পঞ্জিকানুযায়ী বঙ্গে, বছরে দুটি ঈদ পালিত হয়ে আসছে। ঈদকে ঘিরে যত আনন্দ সমারোহের পরিকল্পনা, খুশি বিনিময়ের খুনসুটি শুরু হয়ে যায় ঈদের পূর্বের রাত থেকেই। যে রাতে আকাশে চাঁদ ফুটে ওঠে, আপামর বাংলার মানুষ সেই রাতটিকেই 'চাঁদ রাত' হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও (বাকৃবি) এমন একটি রাত আছে, যেই রাতটিকে 'চাঁদরাত' বলে উদযাপন করেন আসছে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। বাকৃবিতে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার পূর্বের রাতটিকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা 'চাঁদ রাত' হিসেবে উদযাপন করেন।
সেই উপলক্ষে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বুধবার, বৃহস্পতিবারে পাড়ি জমিয়েছেন বাকৃবি চত্বরে।
বৃহস্পতিবারকে লক্ষ রেখেই বুধবার পুরো রাতজুড়ে বিভিন্ন অনুষদে চলেছে আল্পনা আঁকার মেলা। তাইতো আল্পনা-আনন্দের : বৃহস্পতিবারের এই রাত, বাকৃবির সবার জন্য মহাসমারোহের 'চাঁদ রাত'।
প্রতি বছরের মতো করে এই বছরও বর্ণময় অবগাহনে রেঙে উঠেছে বাকৃবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কামাল রঞ্জিত মার্কেটের (কে.আর) পূর্ব গেট থেকে শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন পর্যন্ত, তারপর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের সামনে এবং আব্দুল জব্বারের মোড়ে সেজে উঠেছে হরেক রকমের অস্থায়ী স্টল।
ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদ, বিভিন্ন ছাত্র ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও বৃহত্তর জেলা সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে এসব অস্থায়ী স্টল বসানো হয়েছে। প্রায় ৪৭টির মতো স্টল সাজাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন বাকৃবিতে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি অস্থায়ী এসব স্টলের রয়েছে কিছু স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও প্রতিটি স্টলেই থিম অনুযায়ী স্টলের চারপাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানাবিধ শিল্প কারুকার্য।
এসবের পর বাকৃবিতে বৃহস্পতিবারের পরশমণি সন্ধ্যা নামে; দেখা দেয় চাঁদ। চাঁদের এই আলোতে চিত্ররূপময় সাজে রঙিন হয়ে ওঠে 'প্রকৃতিকন্যা' নামে খ্যাত বাকৃবি চত্বর। বাকৃবিতে শুরু হয় 'চাঁদ রাত' উদযাপন।
উপযাপন উপলক্ষে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের কৃষি অনুষদ করিডোরে আয়োজিত হয়েছে বাকৃবি মিউজিক্যাল রেজিমেন্ট সংগঠন কর্তৃক এক সঙ্গীতানুষ্ঠান। সঙ্গীতের এই আয়োজনে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বাকৃবির প্রত্যেকটি প্রাণ।
তাইতো, এই রাতে নেই কারোরই হলে ফেরার তাড়া। ক্লাস, পরীক্ষার দিনব্যাপী ব্যস্ত কর্মসূচিতে বিমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের জন্য এই রাতটি পরম আনন্দে মিলিয়ে যাওয়ার দিন। তাইতো শিক্ষার্থীরা শাড়ি, পাঞ্জাবি পরে বেরিয়ে পরে বাকৃবি চত্বরে, আর যে যার মতো করে উদযাপন করে 'চাঁদ রাত'। কেউ ঘুরে দেখে স্টলগুলো, কেউ বা ব্যস্ত নিজের কিংবা নিজেদের নিজস্ব তুলতে, আবার কেউ স্টলের এক প্রান্তে বসেই সমবেত সুরে গান গেয়ে ওঠে। পরিবার পরিজনের বাইরে বন্ধু, সহপাঠী তথা প্রাণময় এই চত্বরে সবার সঙ্গে মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা কাটিয়ে শিক্ষার্থীরা বাকৃবিকে করেন তুলে উৎসবমুখর।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্মকর্তারাও অঙ্গীভূত হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের এই উৎসবে। তারাও ঘুরে ঘুরে দেখে স্টলগুলো, ফ্রেমবন্দি করে কাটানো মুহূর্তের স্মৃতি। এই আনন্দ আয়োজনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তাকর্মীরা।
বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহি বিন মাহবুব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এই রাতটিকে আমরা উৎসব হিসেবে গালন করে আসছি। ক্যাম্পাসে নতুন জুনিয়র আসবে। এই উপলক্ষে সবাই খুব আনন্দ করছি। নিজেকে এই উৎসবে শামিল করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
বাকৃবির পশু পালন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক এস. এম. আরিফুল ইসলাম বলেন, ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতটি বাকৃবির জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোমলমতি পরীক্ষার্থীরা বাকৃবিতে আসে, বাকৃবির অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা এই রাতটি পরীক্ষার্থীদের জন্যে উৎসবমুখর করে তোলে। পাশাপাশি আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সর্বাত্মক সহায়তা করবার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করে থাকি।
চাঁদ রাতকে উপলক্ষ করে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ২৫ অক্টোবর বাকৃবিসহ কৃষিবিষয়ক সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষার প্রাচীন বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত সব আয়োজন সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা সার্বিকভাবে সুন্দর একটি পরিবেশে সব পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথাগতভাবে ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতকে অনেকটা চাঁদ রাতের সাথে তুলনা করা হয়। কারণ, ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তা করে থাকে এবং আনন্দঘন পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুখরিত করে তোলে।