দেশজুড়ে তখন কোটা সংস্কারকে ঘিরে আন্দোলন নেমেছে প্রায়ই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হঠাৎই আন্দোলনের দমকা হাওয়া কড়া নাড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছু শিক্ষার্থীও নেমে গেলে রাজপথে। তবে অবাক বিষয় সংখ্যাটা ছিল '১১ সদস্যের।' পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাই- বোনেরা যখন রাজপথে আমরা থাকব কেন থেমে? নেমে পড়ি চল হাতে-হাত মিলিয়ে সত্যের আওয়াজ তুলে যেখানে অন্যায়ের ছোঁয়া রুখতে পারবে না এ আমাদের। মুহূর্তটা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছিল- 'তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিব রে, আমরা ক'জন নবীন মাঝি, হাল ধরেছি শক্ত করে রে'
সেই ক্রান্তিলগ্নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে নেমে যায় সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা। সেদিন সময় বেজে ১টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন থেকে বের হয়ে বাইশ মাইল পৌঁছে অবরোধ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। তবে সংখ্যাটা কিন্তু বড় ছিল না '১১ সদস্য।' শিক্ষার্থীদের কণ্ঠের ধ্বনিতে জেগে উঠেছিল রাজপথ 'সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে', 'আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার', 'জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে', 'কোটা না মেধা, মেধা মেধা', 'আমার সোনার বাঙলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই।' ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীরাও নেমে যায় রাস্তায়। শিক্ষার্থীদের সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পরবর্তীকালে এ আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে দেশের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরাও। তারপরই শুরু হয় হায়েনার আক্রমণাত্মক খেলা। বারবার আক্রমণের শিকার হলেও দমে ছিল না তারা। হাজারো রক্তের বিনিময়ে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হলো এ দেশ, জাতি পেলো নতুন বাংলাদেশ। এ জাতি কি ভুলে যাবে সেই দৃশ্য? যে দৃশ্যে জীবন গিয়েছে আমাদের ভাই-বোনের, যে দৃশ্য ক্ষত-বিক্ষত করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষের মন। আমরা এখনো ৩ আগস্টের শহীদ মিনারে সেই জনসমাবেশের গান মনে মনে গেয়ে চলি- 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, ও সে সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি।' তারই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে, মানুষের মনে আবারও শিহরণ জাগিয়ে দিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি'র (গবিসাস) উদ্যোগে 'উত্তাল জুলাই' শিরোনামে জুলাই গণ-অভু্যত্থানের আলোকচিত্র এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন কোর্টে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আবুল হোসেন। প্রদর্শনীতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আন্দোলন যাত্রা, আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি, আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, নির্যাতন ও নৃশংশতার চিত্র ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। প্রদর্শনী চলাকালে আওয়ামী নৃশংসতার চিত্র দেখে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন দর্শকেরা। দিনব্যাপী এ আয়োজনে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ভিডিও সমন্বিত সব প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শকরা আয়োজনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, 'জাতীয় জীবনে এই আন্দোলনের ইশতেহার বয়ে নিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনের স্পিরিট স্মরণ করিয়ে দিতে এমন আয়োজন প্রায়শই প্রয়োজন।'