বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ভিন্ন আয়োজনে 'বসন্তবরণ ও ভর্তা উৎসব'

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ভিন্ন আয়োজনে 'বসন্তবরণ ও ভর্তা উৎসব'

ফাগুন শুরুর মধ্য দিয়ে এসেছে বসন্ত। প্রকৃতিতে লেগেছে রঙ, চারপাশে যেন উৎসবের ছোঁয়া। আর সেই উৎসবের রঙ লেগেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও। একদিকে বাসন্তী রঙ, অন্যদিকে ভালোবাসার রঙের জোয়ার বইছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এবারের ফাগুনে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতেছে তরুণ প্রাণ। পুরান ঢাকার এক খন্ড সবুজের সমারোহে তরুণ-তরুণীরা মেতেছিল দীপ্ত প্রাণের উচ্ছলতায়।

'বসন্ত বাতাসে' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। বিভাগের আয়োজনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে নেচে গেয়ে 'বসন্তবরণ ও ভর্তা উৎসব-১৪৩০' উদযাপিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউটিলিটি ভবনের ছাদে ৪ মার্চ সোমবার এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। বসন্তকে বরণ করার পাশাপাশি বিশেষ আয়োজন হিসেবে ভর্তা উৎসবের আয়োজন করে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়র ১৫তম আবর্তন অর্থাৎ চারুকলা অনুষদের সপ্তম আবর্তন এই আয়োজন করে।

এদিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে বসন্তবরণ উৎসব পালন করে। এ সময় চারুকলার ছাদে বসন্তের ঝরা পাতার আদলে মঞ্চ সাজানো হয়। এ ছাড়াও এ বছর ভর্তা উৎসব বসন্তবরণ উৎসবকে অন্য আমেজ এনে দেয়। এই আয়োজনে ভর্তাগুলোর মধ্যে ছিল টমেটো আলু ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা, শিম ভর্তা, ডাল ভর্তা, টমেটো ভর্তা ও বিভিন্ন প্রকারের শুঁটকি ভর্তাসহ ৩০ এর ও অধিক প্রকারের ভর্তার সমারোহ। সঙ্গে ছিল বিশেষভাবে রান্না করা ভাত। ভর্তা-ভাতে সবাইকে করা হয়েছে আপ্যায়ন। দিনব্যাপী সকলে মিলে আনন্দঘন পরিবেশে ভাত-ভর্তা উৎসবে মেতে উঠে।

এ ছাড়াও ভর্তা উৎসবের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী পালন করা হয় বসন্তবরণ উৎসব। হলুদ, গোলাপি, নীল, লাল শাড়িতে মেতে উঠে তরুণীরা। সবার মাথায় বসন্তের আগমনী ফুলের মালা। ছেলেরা পরেছে হরেক রকমের পাঞ্জাবি। এ সময় বিভাগের শিক্ষার্থীরা ছবি-সেলফি তোলাসহ খোশগল্পে মেতে উঠে।

চারুকলা অনুষদের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার মুনা বলেন, 'প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে বসন্তবরণ উৎসবকে সর্বাত্মক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে দৃঢ় রেখে আগামী দিনগুলোতেও এই উৎস উৎসব পালন করব।'

ভাত-ভর্তা খেয়ে প্রিন্টমেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে মিশু জানান, 'ভর্তাগুলো খুবই সুস্বাদু ছিল। এটি এবারের বসন্তবরণ উৎসবকে ভিন্ন আমেজ এনে দিয়েছে। নগর জীবনে এমন আয়োজন বাঙালির সাংস্কৃতিক সত্তাকে জাগিয়ে তুলে।'

চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আমরা আমাদের বিভাগে বর্ণিল আয়োজনের মাধ্যমে বসন্তবরণ উৎসব করেছি। ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্ককে দৃঢ় রেখে যেন আগামী বছর আবারও এই উৎসব পালন করতে চাই।

বসন্তবরণ উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'আমাদের বাঙালি জাতির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ। আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকি, যে যেই ধর্মেরই হই না কেন, উৎসব একসঙ্গে উদযাপন করি, ঈদ বা পূজা যেটাই হোক, সবাই একসঙ্গে পালন করি। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে থাকি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একেকটা উৎসব একেকটা বিভাগ দায়িত্ব নিয়ে করেছে। এখন বিভিন্ন বিভাগ এসব অনুষ্ঠান আলাদা আলাদাভাবে করে। চারুকলার এমন আয়োজন বাঙালির সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চাকে গতিশীল করছে।'

অনুষ্ঠানে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহা. আলপ্তগীন, ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান ইমাম হোসেনসহ অনুষদের সব বিভাগের শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টররাও এই উৎসবে অংশ নেন।১

ষড়ঋতুর এই দেশে প্রতিটি ঋতুই নতুন নতুন রূপের পসরা নিয়ে আসে। তবে বসন্ত আসে ভিন্নভাবে, একদম ভিন্ন আঙিকে। প্রকৃতিপ্রেমী নয়, এমন মানুষও বসন্তের প্রেমে পড়বেনই। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম সাজে প্রকৃতি নিজেকে সাজায় আপন হস্তে। তাই তো প্রকৃতির এমন অপরূপ প্রাকৃতিক লীলা দেখে বার বার বলতে ইচ্ছা করে বসন্ত এসে গেছে রঙিন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে