হার্ডিঞ্জ ব্রিজে ইবি সিওয়াইবির একদিন

প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রাকিব রিফাত
দিনটি ২৬ ফেব্রম্নয়ারি, ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮-২৪। এমন সময় সিওয়াইবি ইবি শাখার সভাপতি গোলাম রব্বানীর ফোন। ঘুমের ঘোরেই ফোন রিসিভ করা মাত্রই বলে উঠল, এখনো বের হসনি সময় তো হয়ে এলো। ওর কথাতেই মনেপড়ে গেল আজ তো সিওয়াইবির টু্যর রয়েছে। নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা। দ্রম্নত নিজেকে গুছিয়ে সবাইকে ফোন দিতে লাগলাম। এদিকে সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। কেউ কারও অবস্থান সম্পর্কে তখনো জানি না। একের পর এক ফোন আসতেছে আমরা বের হয়েছি, আপনারা সবাই কোথায়? দেখতে দেখতে ৯টা বেজে ৫০ মিনিট। মোটামুটি সবাই উপস্থিত। আর এই উপস্থিতিকে নিশ্চিত করেছে সিওয়াইবি ইবির দপ্তর সম্পাদক ত্বকি ওয়াসিফ। কোনো কাজ দেওয়া মাত্রই সম্পন্ন করাই তার কাজ। ছেলেটির গুণ বলে শেষ করা যাবে না। এদিকে সিওয়াইবির সদস্য রওফুলস্নাহ তখনোও ঘুমে। ফোনকলে জাগিয়ে দিলেন সভাপতি, যদিও তার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে ৩ মিনিট দেরি হয়েছে। তখনো এসে পৌঁছতে পারেনি আরেক সদস্য আব্দুলস্নাহ আল নোমান। যখন ক্যাম্পাস থেকে বাসটি কুষ্টিয়া শহরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়, এমন সময় নোমান এসে হাজির। অবশেষ ক্যাম্পাস থেকে ১৮ জন সদস্য সবাই উপস্থিত। এতক্ষণ বলছিলাম কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ (সিওয়াইবি) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার কথা। এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী অরাজনৈতিক সংগঠন। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ ও ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা তরুণ ভোক্তাদের সংগঠন। এই স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়েই সিওয়াইবি ইবি শাখার উদ্যোগে গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারি একদিনের আনন্দ ভ্রমণের আয়োজন করে। স্থানটি ছিল কুষ্টিয়া জেলার শেষ ও পাবনা জেলার শুরুতে। পাবনা জেলার এই অনিন্দ্য সুন্দর স্থানটিতে তিনটি দর্শনীয় এক চোখে একবার তাকাতেই ফুটে শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রুপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ। যে এখানে আসবে, এই স্থানটির প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়ে পড়বে। একদিনের এই ভ্রমণে অংশগ্রহণকারী ছিল ২১ জন সদস্য, যার মধ্যে ১৮ জন ক্যাম্পাস থেকে বাকি ৩ জন কুষ্টিয়া থেকে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয় সুলতান, নাফিস ও আব্দুলস্নাহ। এই যাত্রায় প্রধান মেহমান হিসেবে ছিলেন ইবির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বদানকারী ইয়াশিরুল কবীর সৌরভ। এ ছাড়াও উপস্থিত থেকে এই যাত্রা প্রাণবন্ত করেছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান ও কুলছুম, সদস্য মোহন রায়, ইদুল, জাবিদ, মামুন হোসেন, রাকিব হাসনাত, মেহেদি, মোয়াজ্জেম, মুহাম্মাদ আলী ও তারুণ। তারা সবাই মিলে দিনটিকে আনন্দ প্রিয় করে তুলেছিল। ক্যাম্পাসে থেকে বাস চলছে শহরের পানে, সকালের নরম-তীব্র রোদ সঙ্গে হালকা বাতাসের ছন্দে মুহূর্তেই ভিন্ন এক পরিবেশে রূপান্তরিত হলো। ভাঙা স্বরের গান ও গল্পে ধীরে ধীরে আমরা কুষ্টিয়া শহর সংলগ্ন বটতৈল এলাকায় এসে পড়লাম। সেখান আমরা সবাই নেমে পরলাম, এদিকে দুইজন সদস্যও যুক্ত হলো আমাদের সঙ্গে। সেখান থেকে ইজিবাইকে ছুটলাম পোড়াদহ জংশনের দিকে, মিনিট বিশের মধ্যেই এসে পরলাম সেখানে। এখানে নেমেই দেখি এক লালনভক্ত গায়ক। তখনো ট্রেন আসতে ৩০ মিনিট লেট। এর ফাঁকে আমরা তার থেকে দুটি লালন সঙ্গীত শুনে নিলাম। সেখান থেকেই মূলত শুরু ২৬ তারিখে আনন্দ ভ্রমণের মূল আকর্ষণ। যেখানের আকর্ষণগুলো পরিকল্পনাহীন ছিল, নতুন কিছুর মাধ্যমে যাতে সবাই উপভোগ করে দিনটি, এটাই ছিল সেদিনের মূল লক্ষ্য। এরপর অপেক্ষার পালা খুলনা থেকে ছেড়ে আসা কপোতাক্ষ ট্রেন এসে হাজির। সবাই ট্রেনে উঠে পরলাম। এরপর যে যার মত গল্পে মাতোয়ারা, সবার মনেই আনন্দের ছাপ লক্ষ্য করা গেল। কিছু সময় পর মিরপুর স্টেশনে এসে পরলাম। সেখান থেকে আরেক সদস্য সুলতান আমাদের সঙ্গে মিলিত হলো। ৪০ মিনিট পর আমরা পাকসী/হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেলওয়ে স্টেশনে এসে উপস্থিত। সেখানে নামার পর একদিকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও রুপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র দেখছে আর স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করে নিচ্ছে নিজেকে। মুহূর্তটি শেষে আমরা হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে আসলাম। এসেই প্রমত্ত পদ্মার বুকে নৌকা পথের যাত্রাকে সরণীয় করতে ইচ্ছে সবার। যদিও এই সময় নদীর যৌবন হারিয়ে মৃত প্রায়, বর্ষার সময় সে আবার উত্তাল উন্মাদনায় নিজের ভরা যৌবনের প্রভাবে ভাসিয়ে নিয়ে চলে অনেকের বসতভিটে। যাই হোক সে গল্প অন্যদিন। এর আগে অনেকেই পদ্মার ওপর বয়ে চলা হার্ডিঞ্জ ও লালন শাহ সেতু দিয়ে অনেকবার চলাচল করলেও, বাস্তবে কাছ থেকে গিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা সবার ছিল না। ইচ্ছা থেকেই হার্ডিঞ্জ, লালন সেতু ও রুপপুর বিদু্যৎকেন্দ্রটি দেখার জন্য এই আয়োজন। সে থেকেই পুরো একটি নৌকা নিজেদের করে নিলাম। এরপর দুই ঘন্টারও বেশি সময় সেখানে কাটালাম। পাশেই লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও রুপপুর বিদু্যৎকেন্দ্র এক পলকেই দেখা যায়। এই দৃশ্যটিই সবার মনকে কেড়ে নিয়েছে। সবাই সবার মতো করে নিজেদের সেই স্থানের স্মৃতিকে বন্দি করে নিল। ছুটে চললাম রুপপুর বিদু্যৎকেন্দ্রের দিকে, সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুনত্ব যোগ হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিল রাশিয়ার একটি অংশ। কারণ, এখানের অধিকাংশই রাশিয়ান নাগরিক। তাদের মাধ্যমেই এই বিদু্যৎকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। এদিকে সবাই ক্ষুধার্ত। দুপুরের খাবার সেরে নিলাম। এরপর ভিন্ন ধর্মী এক মিষ্টান্নের স্বাদ উপভোগ করলাম। অল্প দামে মানসম্মত মিষ্টি পেয়ে সবাই খুশি। যা সবার নজর কেড়েছে। মিষ্টি শেষে পান পর্বকে উপহার দিয়েছে সিওয়াইবি ইবি শাখার গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান রিয়াজ। একটি কথা না বললেও নয়, পাকসী স্টেশন থেকে রুপপুরের এই সময় টুকু সবাই হেঁটেই এসেছিল। এটি ছিল ক্ষুধার্ত পেটে কষ্টার্জিত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। দেখতে দেখতে বিকাল ঘনিয়ে আসছে, সময় সংকুচিত হচ্ছে। রুপপুর থেকে আবার আমরা পাকসীতে এসে হাজির। আবারও ট্রেনের অপেক্ষা, অপেক্ষারত এই সময় সবাই গল্প ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিল। বিশেষ করে সিওয়াইবি ইবি শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুলছুম আক্তার তার কথা না বললেই নয়। সে একজন মেধাবী, কর্মঠ ও সব কাজের কাজী। সেই ছিল ওইদিনের একমাত্র মেয়ে। বাকিরা বিভিন্ন কাজে আসতে পারেনি। সেই একমাত্র, যে সবচেয়ে বেশি ছবি উঠিয়েছে। সিওয়াইবি ইবি পরিবারের সবার কাছে প্রিয় তিনি। এরপর সেখান থেকে আবার পোড়াদহ আসলাম। এখান থেকে ইজিবাইকে করে কুষ্টিয়া। এরপর ক্যাম্পাসের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য সিট ধরে রাখলাম। তখন সময় সন্ধ্যা ৭টা। বাস ছাড়ার সময় সাড়ে ৭টা, এর ফাঁকে এই সময় টুকু কুলছুমের গান ও হালকা নাস্তার মাঝে কাটিয়ে দিলাম। সারাদিনের সবার গল্প, অভিজ্ঞতা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু মুহূর্তের মধ্যে আমরা ক্যাম্পাসে এসে পরলাম। এরপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে যে যার রুমে চলে আসলাম। ছোট্ট টু্যরে আনন্দের পাশাপাশি নতুন এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। যা এইটু্যরের সুন্দর একটি শিক্ষণীয় বিষয়। যেখানে প্রত্যেকের অসাধারণ ধৈর্য ও একত্র থেকে কোনো কাজ করার মধ্যে ভালো ফলাফল আসে, সেটা সেদিন আমরা পেয়েছি। এর পেছনে সিওয়াইবি ইবি শাখা সভাপতি গোলাম রব্বানীর দক্ষতা, সেদিন সবাই লক্ষ্য করেছে।