মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রতিভার স্পর্শে 'অনন্য' পরিচয়

বিশ্ববিদ্যালয় হলো আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। প্রতিটি মানুষের জীবনে রয়েছে বিভিন্ন লক্ষ্য ও স্বপ্ন। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও নানা সৃষ্টিশীল কাজের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বহু বিদ্যাচর্চার প্রতিষ্ঠান। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততার মধ্যেও তারা আড্ডা, হৈ-হুলেস্নাড় এবং বিভিন্ন সৃজনশীলতার কাজে সময় কাটাতে ভালোবাসে। কেউ তুলছে হাতের ছোঁয়ায় প্রকৃতি, কেউবা লেখার জোরে তুলছে সত্যতা, কেউবা যুক্তির কণ্ঠে তুলছে ন্যায়-অন্যায় বা কেউবা গাইছে মধুর সুরে গান। এ যেন প্রতিভার স্পর্শে এক অনন্য জগৎ এর সৃষ্টি। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই অনন্য হওয়ার গল্প তুলে ধরেছেন শরিফুল গণি উসমানি
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
প্রতিভার স্পর্শে 'অনন্য' পরিচয়

'কিছুই পারি না' থেকে 'অনেক কিছু পারি'র উজ্জ্বল অভিযাত্রা

তৌসিফ ফারহান

চতুর্থ বর্ষ, ফার্মেসি বিভাগ।

'সৃজন' শাব্দিক অর্থে বলতে চাইলে সৃষ্টি, নির্মাণ কিংবা রচনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সৃজনশীলতার স্পর্শ একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে অসাধারণ করে তোলে। শুধু ভর্তি পরীক্ষায় পাস করাই যথেষ্ট নয়, বরং নিজেকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী করে তোলাই আসল চ্যালেঞ্জ। এই শিক্ষাঙ্গনের প্রতিটি ভিত্তির সঙ্গে নিজেকে পরিচিত ও সম্পৃক্ত করা উচিত, তাহলেই সৃজনের স্পর্শে নিজেকে সৃজনশীল করে তোলার পথ আরও সুগম হবে। নিজেকে দিয়েই সেই উদাহরণ দিতে পারি। আমার নিজের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিতর্ক সংগঠনের এক সাধারণ সদস্য হিসেবে, যা শেষ হয়েছে নেতৃত্বের শীর্ষে। এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে সীমানা ছাড়িয়ে ভাবতে, নতুন দায়িত্ব নিতে এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত মোকাবিলা করতে। তাই সব শিক্ষার্থীকে আহ্‌বান জানাই - নিজের গন্ডি ভেঙে বেরিয়ে আসুন, নতুন সম্ভাবনা খুঁজুন। 'আমি কিছুই পারি না' থেকে 'অনেক কিছু পারি' - এ যাত্রাই আপনার জীবনকে করবে উজ্জ্বল, অর্থপূর্ণ আর অনন্য।

সাফল্যের চাবিকাঠি ও আত্মপরিচয়ের মাধ্যম

অনন্যা ইসলাম

দ্বিতীয় বর্ষ, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ।

পড়াশোনার পাশাপাশি সৃজনশীলতা মানুষের জীবনে সাফল্য ও খ্যাতি নিয়ে আসে। প্রতিটি মানুষকে সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনো প্রতিভা দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমার মতে, নিজের এই দক্ষতা সবার সামনে প্রদর্শন করে নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করা উচিত, অবশ্যই তা পড়াশোনার সঙ্গে সমন্বয় করে। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীল কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে হস্তশিল্প বা গৃহে নির্মিত পণ্যের চাহিদা বেশি, যা পরিবেশবান্ধবও বটে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা যদি সৃজনশীলতাকে গুরুত্ব দেই, তবে অনেক নতুন উদ্ভাবনের সম্ভাবনা থাকে। বর্তমান যুগে অনলাইন মাধ্যম আমাদের পরিচিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমার 'অনন্যা' নামক ফেসবুক পেজটি এর একটি উজ্জ্বল নিদর্শন, যেখানে আমি নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করি এবং অভিনব কার্যক্রম পরিচালনা করি। তাই আমার মতে, পড়াশোনার অবসরে অনলাইনে অযথা সময় নষ্ট না করে, সৃজনশীল কোনো কাজকে অনলাইনে প্রচার করলে নিজের পরিচিতি বাড়বে এবং আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাংলার শিল্পকলায় ছাত্রজীবনের সৃজনশীলতা থেকে স্বাধীনতার অঙ্কন

আর্পিতা সাহা

পঞ্চম বর্ষ, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ।

বর্তমান যান্ত্রিক যুগে ছাত্রজীবন একটি মূল্যবান সময়। এই সময় আমরা নিজেদের পছন্দের কাজে নিমগ্ন হতে পারি। চিত্রাঙ্কন, ফটোগ্রাফি, আবৃত্তি ইত্যাদি সৃজনশীল কাজ আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। চিত্রাঙ্কন আমার প্রিয় মাধ্যম, যা অব্যক্ত অনুভূতি প্রকাশে সহায়তা করে। এসব কাজ দৈনন্দিন চাপ কমায় এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। সচেতন শিল্পকর্ম সামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরে, যা গ্রাফিতিতেও দেখা যায়। দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে চারুকলার চর্চা শুরু হয়। সফিউদ্দিন আহমেদ, কামরুল হাসান ও শেখ মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন এর অগ্রদূত। জয়নুল আবেদিনের ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়। 'বিদ্রোহী', 'সাঁওতাল যুগল', 'নাইন্যার মা' তার বিখ্যাত কাজ। সফিউদ্দিন আহমেদ চিত্রকর ও ছাপচিত্রশিল্পী হিসেবে প্রসিদ্ধ। 'বনের পথে', 'ঘরে ফেরা' তার উলেস্নখযোগ্য কাজ। জল, মাছ, নৌকা তার প্রিয় বিষয়। কামরুল হাসান লোকজ শিল্পের জন্য বিখ্যাত। ৬৯'র গণআন্দোলন, ৭১'র মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক সংগ্রাম তার শিল্পে প্রকাশ পেয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী হতাশাও তার কাজে প্রতিফলিত।

সৃজনশীলতা ও শিক্ষাজীবন দুই মূল চালিকাশক্তি

সাদিয়া সুলতানা মৌ

প্রথম বর্ষ, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগ।

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে অনন্য প্রতিভা, যা বিকশিত করে নিজস্ব পরিচয় গড়ে তোলা সম্ভব। আমার ক্ষেত্রে, সেই প্রতিভা ফুটে উঠেছে রন্ধনশিল্পে। শৈশব থেকেই ছিল নতুন কিছু সৃষ্টি করার তাগিদ। ঘরোয়া পরিবেশে কেক, মিষ্টি, রসমালাই বানানোর কলাকৌশল রপ্ত করেছিলাম। পরিবার ও বন্ধুদের জন্য এসব তৈরি করতাম উৎসবে-আনন্দে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগের সেই অবসর সময়টাকে কাজে লাগানোর চিন্তা থেকেই জন্ম নিল একটি ছোট্ট উদ্যোগ। খুলে ফেললাম সোশ্যাল মিডিয়া পেজ, শুরু হলো হোমমেড কেকের ব্যবসা। সবার সমর্থনে প্রথম থেকেই পেলাম দারুণ সাড়া। পড়াশোনার ফাঁকে কাজটা করা কষ্টসাধ্য হলেও এই ক্ষুদ্র উদ্যোগটিকে আরও এগিয়ে নিতে চাই। কেক পৌঁছে দেওয়ার পর গ্রাহকদের থেকে পাওয়া প্রশংসাসূচক মন্তব্যগুলো মনে জাগিয়ে দেয় এক অপূর্ব তৃপ্তি। এই অনুভূতির টানেই আমি এই সৃজনশীল কাজটি আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে