মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অন্যরকম সুযোগ

বিএম মিকাইল হোসাইন
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অন্যরকম সুযোগ

বৃহস্পতিবারের এক গোধূলিলগ্নে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষ হলো। সবকিছু শেষ করে আমরা, প্রেস ক্লাবের জুনিয়র সদস্যরা, সভাপতি আব্দুলস্নাহ আল মামুন ভাইয়ের কাছে মিনি টু্যরের অনুরোধ করি। যদিও সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি তবুও সকলের অনুরোধ না করতে পেরে, ভাই কিছুক্ষণ ভেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণের পরিকল্পনা করলেন। তবে শুরুতে আমার উৎসাহ কিছুটা কমই ছিল, কারণ, ইবি আমার বাড়ির কাছেই মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরত্ব। ইবির প্রতিটি অলিগলি আমার পরিচিত, যা অন্যদের মতো নতুন মনে হয় না। তবুও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলো এবং এ যাত্রায় সবার সঙ্গে অংশগ্রহণে আমার দ্বিধা কমে এলো।

বৃহস্পতিবার বিকেলেই আমাদের ৯ জনের ছোট্ট দলটি পাবনা থেকে যাত্রা শুরু করে। কার্তিকের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভ্রমণ করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হলো। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে একরকম আধা ভেজা হয়ে আমরা ইবিতে পৌঁছালাম। সন্ধ্যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। ইবি প্রেস ক্লাব এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের সাদর অভ্যর্থনা মন ছুঁয়ে গেল। ইবির মমতাজ ভবনে আমাদের থাকবার জায়গা করেছিলেন সাংবাদিক ভাইয়েরা, সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়লাম ইবি ক্যাম্পাসের রাতের সৌন্দর্য দেখতে। প্রথমবারের মতো অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক ভাইদের সঙ্গে সরাসরি আলাপচারিতায় বসলাম। তাদের কাছ থেকে সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শোনা হলো। জার্নালিজম নিয়ে আরও অনেক নতুন বিষয় জানতে পারলাম, যা আমাদের সামনে নতুন পথের সূচনা করল।

পরের দিন সকালে আবার আমাদের ইবি ভ্রমণ শুরু হলো। অন্য সবদিনের চেয়ে আজকের ইবি যেন আমার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠল। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইদের সঙ্গে ইবির পরিচিত পথ ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আলাদা। ইবির পরিচিত ক্যাম্পাস আজ যেন আমাদের কাছে আরও সুন্দর, আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ধরা দিল। সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাস, মনোরম পরিবেশ, এবং ছায়াঘেরা রাস্তা সব মিলিয়ে এক অনন্য সৌন্দর্যের আঁচ পেলাম।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ যা ক্যাম্পাসভিত্তিক বাংলাদেশ বা এশিয়ার সবচেয়ে বড় বলা হয়, গ্রন্থাগার, এবং বিভিন্ন ভবন ও হলগুলোতে আমাদের ভ্রমণ চলল। প্রত্যেকটি স্থাপত্য, প্রতিটি গাছপালা যেন নতুনভাবে আমার চোখে ধরা দিল। সবশেষে ইবির পশ্চিমপাড়ার হলগুলো দেখতে দেখতে আমরা মফিজ লেকের সৌন্দর্য দেখতে আসলাম। মফিজ লেকের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি দেখলাম আর বিভিন্ন আলাপচারিতায় যোগ দিলাম। প্রেস ক্লাবের সিনিয়র এবং জুনিয়র সদস্যদের সঙ্গে মিলেমিশে এ যাত্রা যেন এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াল। একে অপরের মাঝে গল্প আর হাস্যরসে ভরে উঠেছিল প্রতিটি মুহূর্ত। প্রেস ক্লাবের সব সদস্য মিলে একাত্মতার এ অনুভূতি যেন আরও দৃঢ় হয়ে উঠল।

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে আমাদের পাবিপ্রবি প্রেস ক্লাবের সদস্যদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হলো। সভায় পাশাপাশি অঞ্চলের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক এবং একে অপরের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন উভয় সংগঠনের নেতারা। সভা শেষে দুই সংগঠনের ভাইদের সঙ্গেই আমরা স্মৃতিগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্যামেরাবন্দি করে রাখলাম।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের এ স্বপ্নময় ভ্রমণ শেষ হলো। আবার বাসে উঠলাম নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার জন্য। মনে হলো, এই ভ্রমণ শুধু একটি ঘোরাঘুরি ছিল না; এটি ছিল আমাদের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করার, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের, এবং একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুত করার এক অন্যরকম সুযোগ। মনে থাকবে ইবি প্রেস ক্লাব এবং সাংবাদিক সমিতির আতেথিয়তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে