বেরোবির ইংরেজি বিভাগে লিটেরেরি ফিয়েস্তা
প্রকাশ | ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মো. ফজলুল হক
মানব জীবনকে প্রতিফলিত করে সাহিত্য। আর সাহিত্যের প্রতিফলিত রূপ ফুটে ওঠে প্রদর্শনী, নাটক মঞ্চায়ন এবং অভিনয় উপস্থাপনার মাধ্যমে। অধ্যয়নের বিষয়ই যখন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, সেখানে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। সাহিত্য বরাবরই মানুষের জীবন থেকে ধারণ করা। প্রাচীন থেকে অদ্যাবদি সব সময় সব মানুষের কথা কেবল সাহিত্যেই পাওয়া যায়। এই বৈচিত্র্যই অন্যান্য বিভাগ থেকে ইংরেজিকে আলাদা করেছে। এই বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক সম্মেলন ও ভৌগলিক একত্রীকরণ যে আমরা শুধু অধ্যাপনায় বা কাগজ-কলমে ধারণ করিনি, সেটাই প্রমাণ করে দিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ। আয়োজন করেছে 'ইংলিশ কালচারাল ফিয়েস্ট অ্যান্ড ইংলিশ কালচারাল ফায়ার'! দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে যেমন দেশের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নাচ, গান, আবৃত্তি, ক্যাম্পাস ড্রামা, বাঙালি সংস্কৃতির ধারক পুঁথিপাঠসহ ভিন্নধর্মী প্রদর্শনী যেমন যোগ করা হয়েছে, ঠিক তেমনি বাদ রাখা হয়নি ইতিহাসখ্যাত বিশ্ব কাঁপানো সাহিত্যের নানাধর্মী বহিঃপ্রকাশকেও। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন আঙ্গিকে যেসব চরিত্র, ঘটনা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, সেই ঘটনা ও চরিত্রগুলোকে প্যারেডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে খুব চমৎকারভাবেই।
এই কালচারাল ফিয়েস্ট এর মঞ্চ সাজানো হয়েছিল ইংরেজি সাহিত্যের কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটিশদের বিভিন্ন স্থাপনার আদলে। এক একটা স্থাপনা আপনাকে মনে করিয়ে দেবে ইংরেজদের কৃতিত্বকে। মঞ্চকে দেখে এক পলকে আপনার মনে হতে পারে আপনি ইংল্যান্ডের 'ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেই' এর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এক পাশে আছে 'লন্ডন আই'। উঁচুতে স্থাপিত গোল ঘূর্ণায়মান এই চাকা ব্রিটিশ লন্ডনকে এক অসাধারণ ভিউ দিয়েছে। সেই লন্ডন আই' এর আদলে রাখা হয়েছে পেছনের অংশটা। অপর পাশেই জর্জ অরওয়েলের বিশ্ববিখ্যাত ব্যঙ্গধর্মী রচনা 'এনিমেল ফার্ম' এর বিখ্যাত উইন্ডমিলকে সাজানো হয়েছে অন্যতম মূল ব্যাকগ্রাউড হিসেবে।
প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের মেলা : অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণেই সাজানো হয়েছিল মেলা। এখানে শিক্ষার্থীদের হাতের কাজ, শিল্পচর্চা ও প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ করে দিয়েছিল এই মেলা। কেউ প্রদর্শন করেছে তার হাতে আঁকা বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের স্কেচ! কেউবা সাদা পাতায় তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছে তাদের মনের অভ্যন্তরীণ পস্নটকে।? এনেছে ড্রয়িং ও পেইন্টিং! কেউ মেলায় তুলেছে ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ নানা ধরনের প্রদর্শনী। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন ছিল জাঁকজমক।
উপস্থাপনায় মূল আকর্ষণ : আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, এই আয়োজনের লক্ষ্যই ছিল ইংরেজি বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির বহিঃপ্রকাশ, সেই সঙ্গে বিশ্ব-সংস্কৃতির সম্মিলিত উপস্থাপনার মাধ্যমে সবাইকে ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানান দেওয়া। সাহিত্যের ইতিহাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আনা হয়েছে বিশেষ এই প্রদর্শনীতে।
ভারতীয় উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত মহীয়সী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, গোয়েন্দা চরিত্র শার্লক হোমস, মজাদার চরিত্র চার্লি চ্যাপলিন, জেন অস্টিন এর উপন্যাস 'প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডাইস' এর চরিত্র 'হেলেন', রোমান্টিক পোয়েট জন কিটস এর 'ওড টু আ নাইটিঙ্গেল' এর বিশেষ চরিত্র, ট্র্যাপ অব দ্য রক' এর 'বেলিন্ডা' রেড ইন্ডিয়ান পিপলসহ ত্রিশ এর অধিক চরিত্র অভিনীত হয় এই আয়োজনে। চেষ্টা করা হয় বইয়ে পড়া এক? একটা চরিত্রের বাস্তব চিত্র দেখানোর। এই আয়োজনে বরাবরই সফল হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক মহোদয়রা আমন্ত্রিত অতিথি সবাই খুবই আনন্দিত এমন আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এমন আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে আমি নিজেও অনেক আনন্দিত, গর্বিত। এই আয়োজন আমাদের ইংরেজি বিভাগ ও এ বিষয় সম্পর্কে আন্তঃবিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার ধারণা দেবে বলে আশাবাদী।
ইংরেজি বিভাগের এই আয়োজনের মতো মৌলিকত্ব আগে যেমন ছিল না, তেমনি পরবর্তিতে ক্যাম্পাসের সব আয়োজনে গতানুগতিকতাকে উপেক্ষা করে মৌলিক ও সূক্ষ চিন্তা যোগ করবে বলে আশাবাদী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই। শিক্ষক, প্রশাসন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই আয়োজনের স্বার্থকতার কথা স্বীকার করে অনেকেই করেছেন ভূয়সী প্রশংসাও। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন স্মরণীয় হয়ে থাকবে সবার মনে।