মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিক্ষা থেকে আর কত পিছিয়ে থাকবে চর অঞ্চল?

চরে বসবাসরত মানুষ অধিকাংশই অতিদরিদ্র। তাই এদের বড় অংশই খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত।
মো. আব্দুল আলিম
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষা থেকে আর কত পিছিয়ে থাকবে চর অঞ্চল?

চরাঞ্চল বাংলাদেশের একটি বিশেষ ভূখন্ড, যেখানে নদী ভাঙন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চরাঞ্চলসমূহ দীর্ঘকাল ধরে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আসছে। এখানকার তরুণ প্রজন্ম, যারা দেশের ভবিষ্যৎ তারাই শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এখানে বসবাসকারী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকলেও আর্থিক সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা বাধার কারণে তারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকাগুলোতে প্রায়ই মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব দেখা যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষা উপকরণের অভাব শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা, থেকে বঞ্চিত করছে।

শিক্ষা একটি দেশের অগ্রগতির মূলে রয়েছে এবং চরাঞ্চলের তরুণদের জন্য এটি একটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু অর্থনৈতিক দিক, অবকাঠামোগত সংকট এবং সীমিত সুযোগের কারণে তারা মৌলিক শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের অভাব, শিক্ষকদের অপ্রতুলতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা তাদের শিক্ষার পথকে কঠিন করে তুলছে। কিন্তু এই তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন থাকলেও পরিবারের আর্থিক সংকট, নদী ভাঙন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তারা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই শিক্ষার অভাব তাদের জন্য এক আতঙ্ক হিসেবে পরিণত হয়েছে। এমনকি অনেক পরিবারেই তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। কাজের অভাবে বা কৃষি ও মৌসুমি কাজের ওপর নির্ভরশীলতা তাদের শিক্ষার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, যুবকরা কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। যার ফলে, তাদের জীবন আজ হতাশা এবং বেকারত্বে ভরপুর। এ অঞ্চলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ শিক্ষার অভাবে যুবকরা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। অধিকাংশ পরিবার স্বপ্ন দেখে, কিন্তু বাস্তবে তা ভিন্ন। এই আতঙ্কে পরিবারগুলো সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। শিক্ষার অভাবে যুবকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে- যা কেবল তাদের ব্যক্তিগত জীবনেই নয় বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের প্রতি উচ্চ আশা রাখলেও, বাস্তবতা আজ তাদের ব্যাপক হতাশায় ভরে দিয়েছে। এভাবে সামাজিক মূল্যবোধ এবং সাম্প্র্রদায়িক বন্ধনও ভেঙে পড়ছে।

চরে বসবাসরত মানুষ অধিকাংশই অতিদরিদ্র। তাই এদের বড় অংশই খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত।

\হসংবিধানে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষাসহ যেসব চাহিদা অনুসৃত রয়েছে, তার কোনোটিই পায় না চরবাসী। তাই নিরন্তর দুঃখ-কষ্টের এক বঞ্চনাময় জীবন অতিবাহিত করতে হয় তাদের। অবশ্য এই বঞ্চনা এক দিনের নয়, দীর্ঘদিনের। ফসল উৎপাদনের সুযোগ কম থাকা, দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, সরকারি সব ধরনের মৌলিক সেবার অপর্যাপ্ততা, কর্মসংস্থানের স্বল্পতা, পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড না থাকা, খাদ্যাভাব, নদীভাঙনসহ বহুমুখী দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার কারণেই চরে বসবাসরত মানুষকে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এ সংগ্রাম জন্মাবধি বললে ভুল হবে না।

যেমন বলা যায়, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের তরুণরা বেশিরভাগই রাজমিস্ত্রি কাজের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, তাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর হতে পারত। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারকে বাঁচানোই যেন আসল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অঞ্চলের শিক্ষার হার অনেক কম, কিছুসংখ্যক ছেলেমেয়ে শহরে এসে পড়াশোনা করলেও তাদের আর্থিক সমস্যার কারণে তারাও ঝরে পড়ে। এ অঞ্চলের অধিকাংশ তরুণরা পড়াশোনা সুযোগ না পেয়ে বিভিন্ন কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যার ফলে, এ অঞ্চল মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। যুবসমাজের এই অশান্তি একদিকে তাদের জীবনে হতাশা সৃষ্টি করছে; অন্যদিকে, সমাজের উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। চরাঞ্চলের যুবকদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে তারা ভবিষ্যতে আরও বেশি বেকার হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি এখন এর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও দীর্ঘ সময় অন্ধকারেই রয়ে যাবে তারা। শিক্ষার জন্য সচেতনতা এবং সহযোগিতা ছাড়া তারা একটি মানবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পাবে না। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে চরাঞ্চলের যুবকরা আরও দীর্ঘ সময় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে। তাদের শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং সহযোগিতা ছাড়া মানবিক জীবনযাপন সম্ভব নয়।

অতএব, সরকার এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল কাজ। যাতে আমরা আগামী প্রজন্মকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারি।

মো. আব্দুল আলিম :কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে