বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

স্মৃতির পাতায় আমাদের চড়ুইভাতি

মো. জাহিদ হাসান
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্মৃতির পাতায় আমাদের চড়ুইভাতি

অনেক পরিকল্পনা আর অপেক্ষার পর অত্যন্ত আনন্দঘন আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৩২তম ব্যাচের চড়ুইভাতি। সবার অংশগ্রহণ, মতামত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদের দীর্ঘ দিনের কাঙ্ক্ষিত চড়ুইভাতির আয়োজন সম্ভব হয়। চড়ুইভাতির প্রায় সব কাজের ব্যবস্থাপনা ও তদারকির দায়িত্বে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে মাহমুদ এবং সবার সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই আমাদের চড়ুইভাতির আয়োজন সাফল্যমন্ডিত হয়। ফাল্গুন মাসের এক সকালে আমরা গিয়ে হাজির হলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মফিজ লেকে। লেকের পাশেই ফসলের বিস্তৃত মাঠ, শীতল বাতাস আর ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে আমাদের চড়ুইভাতি শুরু হলো। সকাল ৯টা থেকে শুরু হলো রান্নাবান্না ও সাজসজ্জার কাজ। সকালবেলা সবাই উপস্থিত না থাকলেও অনেকেই উপস্থিত হলাম অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতার জন্য। রান্নার জন্য আমরা আগের দিনই বাজার করে রেখেছিলাম। বাবুর্চি তার রান্নার কাজ শুরু করে দেয় এবং আমরা সবাই উৎসাহের সঙ্গে রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে থাকি। মেয়েদের মধ্যে কয়েকজন পেঁয়াজ, মরিচ কাটছে আবার কেউ আদা, রসুন পিষছে। ছেলেদের মধ্যে মাহমুদ রেদওয়ান, তৌফিক, বাবুল পানি বহন করছে, আবার একদিকে রঙিন কাগজ ও ফুল দিয়ে সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত রনি, সানজিদ, মেঘ, আলো এবং আরও অনেকেই। মাইকে রোমাঞ্চকর গান বাজছে এবং সবাই অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে কাজ করছে। দুপুর ১২টার মধ্যে সাজসজ্জা ও রান্নার কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে সবাই এসে হাজির হতে থাকে। ব্যাচের প্রায় সবাই চড়ুইভাতিতে অংশগ্রহণ করায় বন্ধুদের মধ্যে খোশগল্প আর হাসিঠাট্টা মুহূর্তের মধ্যে এখানে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর শুরু হয় চড়ুইভাতির মূল অনুষ্ঠান। ছেলেদের মধ্যে 'হাঁড়ি ভাঙা' ও মেয়েদের মধ্যে 'বালিশ' খেলা শুরু হয়। ছেলেদের মধ্যে তৌফিক এবং মেয়েদের মধ্যে ফারহানা, নুসরাত ও রাবিনা খেলায় বিজয়ী হয়। ইতোমধ্যেই আমাদের আমন্ত্রণে আমাদের বিভাগের অধ্যাপক মোছা. ফৌজিয়া খাতুন আমাদের মধ্যে উপস্থিত হন। আমরা ম্যামকে আমাদের মধ্যে সাদরে বরণ করে নেই। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাবুল অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করে। তৌহিদ, রনি, সঞ্চিতা, রেদোয়ান এবং আরও অনেকে গান-বাজনা ও কবিতা আবৃত্তি করে। আমরা সবাই তাদের গান ও কবিতা আবৃত্তি উপভোগ করলাম। এরপর শুরু হয় চড়ুইভাতির খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। একসঙ্গে বসে আমরা খুব মজা করে খাওয়া শেষ করি। তখনো কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠান শেষ হয়নি। খাওয়া শেষে বিশ্রামের বিরতি দেওয়া হয়। এ সময় অনেকেই আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকে এবং খোশগল্পে মেতে ওঠে সবাই। কেউ কেউ আবার মোবাইলে ছবি উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফাহিম সকাল থেকেই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত ফটোগ্রাফির দায়িত্ব পালন করে। বিশ্রাম শেষে আমন্ত্রিত অতিথি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আমাদের মধ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন এবং আমাদের আয়োজন নিয়ে ম্যাম অনেক প্রশংসা করেন। এরপর ম্যাম নিজেই খেলায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। চড়ুইভাতির আয়োজনে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করায় মাহমুদকে আমরা কৃতজ্ঞতা পুরস্কার প্রদান করে সম্মানিত ও উৎসাহিত করি। এরপর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমাদের ব্যাচের সবাই মিলে গ্রম্নপ ছবি তুলি। এভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের চড়ুইভাতির অনুষ্ঠান চলতে থাকে। সবার কাঙ্ক্ষিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের চড়ুইভাতির অনুষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিদিনই তৈরি হয় হাসি-কান্না বা সুখ-দুঃখের নানান ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে আমরা প্রত্যেকেই জীবনের আলাদা একটা পর্যায়ে যাব। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ব নিজের ক্যারিয়ার গোছাতে বা সংসার জীবন শুরু করতে। কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে কাটানো এমন দিনগুলো আজীবন রয়ে যাবে স্মৃতির পাতায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে