বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

আন্তর্জাতিক সংহতি আদায়ে শেখ রিফাদ মাহমুদ

মোহাম্মদ অংকন
  ২৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আন্তর্জাতিক সংহতি আদায়ে শেখ রিফাদ মাহমুদ

১৯৫২ সালে ছাত্রদের দাবিতে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলনের পর ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৯ সালে গণ-অভু্যত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালে ৯ মাসব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ। এরপর ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনে স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটে। এসব আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল জোরাল। প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকেই বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরে অসহযোগ আন্দোলনে নিষ্ঠুরভাবে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে যুগ যুগ ধরে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের পাশাপাশি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ত্যাগ ও বিজয়ের ইতিহাসও আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলার মানুষের হৃদয়ে।

এই ইতিহাসের সঙ্গে উচ্চারিত হবে নাটোরের ছেলে শেখ রিফাদ মাহমুদের নাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই শেখ রিফাদ স্বতন্ত্রভাবে নিজ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক সংহতি আদায়ের জন্য কাজ করেছেন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিমের প্রতিনিধি যোগাযোগ করে এবং আন্তর্জাতিক সংহতি আদায়ের জন্য গঠিত টিম 'ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঝঃঁফবহঃং ঝড়ষরফধৎরঃু ঈধসঢ়ধরমহ রিঃয ইউ ছঁড়ঃধ জবভড়ৎস গড়াবসবহঃ' এ যুক্ত করে। ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলের একশত নব্বইয়ের অধিক ছাত্র সংগঠনের একত্র সমর্থনে 'গেস্নাবাল স্টুডেন্ট ফোরাম'র সংহতি আদায়ে শেখ রিফাদ সক্ষম হন এবং সেই বিবৃতি আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনগুলোর সঙ্গে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেখানে 'ইউরোপীয় স্টুডেন্ট ফোরাম' এবং 'কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন'র ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে। সমর্থন দেওয়া সংগঠনগুলো তাদের নিজ নিজ দেশের গণমাধ্যম এবং সরকারের কাছে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের বিষয়গুলো উপস্থাপন করে।

এ প্রসঙ্গে শেখ রিফাদ মাহমুদ বলেন, 'ছাত্র আন্দোলনের সময় যখন আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের ভয়াবহ হামলা হয়, তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রদান করেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান। সে সময় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ তাকে দেশদ্রোহী বলেছিলেন এবং আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। কারণ, প্রতিদিন নিয়মিতভাবে সারাদেশের প্রত্যেকটি হামলার বিবরণ অন্য দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে তুলে ধরছিলাম। সেখানে হামলার বিবরণ, ছবি, নিহতের সংখ্যার বিষয়টি উলেস্নখ ছিল। মনে ভয় ছিল, যদি এই সরকার টিকে যায়, তাহলে হয়ত আমাকেও দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হবে। ছাত্র হয়েও জেলে ঢুকতে হবে।'

'কথায় কথায় ফাঁসিতে ঝুলানো শেখ হাসিনা সরকার হয়ত আমাকেও ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতার বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে তুলে ধরার অভিযোগে বিচারের আওতায় আনত', হাসতে হাসতে এটাও বলেন তিনি।

শেখ রিফাদ আরও জানান, 'গেস্নাবাল স্টুডেন্ট ফোরাম' ও 'কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন'র দায়িত্বে থাকার কারণ বিশ্বব্যাপী ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। সহজেই তাদের মধ্যে ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের বিষয়টি বলতে পারি। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিষয়ে বেশ সোচ্চার ছিল, তারা নিয়মিতভাবে খোঁজ নিয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে প্রতিদিনের আন্দোলনের আপডেট তাদের জানাই।'

আন্তর্জাতিক সংহতি আদায়ে পর্দার আড়ালে থাকা শেখ রিফাদ মাহমুদ নিয়মিতভাবে কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে। বর্তমানে তিনি 'গেস্নাবাল স্টুডেন্ট ফোরাম'র উপদেষ্টা পর্ষদ সদস্য, 'কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন'র অ্যাডুকেশন রিলেশন অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইয়ুথ প্যানেল মেম্বার হিসেবে যুক্ত আছেন 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন'র যুব ক্ষমতায়ন তহবিলে, যুক্ত আছেন 'ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম'র যুব পর্যবেক্ষক হিসেবে। এ ছাড়াও দায়িত্ব পালন করেছেন নেদারল্যান্ডসের 'কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন', আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইন্টার-এজেন্সি ওয়ার্কিং গ্রম্নপ'র বোর্ড মেম্বার হিসেবে, সুইডেন'র আন্তর্জাতিক সংস্থা 'আর্থ অ্যাডভোকেসি ইয়ুথ'র বোর্ড মেম্বার হিসেবে। শেখ রিফাদ রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপেস্নামা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে