে অমর একুশে বইমেলা অন্যতম। ভাষা দিবসের এই মাসে বইমেলা ছাড়া চিন্তা করা যায় না। নতুন বাংলাদেশের, নতুন দিনে বইমেলায় নিয়ে আমার প্রত্যাশা আগের চেয়ে একটু বেশি। বিগত বছরে স্বৈরাচারী শাসকের এক রকমের জুলুমের কারণ যে প্রকাশনীগুলো বইমেলায় স্থান পায়নি, এবার সেসব প্রকাশনী ও স্টল পেতে যাচ্ছে। আমি মনে করি, সাহিত্যপাড়া কিংবা বইমেলায় কোনো প্রকার বৈষম্য না রাখা হোক। তবে হঁ্যা, যেসব বই সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের জন্য ক্ষতিকর সেসব বই এই মেলার স্টলগুলোতে যেন না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আশা করি, এই বছর অমর একুশে বইমেলা গতবারের তুলায় বেশ জমজমাটভাবে হবে। লেখক, পাঠকদের মিলনমেলায় ভিন্নরূপে শোভা পাবে আমাদের এই বইমেলা। বেশি বেশি বই ক্রয় করে পাঠকরা বাড়ি ফিরে যাবে; এই আনন্দ লেগে থাকুক প্রতিটি বইমেলায় এটাই প্রত্যাশা।

বই হাতে ছবি নয়, বই পড়াতেও গুরুত্ব দিতে হবে

তানজিলা আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা।

অমর একুশে বইমেলা প্রসঙ্গ এলেই বইপ্রেমী মানুষের উৎসাহের সীমা থাকে না। তবে বই পড়া কারও শখ, কারও নেশা কিংবা সুন্দর মলাটের বই সংরক্ষণ করার অভ্যাস। অভ্যাস যেমনই থাকুক না কেন, জ্ঞান আহরণ করার একটি সহজলভ্য এবং দুর্দান্ত মাধ্যম হলো বই। জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি রয়েছে জীবনমুখী অনেক সমস্যার সমাধান। ফেব্রম্নয়ারি মাসের বৃহৎ এই বইমেলাকে শিক্ষণীয়, থ্রিলার, রোমান্টিক, বিনোদনমূলক বই সাম্রাজ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন বই প্রেমীরা। তবে বর্তমান সময় বইমেলা আয়োজনের উদ্দেশ্যের ছোট একটি অংশ ব্যাহত হচ্ছে। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা, নেশার ও আকর্ষণে যেমন পাঠকরা বইমেলায় ভিড় জমায়, পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের অনেকের মাঝে দেখা যায় বই কেনার অনীহা। বইমুখী করার মহৎ উদ্দেশ্য কেবল বিভিন্ন স্টলে বই হাতে নিয়ে আলোকচিত্র ধারণ করাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তাই নিজেদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধিতে বই পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উদ্ধৃত করতে প্রয়োজন বইমেলাতে ভিন্নধর্মী আয়োজন। তবেই নতুন বাংলাদেশ পাবে বুদ্ধিবৃত্তিক, সুস্থ একটি তারকা প্রজন্ম।

বাংলা ভাষা এবং সাহিত্য পৌঁছে যাক বিশ্ব দরবারে

রিকমা আক্তার, শিক্ষার্থী, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ।

বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন পুরাতন লেখকদের মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করে বইমেলা। বইমেলা শুধু বই ক্রয়-বিক্রয়ের জায়গা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় সবকিছুতেই আসছে সংস্কার, নতুনত্ব তেমনি বইমেলা নিয়েও রয়েছে আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রত্যাশা। নতুন লেখকদের সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা প্রকাশের অন্যতম জায়গা হতে পারে এটি। পাশাপাশি শিশুদের এবং তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বইমেলা। সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম ছবি, রংতুলির আঁচড়ে শিশু প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে সহজেই শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে এবং তাদের বইয়ের প্রতি কৌতূহলী করা যেতে পারে। বইমেলায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিতে মুদ্রিত বইগুলোর পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশনার আয়োজন করা যেতে পারে। বইমেলা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ভাষা ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠুক। বইমেলায় থাকুক আমাদের মাঝে নতুনত্ব, সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা এবং সব বয়সি মানুষের মনের খোরাক হয়ে হাজার বছর।

বইয়ের বিস্তারিত তথ্য সহজলভ্য করুন

রাইহান উদ্দিন, শিক্ষার্থী, টঙ্গী সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

বছর ঘুরে বইপ্রেমীদের দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আবারও ফিরে আসছে অমর একুশে বইমেলা। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের সম্মিলনে গড়ে উঠা এ বইমেলা যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করার পাশাপাশি নিঃসন্দেহে দেশের সর্ববৃহৎ বইমেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, অমর একুশে বইমেলায় বইয়ের প্রচারণার জন্য যে ব্যবস্থা আছে, তাতে মেলায় পাঠক এলেও বই কিনতে খুব একটা আগ্রহী হন না। সহজে তাদের মনের মতো বই খুঁজে পান না। তাই হতাশ হয়ে অনেককেই দেখা যায় বই না কিনে ফিরতে। লেখক-প্রকাশকদেরও এ নিয়ে অভিযোগ বিস্তর। আমার চাওয়া, প্রচারণার আয়োজন থেকেই যেন পাঠক ভালো বইয়ের তথ্য পেতে পারেন। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এই ব্যবস্থাকে খানিকটা ঢেলে সাজালে এটা খুবই সম্ভব। এসব কাজের জন্য কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রতিশ্রম্নতিশীল তরুণ লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নতুন অনেক ধারণা উঠে আসবে। আমার বিশ্বাস, এতে বই প্রেমীদের পাশাপাশি লেখক-প্রকাশকরাও তাদের বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে উপকৃত হবেন।

বইমেলার প্রতিটি দিন হোক জ্ঞান আহরণের

গৌরাঙ্গ সরকার, শিক্ষার্থী, সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা।

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির সংস্কৃতি, ভাষা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক। ভাষা আন্দোলনের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতি বছর ফেব্রম্নয়ারির এই মেলাটি নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। এটি কেবলমাত্র একটি বইমেলা নয়; এটি বাঙালির সৃষ্টিশীলতার মিলনমেলা। লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের মিলিত করে এই মেলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক বিশাল উৎসব। আজকের পরিবর্তিত বাংলাদেশে বইমেলাও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। ই-বুক, অডিওবুক এবং অনলাইন প্রকাশনার মাধ্যমে বইয়ের জগতে এসেছে নতুনত্ব। তবে মলাটবন্দি বইয়ের মিষ্টি গন্ধ, পৃষ্ঠার উল্টানোর মায়া এবং বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে গল্প করার যে আনন্দ তা কখনোই হারিয়ে যায়নি। অমর একুশে বইমেলা তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলছে। এটি কেবল বই কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গৌরবের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম। ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় স্মৃতিকে স্মরণ করে বইমেলার প্রতিটি দিন হোক জ্ঞানের উৎসব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে